ফরাসি লেখিকা
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি আর্নাক্স
২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি আর্নাক্স। বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারি জেনারেল হ্যান্স এলেগ্রেন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
আর্নাক্সকে পুরস্কৃত করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার রয়েল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আর্নাক্স-এর আত্মজীবনীমূলক বইগুলো প্রেম, যৌনতা, গর্ভপাত, লজ্জা - সামাজিক এবং শ্রেণী সম্পর্কের পরিবর্তিত জালের মধ্যে গভীরভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির আলোকে রচিত। তার লেখনীর বেশিরভাগ উপাদান উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের নরম্যান্ডি অঞ্চলের একটি শ্রমজীবী পরিবারে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে।
সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, ৮২ বছর বয়সী আর্নাক্স তার লেখার ‘সাহস ও ক্লিনিকাল তীক্ষ্ণতার’ জন্য স্বীকৃত।
নোবেল সাহিত্য কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেছেন, আর্নাক্স একজন অত্যন্ত সৎ লেখক, যিনি কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পান না।
১১৯ জন নোবেল সাহিত্য বিজয়ীর মধ্যে আর্নাক্স ১৭ তম নারী পুরস্কার বিজয়ী এবং ২০১৪ সালে প্যাট্রিক মোদিয়ানোর পর তিনিই প্রথম ফরাসি সাহিত্য বিজয়ী। তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে প্রতিথযশা লেখকদের একজন এবং একজন বিশিষ্ট নারীবাদী কণ্ঠস্বর।
আরও পড়ুন: ‘আলাদা হওয়া অণুকে একত্রিত’ করার উপায় উদ্ভাবনের জন্য নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী
আর্নাক্স সুইডিশ সম্প্রচারক মাধ্যম এসভিটিকে বলেন, এই পুরস্কারটি ‘একটি বিশাল সম্মান’ এবং ‘অনেক বড় দায়িত্ব’।
তার ২০ টিরও বেশি বই রয়েছে। যার বেশিরভাগই আকারে খুব ছোট। যেগুলো তার জীবনের ঘটনাপঞ্জি ও তার চারপাশের মানুষের জীবন নিয়ে লেখা। এগুলোতে যৌন সম্পর্কিত বিষয়ে মোকাবিলা, গর্ভপাত, অসুস্থতা ও তার পিতামাতার মৃত্যুর আপোষহীন প্রতিকৃতি উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাহিত্যের জন্য নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, আর্নাক্সের কাজ প্রায়শই আপসহীন হয়ে থাকে। এগুলো সরল ও পরিচ্ছন্ন ভাষায় লেখা।
আনাক্স তার লেখার শৈলীকে ‘ফ্ল্যাট রাইটিং’ (ইক্রিচার প্লেট) হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
‘লা প্লেস’ (একটি মানুষের স্থান) বইটিতে তিনি বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে লেখেন, ‘কোনো গীতিমূলক স্মৃতিচারণ নেই, বিদ্রুপের কোনো অতিরঞ্জিত প্রদর্শন নেই। এই নিরপেক্ষ লেখার ধরন আমার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই আসে।’
তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘লে আরমোয়ার বিড’ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। তবে ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘লে আনি’ তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সমালোচকদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। ২০১৭ সালে এটি ‘দ্য ইয়ার্স’ নামে ভাষান্তরিত হয়। বইটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজেকে ও বৃহত্তর ফরাসি সমাজকে বর্ণনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেলেন ৩ বিজ্ঞানী
বইটি সম্পর্কে অ্যাকাডেমি বলেছে, এটি তার সবচেয়ে দুর্দান্ত লেখা, যা তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
আগের বইগুলো থেকে ভিন্ন ‘দ্য ইয়ার্স’ এ আর্নাক্স তৃতীয় পুরুষে নিজের সম্পর্কে ‘আমি’ এর পরিবর্তে তার চরিত্রটিকে ‘সে’ লিখেছেন। বইটি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছে।
গত বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন তানজানিয়ার নাগরিক ঔপন্যাসিক আবদুর রাজ্জাক গুরনাহ। ঔপনিবেশিকতার প্রভাব নিয়ে তার আপসহীন ও সহানুভূতিশীল লেখনির জন্য তাকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত চতুর্থ উপন্যাস ‘প্যারাডাইসে’র জন্য তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের সমাজে ভালোবাসা ও দুঃখের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্যারাডাইসে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা দেয়া শুরু হয়। ৪ অক্টোবর পদার্থবিদ্যা, ৫ অক্টোবর রসায়ন, ৬ অক্টোবর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষিত হয়।
আগামীকাল শুক্রবার (৭ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ করা হবে ২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা।
পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে নগদ ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯লাখ মার্কিন ডলার)। আগামী ১০ ডিসেম্বরে পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে। এ অর্থ পুরস্কারের প্রবর্তক সুইডিশ উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া একটি উইল থেকে অর্জিত। ১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেলে মারা যান।
আরও পড়ুন: চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জিতেছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সভান্তে প্যাবো
২ বছর আগে