রেলওয়ে নেটওয়ার্ক
বাংলাদেশ রেলওয়ে: ঢেলে সাজানোর বিস্তর পরিকল্পনা সরকারের
যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য রেলওয়ে খাতটিকে সবচেয়ে নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে সরকার দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে উন্নত করার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে।
একটি সরকারি নথি অনুসারে, রেলওয়ে খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার একটি সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ সমস্ত কার্যক্রম অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২০২৫) অধীনে করা হবে, যা পরবর্তী পাঁচ বছরে গড়ে আট দশমিক ৫১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। পরিকল্পনাটি সময়সীমার শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে ৭৯৮ দশমিক ০৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, বিদ্যমান রেললাইনের বিপরীতে ৮৯৭ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ/ডাবল রেললাইন এবং ৮৪৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সংস্কারের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর মধ্যে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে সেতু নির্মাণ এবং লেভেল ক্রসিং গেট, দেশীয় কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ আউটলেটগুলোর নির্মাণ ও আধুনিকীকরণসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: বুধবার থেকে সব আসনে যাত্রী নিয়ে চলবে ট্রেন: বাংলাদেশ রেলওয়ে
নথিতে বলা হয়েছে যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে ১৬০টি লোকোমোটিভ, এক হাজার ৭০৪টি যাত্রীবাহী কোচ, আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জাম, ২২২টি স্টেশনে সিগনাল সিস্টেমের উন্নতি এবং রেলওয়ে ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা হবে।
এদিকে, সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদী সংশোধিত মহাপরিকল্পনা (২০১৬-২০৪৫) বাস্তবায়ন করছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় ঢাকাকে কক্সবাজার, মোংলা সমুদ্রবন্দর, টুঙ্গিপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত উদ্যোগগুলো হল- ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে ও আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং আধুনিক কমিউটার ট্রেন পরিষেবা চালু করে নিকটবর্তী শহরতলির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে সংযুক্ত করা।
১৯৬০ এর দশকে শুরু হওয়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক লাখ ১৪ হাজার কিলোমিটার রেলপথ নিয়ে গঠিত। এটির লক্ষ্য হচ্ছে ইএসসিএপি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন ফর এশিয়া অ্যাড দ্য প্যাসিফিক) অঞ্চল এবং এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য ও যাত্রীদের জন্য কার্যকর রেল পরিবহন পরিষেবা প্রদান করা।
এই মহাপরিকল্পনার আওতায় ছয়টি ধাপে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। যাতে খরচ হবে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
নথিতে বলা হয়েছে, পদ্মা বহুমুখী রেল সংযোগ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ এবং যমুনা নদীর ওপর ডাবল ট্র্যাক ডুয়েল গেজ রেল সেতু নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে রেলওয়ের ৪ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বরখাস্ত
এতে আরও বলা হয়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাকের ৭১ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এতে উল্লেখ আছে, রূপসা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ।
সরকার ফরিদপুরের ভাঙা থেকে পায়রা বন্দর হয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দরকে পদ্মা রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
নথি অনুসারে, ৪৭ হাজার ৭০৩ টি পদের সংশোধিত জনবল কাঠামোর অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা রেলওয়ের পরিষেবার মান বাড়াবে।
আরও পড়ুন: রেলের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে ৭ দিন সময় পেল রেলওয়ে
২ বছর আগে