আশিয়ান
আশিয়ান: বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য না থাকার ঘোষণা মিয়ানমারের
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন যে মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি এবং তারা দেশটিতে সহিংসতা বন্ধে দৃঢ় সংকল্প বৃদ্ধিতে ঐক্যমত হয়েছে। দেশটিতে গত বছর একটি সামরিক অভ্যুণ্থানের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে যা এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
রবিবার মিয়ানমারের কাচিনে সামরিক বিমান হামলা চালিয়ে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ৪০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা এবং জুলাই মাসে রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করাসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্থা (আশিয়ান) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে৷
বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মিয়ানমারের ওপর এক বিশেষ বৈঠকে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন যে তাদের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। গত বছরের এপ্রিলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে গ্রুপটি পাঁচ দফা ঐকমত্যে পৌঁছেছে তার বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করতে ‘জোরলো, বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরই আসিয়ান অন্তর্ভুক্ত মিয়ানমারে শান্তি স্থাপনের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে স্কুলে হেলিকপ্টার হামলা, ৭ শিক্ষার্থীসহ নিহত ১৩
পাঁচ দফা ঐকমত্য অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে একটি সংলাপ, একজন আসিয়ান বিশেষ দূতের মধ্যস্থতা, মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশেষ দূতকে মিয়ানমার সফরের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমার সরকার প্রাথমিকভাবে ঐকমত্যে সম্মত হলেও তারা এটি বাস্তবায়নে খুব কম চেষ্টা করে। মানবিক সাহায্য এবং আসিয়ানের দূত কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখোনকে স্বল্প পরিসরে সফর করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তাকে সু চির সাথে দেখা করার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। সু চিকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে।
এসবের প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ান জোট মিয়ানমার নেতাদের তাদের অফিসিয়াল বৈঠকে অংশ নিতে দেয়নি। যদিও কর্মরত পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন।
সর্বশেষ আশিয়ান বৈঠকের সভাপতিত্বকারী প্রাক সোখোন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বৈঠক থেকে বলা হয় যে, আসিয়ানের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করতে মিয়ানমারকে সাহায্য করতে আশিয়ান আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্য বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় মন্ত্রীরা তাদের উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন ‘অগ্রগতির পরিবর্তে পরিস্থিতির অবনতি এবং অবনতি হচ্ছে বলেও বৈঠকে বলা হয়।
মারসুদি আরও বলেন, ‘আবার সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’ ‘সহিংসতা বন্ধ না করলে এই রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের কোনও অনুকূল পরিস্থিতি থাকবে না।’
আরও পড়ুন: ‘আমরা ফিরে আসব’ লিখে কি সতর্কতা দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী!
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে যে এটি ‘বৈঠকের ফলাফলের দ্বারা তারা প্রভাাবিত হবে না। কারণ বৈঠকে মিয়ানমারের উপস্থিতি ছাড়াই আসিয়ানের অন্য নয় দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা জোর দিয়েছে যে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সহযোগিতা করে। জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালানোর পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পাঁচ দফা রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর আসিয়ানের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হলো। আসিয়ানের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় থাকবে মিয়ানমার সংকট। এই সমস্যাটি গ্রুপের ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আশিয়ান সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে একে অপরের সমালোচনা করা এড়িয়ে চলে। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতাকে ব্যাপকভাবে দেখা হয়। একটি ভূ-রাজনৈতিক এবং মানবিক জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় গোষ্ঠীটির দুর্বলতা প্রকাশ করে যা তাদের সকলকে প্রভাবিত করতে পারে।
ক্রমবর্ধমান শরণার্থী মিয়ানমার ছেড়ে পুরো অঞ্চল জুড়ে আশ্রয় খুঁজছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে আনুমানিক সাত লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে। সংস্থাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নেতাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে য, এসব জনগণকে যেন ওইসব দেশের সরকারগুলো মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাধ্য না করে।
এই সংস্থাটির গবেষক শায়না বাউচনার বলছেন, ‘জান্তার সহিংসতা এবং নিপীড়ন থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের রক্ষা করার পরিবর্তে আঞ্চলিক নেতারা মিয়ানমারের শরণার্থী এবং অন্যান্য নাগরিকদের ক্ষতির পথে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারে নির্বাসন ত্বরান্বিত করেছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে তাদের আশ্রয়ের দাবিগুলো অবজ্ঞা করে গত এপ্রিল থেকে দুই হাজার জনেরও বেশি লোককে ফিরিয়ে দিয়েছে। থাই কর্তৃপক্ষ আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করেই মিয়ানমারের সীমান্তে ফিরিয়ে দিয়েছে।
আসিয়ান গঠিত হয়েছে- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামকে নিয়ে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা বর্ষণ
২ বছর আগে