দুর্বলতা
গণতন্ত্রের দুর্বলতা আছে, অনুশীলনেই পরিপক্কতা অর্জন করে: কূটনীতিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সরকার বলেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কোনো ধরনের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়াই নির্বাচিত সরকারগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের দেওয়া এক ব্রিফিং নোটে বলেছে, 'গণতন্ত্রের দুর্বলতা আছে, কিন্তু চর্চার মাধ্যমেই তা পরিপক্কতা অর্জন করে।’
মন্ত্রণারয় কূটনীতিকদের জানিয়েছে, বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এতে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও এটা দুঃখজনক যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অসাংবিধানিক দাবির অজুহাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: উন্নয়নের মূলমন্ত্র গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা: মোমেন
২০১১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক বিধানকে ‘অতি বৈষম্যমূলক’ (আইনী কর্তৃত্বের আওতা বহির্ভূত যে কোনও কাজ) এবং বাতিল ঘোষণা করে। কারণ, এটি গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নির্বাচন কমিশন বারবার বিএনপিকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল, এমনকি বিএনপি যোগ দিলে ইসি নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করতে ইচ্ছুক ছিল।
সরকার বলছে, বিএনপি এই 'অযৌক্তিক দাবিকে' তাদের প্রধান রাজনৈতিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং জনগণের জানমাল ধ্বংস করে তাদের জিম্মি করে রেখেছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির হরতাল ‘ঢংঢাং’, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন: মোমেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিএনপি ও তার মিত্ররা সারাদেশে যে ভয়াবহ সহিংসতা চালিয়েছে তা ২০০১, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তাদের কার্যক্রমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তারা প্রায় এক হাজার সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন এবং পুলিশ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ও অ্যাম্বুলেন্সসহ দুই শতাধিক স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রায় এক হাজার যানবাহন ও প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের বাসভবনসহ অনেক স্থাপনা ভাঙচুর করেছে। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য ও প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোককে আহত করেছে। এমনকি সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগ করা উচিত: মোমেন
ব্রিফিং নোটে বলা হয়,‘তারা আমাদের রেল ব্যবস্থায় নাশকতা চালিয়েছে, যার ফলে এক মা ও তার তিন বছরের শিশুকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এতে আরও অনেকে গুরুতর আহত হওয়াসহ পাঁচটি মূল্যবান জীবনহানি হয়েছে।’
নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি ভয় ও আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য 'সহিংসতা বাড়িয়েছে'। নির্বাচনের আগের দিন ভোটারদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তারা ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করতে এবং ভোটারদের ভোট দিতে তাদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে বাধা দিতে বিএনপি দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এতে বলা হয়, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এতে চারজন যাত্রী নিহত হন। অনেকে গুরুতর আহত হন এবং যাত্রীবাহী ট্রেনটির একটি বগি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
গত ৭ জানুয়ারি ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে 'অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ' পদ্ধতিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ করেছে যে, বর্তমান সরকার সমর্থিত একটি স্বাধীন ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত সাংবিধানিক সংস্থা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দক্ষতার সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে।
২০২৪ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রার ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিয়মভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং শান্তি, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার প্রতি তাদের দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করেছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ সরকার প্রবাসীবান্ধব: মোমেন
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে, সাংবিধানিক ম্যান্ডেট সমুন্নত রাখতে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।
বিএনপির নির্বাচন বর্জন সহিংসতা এবং ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শনের আহ্বান সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ একটি শান্তিপূর্ণ ও 'স্মার্ট বাংলাদেশ' রূপকল্পের প্রতি তাদের অঙ্গীকার ও আকাঙ্ক্ষাকে জোরদার করেছে।
এতে বলা হয়, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত।
ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গউইন লুইস এবং বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতরা এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনউপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আমি দৌঁড়াতে পারি বলেই নড়াইলে মেগা প্রকল্প আসছে : মাশরাফি
১০ মাস আগে
পেঁয়াজ-আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা আমাদের দুর্বলতা: কৃষিমন্ত্রী
শুধু সরকারের দুর্বলতা নয়, সফলতার দিকগুলোও গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক
তিনি বলেন, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেঁধে দিলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা মেনে নেব। কারণ, এটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের সবল দিকগুলোও দয়া করে মিডিয়াতে তুলে ধরবেন।
রবিবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নিজেদের খোঁড়া কবর থেকে উঠতে পারবে না বিএনপি: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ডাল, তেল এগুলো এগুলো আমদানি নির্ভর, সেখানে আমরা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। কিন্তু সবগুলো মিলে একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য খাই তার মধ্যে চালের পেছনে খরচ হয় ৬৫-৭০ ভাগ। কাজেই চালটা কিন্তু প্রথম ও প্রধান উপাদান খাদ্যের। পেঁয়াজের দাম আলুর দাম কতটুকু সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।
আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা এখনও যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হলো আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার মনিটর করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরেও আমি দায় এড়াতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডনসিয়াল ফর্মে প্রেসিডেন্ট সব দায়িত্ব পালন করেন। কেবিনেট সিস্টেম অব গভর্মেন্টে সব মন্ত্রীই সব কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, প্রধানমন্ত্রীসহ।
তিনি বলেন, কাজেই আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা চেষ্টা করছি। কোল্ডস্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছে, তারা ঠিকমতো সরবরাহ করছে না। এটা বড় অন্তরায়, নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলেও সাপ্লাইই দেয় না। বন্ধ-টন্ধ করে চলে যায়, এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে, তা সত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলার পর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা হয়েছিল, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, এবার উল্টো পরিস্থিতি। দুই-তিন লাখ কম হয়েছে এই সুযোগে কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও আড়ৎদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এত লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না সেটাকে সে ৪০-৫০ টাকা বিক্রি করছে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন হেক্টরে ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল পেঁয়াজে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। তার জন্য সাময়িক একটু কষ্ট হয়েছে। মানুষ বেশি দামে কিনেছে, কিন্তু চাষিদের আমরা উৎসাহিত করছি। স্থানীয়ভাবে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করব।
তিনি বলেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি। এদিক দিয়ে আমরা খুবই একটা ভালো অবস্থায় আছি। শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সব সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে, এসব বিবেচনায় সবজি ও অনেক পণ্যের দাম বেশি।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে: কৃষিমন্ত্রী
খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে কম সময়ে অধিক ফলনে গুরুত্ব দিচ্ছি: কৃষিমন্ত্রী
১ বছর আগে
শ্রমিকের দুর্বলতাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করবেন না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘দয়া করে শ্রমিকের দুর্বলতাগুলোকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। বরং উদার সমর্থন এবং অর্থায়নের মাধ্যমে সেই দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্যের চেষ্টা করুন।’
তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতি বাংলাদেশকে দুর্ভাগ্যজনক অতীতে টেনে না নিয়ে এর দূরদর্শী প্রচেষ্টায় যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় শুধুমাত্র কিছু ‘স্থায়ী’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করাই হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শ্রম অধিকার, শালীন কাজ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত ‘কাজের মৌলিক নীতি ও অধিকার’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে বিতর্কের চর্চা করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আইএলও-এর সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের। দিবসটি উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইএলও যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে।
মোমেন জানান, তিনি প্রকাশ্যে আইএলও’র সঙ্গে বাংলাদেশের ‘গঠনমূলক সম্পৃক্ততার’ চেতনায় এবং তাদের পারস্পরিক স্বার্থে এই পর্যবেক্ষণগুলো করেছেন।
যে কোনও সময়ে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে যথাযথ কোর্স-সংশোধনের সুবিধা দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
মোমেন বলেন, ‘তবে আমরা আশা করব আইএলওসহ আমাদের প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক অংশীদাররা স্থানীয় পর্যায়ের জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টির মূল্য স্বীকার করবে। সকলের সঙ্গে খাপ খায় এমন একটি মডেল নিবে। একতরফা নির্দেশনামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, সরকার ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয়-সঙ্কট সমন্বয় করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তরুণ কর্মশক্তির জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপের সময় দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি প্রসারিত করে।
তিনি বলেছেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দার মুখে কিছু বাস্তবিক নীতি গ্রহণ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: শেখ রাসেলের মতো যেন আর কোন শিশুকে জীবন দিতে না হয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোমেন ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় আন্তর্জাতিক নীতির আলোচনায় আইএল’র পুনরুত্থান এবং প্রাসঙ্গিকতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে আইএলও তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করছে। কারণ আমরা আরও একাধিক সংকটকাল মোকাবিলা করছি।’
সেমিনারে বক্তব্যে আইএলও-এর সহকারি মহাপরিচালক এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক চিহোকো আসাদা-মিয়াকাওয়া বলেন, আইএলও অনুসমর্থিত কনভেনশনের প্রয়োগে সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
আইএলও দক্ষতাভিত্তিক শাসনের পদ্ধতিকে সহযোগিতা করছে এবং আরও আধুনিকীকরণের প্রত্যাশা করছে। আইএলও এই অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘সরকার এবং সামাজিক অংশীদারদের সঙ্গে আমরা সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
আইএলও’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধার অর্জন করা যা সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক, পদ্ধতিগত এবং স্থিতিস্থাপক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতিগুলোকে শক্তিশালীকরণে জোর দিয়েছিলেন যা সকলের জন্য শালীন কাজে অগ্রাধিকার দেয় এবং বৈষম্যের সমাধান করে।
আসাদা-মিয়াকাওয়া বলেন, এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অর্থ হবে একটি ব্যাপক সূচির মাধ্যমে অগ্রগতি করা এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমিকদের সুরক্ষা, সার্বজনীন সুরক্ষা এবং সামাজিক সংলাপের প্রচার করা।
তিনি সকলের জন্য নিরাপদ কাজকে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আইএলও-এর সঙ্গে ভবিষ্যত সহযোগিতাকে শক্তিশালীকরণ ও পুনঃনির্মাণে আগ্রহের পাঁচটি সুনির্দিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করে। মোমেন আশা করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাইজেশনের কারণে কাজের জগতে দ্রুত পরিবর্তনের জন্য আইএলও ও সরকার সহযোগিতা করবে।
মোমেন বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থাগুলো প্রায়শই অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য মৌখিক পরিষেবা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আইএলওকে অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় এবং স্থানীয় যোগ্যতার ক্ষেত্রে যা হওয়া উচিত তা অগত্যা উপযুক্ত নয়।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শ্রম খাতে কিছু গুরুতর দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, এমনকি সম্প্রতি ঘটেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে উপযুক্ত কর্মপরিবেশে উৎপাদনশীল কর্মী বাহিনী নিয়োজিত না থাকলে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: খাদ্য-জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২ বছর আগে