বন্যা দুর্গত এলাকা
বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবেন
প্রতি বছর ঝড়ের সম্মুখীন হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বন্যা মোকাবিলা করা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমছে না; বরং বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর ঝড়-প্লাবনে প্রাণহানি যেন অগত্যা সাধারণ সংবাদে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থার উন্নতির জন্য সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে প্রয়োজন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়।
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য খাদ্য সামগ্রী
বিশুদ্ধ খাবার পানি
ঝড় ও বন্যার সময় নদী, পুকুর এবং ঘরের ভেতরের পানি দূষিত হতে পারে। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে সরবরাহকৃত পানি সঞ্চয় করা উত্তম। সাধারণত একজন ব্যক্তির পানীয় এবং খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন গড়ে ন্যূনতম ১ গ্যালন এবং গোসল, দাঁত ব্রাশ ও থালা-বাসন ধোয়ার জন্য দেড় থেকে আড়াই গ্যালন পানি প্রয়োজন হয়৷ অবশ্য টিনজাত ফলের রস, কোমল পানীয় এবং শাকসবজির রস খাবার পানীয়’র কিছু অংশ পূরণ করতে পারে।
এই পানি সরবরাহের সময় টাইট-ফিটিং বা স্ক্রু টপ ঢাকনা সহ পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করা উচিত। হালকা ওজনের প্লাস্টিকের পাত্র এক্ষেত্রে ভালো কাজ দিতে পারে। যদি কাচের জগ বা বোতল ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে খবরের কাগজ বা অন্যান্য প্যাকিং সামগ্রী রেখে সেগুলোকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। ধাতব পাত্রগুলোতে পানি রাখলে পানির স্বাদ বদলে যায়; আর মরিচা ধরতে পারে।
খুব জরুরি অবস্থায় বাড়ির গরম পানির ট্যাঙ্ক থেকে নিষ্কাশন করা পানি সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে এগুলোতে দূষণের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পানি সরবরাহের আগে বিশুদ্ধ করা উচিত।
প্রায় সময় অনেক বেশি পানি বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ক্লোরিন ডাই অক্সাইড বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ফিটকিরি ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এতে করে প্লাবিত লোকজন নিজেরাই পানি বিশুদ্ধ করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প
যথাসম্ভব সংরক্ষণ করে রাখার মত বিশুদ্ধ খাবার
যে কোন দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগ পরবর্তী খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মুড়ি, চিড়া, সবজি খিচুড়ি ইত্যাদি খাদ্য ত্রাণ হিসেবে দেয়া যেতে পারে। জরুরি অবস্থায় ত্রাণ হিসেবে সরবরাহের জন্য আগে প্রয়োজনীয় খাদ্যগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এখানে খাবারের পরিমাণ এবং ধরণ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন- দুর্গত এলাকার পরিবারের সদস্যদের বয়স এবং বিশেষ খাদ্য চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন- শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক। এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং খাদ্য প্রস্তুত করার ক্ষমতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদী খাদ্য সরবরাহের জন্য সাধারণত পানীয় এবং বিশেষ খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হয়। কাচের পাত্র ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য টিনজাত পণ্যই সেরা। টিনজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে-
শাকসবজি, মটরশুটি, ফল ও ফলের রস, স্যুপ, দুধ এবং বোতলজাত পানি। এছাড়াও তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে চিনি, লবণের মতো প্রধান খাবার, বিস্কুট, চকলেট, উচ্চ শক্তির খাবার যেমন পিনাট বাটার, জেলি, বাদাম, শুকনো ফল, চাল এবং আলু। বাচ্চাদের জন্য সুজি, সেরেলাক নেয়া যেতে পারে।
টিনজাত খাবার প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা যেতে পারে, যতক্ষণ না টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এগুলো সরবরাহের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে তা সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা যে কোনও সময় সেগুলো পোকামাকড় এবং ইঁদুরের মতো কীটপতঙ্গের পাশাপাশি বন্যার পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরো পড়ুন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ভোলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী
খাবার ছাড়াও বন্যার্তদের টিকে থাকার জন্য আরও কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়। অতিবৃষ্টি অথবা বন্যার কারণে অনেক সময় অসহায় লোকদের এক কাপড়েই কাটিয়ে দিতে হয় দীর্ঘ দিন। তাই নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কাপড় নেয়া যেতে পারে। বন্যার পানি থেকে পা বাঁচানোর জন্য দেয়া যেতে পারে গামবুট। এ ব্যাপারে শিশু ও বয়স্কদের ওপর বিশেষ নজর দেয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রীর মধ্যে সাবান, টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট, মশা ও পোকা-মাকড় নিরোধক, মশা স্প্রেয়ার ত্রাণ হিসেবে সঙ্গে নেয়া যেতে পারে।
ওষুধপত্রের মধ্যে খাবার স্যালাইন, জ্বর ও মাথা ব্যথার ওষুধ, কাশির সিরাপ নেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন মাত্রার বর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য ছাতা ও রেইন কোট উত্তম। কাপড়ের বিকল্প হিসেবে নয়; বরং আলাদা কাপড়ের তালিকায় এই সামগ্রী রাখা উচিত।
ঝড়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট খুব সাধারণ বিষয়। এই লোডশেডিং-এর কথা মাথায় রেখে মোমবাতি, টর্চ লাইট, ম্যাচ দেয়া যেতে পারে।
দুর্যোগ যখন বন্যা তখন এ থেকে বাঁচার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই ত্রাণ হিসেবে নৌকার কথাও ভাবা যেতে পারে। স্থানীয় নৌকার দাম সাধারণত সাধ্যের বাইরে থাকে। তাই ত্রাণ হিসেবে কয়েকটি ইনফ্ল্যাটেবল বোট পেলে অসহায় মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারে। গ্যাসে ভরা এসব নৌকা ওজনে বেশ হালকা হয়; আর দামেও সাশ্রয়ী। ৩ জন মানুষের জায়গা সংকুলান হয় এই নৌকায়। ফলে সহজেই তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পারেন।
আরো পড়ুন পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
শেষাংশ
বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বির্পযস্ত জনজীবনকে কেবল টিকিয়েই রাখে না, এটি ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক দিক থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বজায় রাখে। প্রতিবারের মত এবারো সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এ সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে অসহায় মানুষ তীর্থের কাকের মত ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করে। তাই পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী তাদের এই ক্ষতিগুলো অনেকাংশে পুষিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা উচিত এই দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে।
২ বছর আগে