কৃষ্ণ ধর
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি কৃষ্ণ ধর আর নেই
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক ও লেখক কৃষ্ণ ধর আর নেই। বুধবার (১২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কলকাতার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর (১৯২৮-২০২২)। তিনি দুই মেয়ে ও তিন নাতিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কৃষ্ণ ধরের জন্ম ১৯২৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জের কমলপুর গ্রামে। তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এইচ ই হাই স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে আইএ পাশ করে কলকাতায় চলে যান। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থশাস্ত্রে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাশ করেন।
আরও পড়ুন: দেশে ক্যান্সার রোগী ১৫ লাখ, প্রতিবছর মারা যান দেড় লাখ
লেখাপড়া শেষ করে কলকাতার দেশবন্ধু গার্লস কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকার সহকারী-সম্পাদক হন। পরে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক বসুমতীর সম্পাদক ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
তিনি ছিলেন একজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। সাহিত্যকর্মে তার বিচরণ ছিল অতুলনীয়। বাংলা সাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনার সময়ই লেখালেখির হাতেখড়ি হয় তাঁর। এমএ পাশের আগেই ১৯৪৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অঙ্গীকার’ প্রকাশিত হয়। তারপর অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সমানভাবে সাহিত্যচর্চা করেছেন। কবিতার পাশাপাশি কাব্যনাটক, ভ্রমণকাহিনী, সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, নিজের ধারণা রচনাসম্ভারে ঠাঁই হয়। বিশ শতাব্দীর পাঁচ ও ছয়ের দশকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন কৃষ্ণ ধর।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা ও কাব্যনাটক - 'অঙ্গীকার' (১৯৪৮), ‘প্রথম ধরেছে কলি' (১৯৫৬), 'এ জন্মের নায়ক' (১৯৬১), 'এক রাত্রির জন্য' (১৯৬৭)
সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 'আধুনিক কবিতার উৎস' (১৯৬১), 'সাহিত্যের সাজঘর' (২০১৫)।
এছাড়া ভ্রমণকাহিনী নিয়ে তাঁর অন্যতম লেখা বই- 'মস্কো থেকে দেখা' (১৯৭৪), 'অন্য দেশ অন্য নগর' (১৯৮১)।
ইতিহাস নিয়ে লেখালেখিতেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন না। ইতিহাস নির্ভর তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখা বই -'মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ' (১৯৭১), 'ভারতের মুক্তি সংগ্রামে বাঙালি' (১৯৯৭), 'কলকাতার তিন শতক' (১৯৮৯)।
সাংবাদিকতার অঙ্গনেও তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাংবাদিকতার ওপর লিখেছেন বই। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - 'সাংবাদিকতার দর্শন: আদর্শ ও বিচ্যুতি' (২০০৩)।
জীবনের নানা কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন পুরস্কার, সম্মাননা। সাহিত্যচর্চার জন্য কবি কৃষ্ণ ধর বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কবিকে নজরুল পুরস্কার প্রদান করে। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আট দশক সাতকাহন’ এর জন্য মোজাফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দেশে প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে মারা যান ৭ হাজার নারী
দাফনের পর গোলাপি ফিরে বললেন তিনি মারা যাননি
২ বছর আগে