লোয়ার অর্ডার
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২: বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা একাদশ
আসন্ন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে জয় পেলেও নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের চার ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। ফলে খেলোয়াড়দের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিচেনায় টিম টাইগারদের প্রস্তুতি পরিকল্পনা মতো হয়নি বলা যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২-এর জন্য বাংলাদেশের সেরা একাদশ তৈরি করতে দলটিকে অবশ্যই তাদের শক্তির দিকে নজর দিতে হবে।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের সেরা একাদশ
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের একাদশে কয়েকজন খেলোয়াড়ের জায়গা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কয়েকটি জায়গা রয়েছে যেখানে কয়েকজনের মধ্য থেকে বাছাই করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন ফাস্ট বোলারদের জন্য সহায়ক হবে। সে কারণেই সঠিক পেস বোলিং ইউনিট বাছাই করা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া দলে কতজন স্পিনার থাকা আদর্শ হবে সেটাও তাদের বের করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওপেনিং জুটি বাছাই করা যারা বাংলাদেশকে একটি ভালো শুরু এনে দিতে পারে। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পছন্দের একাদশ কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি ধারণা নেয়া যাক।
টপ অর্ডার
সদ সমাপ্ত দুটি আন্তর্জাতিক সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করা খেলোয়াড়দের ওপর ভিত্তি করে অন্তত পাঁচটি বিকল্প রয়েছে। বিশ্বকাপের মূল দলে আছেন লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাব্বির রহমান। অন্যদিকে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন সৌম্য সরকার।
শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওপেনারদের মধ্যে লিটন দাস সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত ৬ ইনিংসে ১৪০.৪২ স্ট্রাইক রেটে ১৮০ রান করেছেন। ওপেনার হিসেবে দলে তার জায়গা মোটামুটি নিশ্চিত।
এখন সবচেয়ে বড় কথা হল লিটনের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে সবচেয়ে ভালো সুযোগ কার। চার ম্যাচে অফ-স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে মিরাজ আশানুরূপ ভালো করতে পারেন নি। তিনি চার ম্যাচে ১০৮.৯৫ স্ট্রাইক রেটে ৭৩ রান করেছেন। মিরাজ কখনই একজন স্বীকৃত ওপেনার ছিলেন না, তাই তাকে ওপেনার হিসেবে বাছাই করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
অন্য তিন ব্যাটারের মধ্যে সাব্বির রহমানের সর্বনিম্ন ৮৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে তিন ইনিংসে মাত্র ২৬ রান করেছেন। এছাড়া সৌম্য সরকারের ১২৮.৫৭ এবং নাজমুল হোসেন শান্তর স্ট্রাইক রেট বরাবর ১০০। দ্রুত এবং বাউন্সি পিচে সৌম্যর স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা বিবেচনায় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটন দাসের সাথে ইনিংস শুরু করার জন্য তিনি আদর্শ হতে পারেন। নাজমুল হোসেন ও সাব্বির রহমান দু’জনেই মাঠে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখিয়েছেন।
তবে টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রথমে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে সৌম্য সরকারকে বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া বিশ্বকাপে তিন নম্বরে ব্যাট করার সম্ভাবনা রয়েছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।
পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপের সেরা ৬ ক্যাপ্টেন
মিডল অর্ডার
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাংলাদেশের মিডল-অর্ডার ব্যাটারদের বেশিরভাগই ভালো করছেন না। ব্যাটিং পজিশন ৪ থেকে ৮ এর মধ্যে আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাম্প্রতিক ম্যাচে অন্যদের তুলনায় সেরা রেকর্ড আফিফ হোসেনের। বাঁ-হাতি আক্রমণাত্মক এই ব্যাটার ১২৪.২১ স্ট্রাইক রেটে ১৫৯ রান করেছেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে কিছুটা আশা দেখিয়েছেন নুরুল হাসান ও ইয়াসির আলি। তাদের ১৩০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট রয়েছে। তবে তাদের স্ট্রাইক রেট ১৫০-এ নিয়ে যেতে হবে কারণ উভয় ব্যাটারই ৬ নম্বর এবং ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নামেন।
মোসাদ্দেক হোসেন এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বড় শট খেলার ক্ষমতা রয়েছে এবং তাদের একাদশে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পাঁচজন খেলোয়াড়ের মধ্যে কেউ যদি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্টকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয় তবে সাব্বির রহমান মিডল অর্ডারে সুযোগ পেতে পারেন।
লোয়ার অর্ডার
অস্ট্রেলিয়ার পিচে বাংলাদেশ একাদশে তিন পেসারকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে ম্যানজেমন্টে। সাইফুদ্দিন দলে জায়গা পেলে একাদশে আরও দুজন ফাস্ট বোলার নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে পেস বোলিং ইউনিটে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার তার আগের ৪ ম্যাচে ৭.০৬ ইকোনমি রেটে ৩ উইকেট নিয়েছেন। একাদশে তার খেলা প্রায় নিশ্চিত।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় টাইগারদের প্রাথমিক ম্যাচে হয়তো নাও দেখে যেতে পারে বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে। দুই তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ এবং শরিফুল ইসলামের মধ্যে যেকোন একজন চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পেতে পারেন। হাসান মাহমুদ বিশ্বকাপ দলে থাকলেও স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে অংশ নেয়ার জন্য বিসিবিকে প্রথমে মূল দলে শরিফুলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অধিনায়ক সাকিবের দুই স্পিনিং অপশন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। তাকে একজনকে বাছাই করতে হবে এবং মিরাজই প্রথম একাদশে জায়গা পেতে পারেন। তবে কিছু ম্যাচের জন্য নাসুমও ভালো অপশন হতে পারেন।
পড়ুন: আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২২: বাংলাদেশ দলের সোয়াট (SWOT) বিশ্লেষণ
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের পছন্দের একাদশ
লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ।
উদ্গ্রীব থাকা
অস্ট্রেলিয়ার অপরিচিত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা খেলোয়াড়দের জন্য প্রথমে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২-এর জন্য একটি কার্যকর একাদশ তৈরি করার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকে অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিটি খেলায় টাইগাররা তাদের সেরাটা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ: ভেন্যু ও প্রাইজ মানি
২ বছর আগে