রাজধানীবাসী
শব্দদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী, নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ
শব্দদূষণে নাকাল ঢাকাবাসী। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে শব্দদূষণের মাত্রা। যানবাহনে অকারণে হর্ন দেওয়া, সাউন্ড বক্স বা মাইকের উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। শব্দদূষণ অসহনীয় হয়ে উঠলেও এটি রোধে নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ।
মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে নগরীর বাসিন্দারা। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষ শব্দদূষণের ভুক্তভোগী। এছাড়াও শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠছে। তবুও এই শব্দদূষণ রোধে নেই মানুষের সচেতনতা।
এমনকি শব্দদূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ট্রাফিক পুলিশও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশেদের কানে সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন সড়কে কাজ করায় অতিরিক্ত শব্দের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান যানবাহনে অহেতুক হর্ন, যত্রতত্র সাউন্ড বক্স, মাইকের মাধ্যমে উচ্চশব্দ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণের অনেক ক্ষতিকর প্রভাব মানুষ জানেই না। বিশেষ করে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তো আছেই, শহরে উদ্ভিদের বংশবিস্তারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাছ-গাছালির পরাগায়ন হচ্ছে না। এতে শস্যের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে যারাই রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে, তারা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধ না করলে মানুষের শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি পাবে: উপমন্ত্রী
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু শব্দদূষণের অন্যতম উৎস হলো হর্ন। এটি বন্ধ করতে পারলেই ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ শব্দদূষণ কমে যাবে। কিন্তু এটি বন্ধ করার জন্য আইনগত যে ভিত্তি রয়েছে সেটি দুর্বল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে আমাদের যে দুটি আইন রয়েছে সেটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া আইন অনুযায়ী স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ এলাকায় ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরো ঢাকা শহরই নীরব এলাকা। কোথাও হর্ন দেওয়া যাবে না। আইন প্রয়োগ করতে গেলে এটা একটা বড় সীমাবদ্ধতা।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শব্দদূষণ রোধে মানুষের সচেতনতা অনেক বেশি জরুরি। প্রয়োজনের বাইরে হর্ন বাজানো যাবে না, পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় মাইক ও উচ্চ আওয়াজ থেকে দূরে থাকতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা সারাক্ষণ হেডফোন কানে লাগিয়ে রাখেন, এটাও ক্ষতিকর।’
শব্দদূষণ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার উল্লেখ করে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে গাড়ির হর্ন দিলে জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং যথাযথ আইন তৈরি করে এর জোরালো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় শব্দদূষণের বিভিন্ন উৎস উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে- গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্প-কারখানা ও ইনডোর—বাসাবাড়ির কাজ, টাইলস কাটা ও ড্রিল মেশিনের শব্দ।
তিনি বলেন, শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
এই আইনে শাস্তি হিসেবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে এ আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না বলে জানান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
ক্যাপসের গবেষণায় দেখা গেছে, সব স্থানেই শব্দের তীব্রতা প্রায় একই রকম। আইনের মান্যতায় সাজার বিধান থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
শুধু শব্দদূষণ আইন নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ সালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে গাড়ির লাইসেন্স থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন কীভাবে হবে- প্রতিটি বিষয় আলাদা আলাদা করে বলা আছে। চালক কখন হর্ন বাজাবেন, কখন বাজাবেন না তাও উল্লেখ করা আছে, যা অনেক জরুরি আইন। কিন্তু রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে এ আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ইউএনবিকে বলেন, ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার দ্বিগুণের বেশি হওয়ার কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। কানে কম শোনা ছাড়া ডায়াবেটিস এবং হার্ট সংক্রান্ত জটিলতা বেড়েছে। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক অসুস্থ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সঙ্গে সঙ্গেই কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে ধীরে ধীরে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।’
শব্দদূষণ নিয়ে ক্যাপসের সর্বশেষ গবেষণায় জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছর ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে ক্যাপস। এই ১০টি স্থানের নীরব এলাকায় ৯৬.৭ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে, আবাসিক এলাকায় ৯১.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে, মিশ্র এলাকায় ৮৩.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬১ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে এবং শিল্প এলাকায় ১৮.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে।
ঢাকা শহরের ১০টি স্থানেই ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবেলের ওপরে শব্দ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: দেশকে শব্দদূষণমুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
৫ মাস আগে
শিল্পকলায় মিষ্টি মেলা: বাহারি মিষ্টির স্বাদ-গন্ধে মাতোয়ারা রাজধানীবাসী
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি নিয়ে গত বুধবার (৬ মার্চ) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো জাতীয় মিষ্টি মেলা ২০২৪।
৫ দিনব্যাপী এ মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। খাদ্য সংস্কৃতি হিসেবে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভিন্নধর্মী এ আয়োজন। এতে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ৬৪ এর অধিক মিষ্টি শিল্পীরা।
আরও পড়ুন: কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) প্রথম জাতীয় মিষ্টিমেলার দ্বিতীয় দিন বিকেলে মূল অনুষ্ঠানের আগে পরিবেশিত হয় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করে সরকারি সংগীত কলেজ। সমবেত শাস্ত্রীয় সংগীত ‘রাগ বৈরাগী ভৈরব’ এবং সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হয় একক সংগীত। একক সংগীত পরিবেশন করেন ড. ফকির শহীদুল ইসলাম, শেখ খালিদ হাসান, মাইনুল আহসান, ছন্দা চক্রবর্তী, উত্তম কুমার সাহা, মফিজুর রহমান, এম এ মমিন, উর্বী সোম, সৌমিতা বোম, পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডল, সাইফুল ইসলাম, এম এম ইউনুসুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মনসুর।
প্রথম জাতীয় মিষ্টি মেলা ২০২৪, ১০ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৫টায় থাকবে লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আরও পড়ুন: পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়
৯ মাস আগে
বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতায় নাজেহাল রাজধানীবাসী
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। টানা ২/১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট।
রাজধানীর নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। এতে বেশ বিপাকে পড়তে হয় কর্মজীবী নগরবাসীকে।
অন্যদিকে, সেসময় পরিবহন সংকট তীব্র হয়ে যায়। কোনোমতে রিকশা বা সিনজি পাওয়া গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে চালকেরা।
এভাবে প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে।
বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের পথগুলো আবর্জনায় ভরাট থাকায় দ্রুত পানি নামতে পারে না। ফলে প্রতিবারই এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সামান্য বৃষ্টিতে বিশেষ করে মতিঝিল, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, শান্তিনগর, মৌচাক, বেইলি রোড, কাকরাইল, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ভাটারা- বসুন্ধরা, খিলক্ষেতসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এবার রাজধানীতে আর আগের মতো জলাবদ্ধতা থাকবে না।
কিন্তু গত ৯ আগস্টে টানা প্রায় এক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। ওইদিন প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির ফলে তলিয়ে গিয়েছিল শাহবাগ, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, মগবাজার, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বেইলি রোড, কাকরাইল, রামপুরা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, পল্টন, প্রেস ক্লাব, মিরপুর, বসুন্ধরা ও ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকা।
তবে জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি নাকাল হতে হচ্ছে পুরান ঢাকাবাসীকে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
রামপুরার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টি হলেই রামপুরাসহ আমাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের বক্তব্যে আমরা প্রায় শুনি রাজধানীতে আগের মতো আর জলাবদ্ধতা হবে না। গত কিছুদিন আগে এক ঘণ্টার বৃষ্টির পর আমাদের এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, বারবার শুনি এবার আর জলাবদ্ধতা হবে না, কিন্তু বর্ষা শুরুর আগেই অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে সড়ক।
রাজধানীর জুরাইন, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, বনশ্রী ও ভূঁইয়া পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা।
ভূঁইয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন ইউএনবিকে জানান, প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। অনেক বছর ধরে রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর বেশি বৃষ্টি হলে পানি নেমে যেতে সময় লাগে আরও বেশি।
বৃষ্টির ফলে প্রগতি সরণির কুড়িল-রামপুরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।
এই এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে কর্মজীবী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ ছাড়া অতিবৃষ্টি হলে এই সড়কে যানবাহনও ধীরগতিতে চলাচল করে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পানি জমে থাকায় যানবাহনও কম পাওয়া যায়।
জলাবদ্ধতার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- খালগুলো অবৈধ দখলে থাকা, পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা না থাকা।
তবে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কী করছে জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, আমাদের ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি সেখানে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। খালগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আশা করা যায় এবার জলাবদ্ধতা কিছুটা হলেও কমবে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আমাদের কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি জনদুর্ভোগে পড়েন কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার বাসিন্দারা। ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এসব জটিলতার অবসান হয়েছে। এছাড়া ২৯টি খাল নিয়ে কাজ করছি। উদ্ধারের পর কিছু খনন, পরিষ্কার, খালপাড় সবুজায়ন, ওয়াক ওয়ে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জিআইএস পদ্ধতিতে খালের সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রেখেছে তার। সেখানে তারা এখন পর্যন্ত ৫২৪টি পিলার স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। খালগুলোর নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে। খাল দখলমুক্তের কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার অব্যবস্থাপনা
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ইব্রাহিমপুর, লাউতলা, কল্যাণপুর, রূপনগর, আব্দুল্লাহপুর, সিভিল এভিয়েশন, বাইশটেক ও বাউনিয়া খাল দখলমুক্তের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের মোট ১০৩টি স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পরিবেশ আছে। সেখানে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক কোথাও জলাবদ্ধতা হলে ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম এবার কাজ করবে। এ ছাড়াও গত এক বছরে প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য অপসরণ করেছে।
অন্যদিকে, কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড-কে একটি অত্যাধুনিক হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে বেদখল হওয়া ৫৩ একর জায়গা উদ্ধারের পর এখন খনন কাজ চলছে। কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ঘনফুট স্ল্যাজ। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে মগবাজার, মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরসহ এয়ারপোর্ট রোড ও বনানী রেলগেট থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কী করছে জানতে চাইলে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা খালসহ করপোরেশনের আওতাভুক্ত নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। আপনারা জানেন ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা একটা নিয়মিত বিষয়। এ ছাড়া কিছু জায়গাতে রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সেখানে কিছু জলাবদ্ধতা হচ্ছে, যা কয়েক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের পদক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ইউএনবিকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ইতোমধ্যে এর সুফল নগরবাসী পাওয়া শুরু করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, খাল, নর্দমা ও বক্স-কালভার্ট হতে বর্জ্য ও পলি অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়ন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার এবং খাল সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির মতো কার্যক্রমের সুফল নগরবাসী ইতোমধ্যে পাওয়া আরম্ভ করেছে। আশা করা যায় জলাবদ্ধতাবিষয়ক সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে কাজ হয়েছে। যার সুফল গত বছর থেকেই নগরবাসী পেতে শুরু করেছে। আগে বৃষ্টির সময় নগরীর ৭০ শতাংশ ডুবে যেত। কিন্তু এখন জলাবদ্ধতা আগের মতো হচ্ছে না।
মেয়র তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত তিন বছরে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করেছে।
ধানমন্ডি- ২৭, পলাশী মোড়, আজিমপুর মোড়, শান্তিনগর, রাজারবাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল এলাকার নটরডেম কলেজের সামনের অংশ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনের রাস্তা, সূত্রাপুর শিল্পাঞ্চল এখন আগে থেকে কম পানি জমে বলে ডিএসসিসি দাবি করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামপুর, মান্ডা, জিরানী ও কালুনগর- এ চার খালের বর্জ্য ও পলি অপসারণ এবং খাল সংস্কার করে নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এ চার খালের নকশা, অঙ্কন ও জরিপ কাজ চলছে। একই সঙ্গে এসব খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ ও ভূমি উন্নয়নের লক্ষ্যে দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে, কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলমান বলে জানায় ডিএসসিসি।
উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসা দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ পাঁচটি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নর্দমার মালিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। দায়িত্বভার গ্রহণের পর এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা থেকে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে তারা।
এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা থেকে ২০২১ সালে ৮ লাখ ২২ হাজার টন, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের।
আরও পড়ুন: শিগগিরই শেষ হচ্ছে না হাতিরঝিলে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি
১ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: জলাবদ্ধতা, যানজটে চরম ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্রবল বর্ষণের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক ইউএনবিকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সিত্রাং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের সম্মুখীন হয়। এছাড়া গাছ উপড়ে পড়ে, মানুষ নিহত এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়।
সকালে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের ঢাকার মহাসড়কগুলো থেকে উপড়ে পড়া গাছগুলোকে সরাতে দেখা গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল শ্লথ হওয়ায় সকালে অফিসগামীসহ অন্যান্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকা পড়েন।
সরেজমিনে দেখা যায় উত্তরখান, দক্ষিণখান, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, আজিমপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
খিলক্ষেত থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের চলমান কাজ কেবল যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
সকালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় টঙ্গীর নিকটবর্তী আবদুল্লাহপুর এলাকায় চলাচল অত্যন্ত ধীর হওয়ায় হোটেল লে মেরিডিয়ান থেকে ঢাকা বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো আটকে থাকে।
এদিকে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের রাস্তা সকালে জলাবদ্ধ ছিল- যা ফ্লাইওভার দিয়ে খিলক্ষেত এলাকা থেকে বনানী অভিমুখী যাত্রীদের জন্য আরেকটি দীর্ঘ সারি তৈরি করেছিল।
র্যাডিসন ব্লু হোটেলের দিকে কুড়িল ফ্লাইওভার নামার অংশও পানির নিচে ছিল এবং বনানীর দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক (ঢাকা উত্তর) আবু রায়হান মো. সালেহ ইউএনবিকে বলেন, গতকালের টানা বৃষ্টিতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তরা-মহাখালী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে লোকজন আটকে ছিল। তবে মিরপুর এলাকায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন ছিল।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: রাজধানীতে বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা ব্যাহত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ রাস্তা থেকে ৪৭টি পড়ে যাওয়া গাছ সরিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশে ৩২৯টি গাছ উপড়ে গেছে এবং ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু করে দ্রুত দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিত্রাং এখন ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ বিরোধীদের পক্ষে
রাজধানীতে গায়ে আগুন দিয়ে রিকশাচালকের আত্মহত্যা!
২ বছর আগে