আলুর চিপস
প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি মানুষের আকর্ষণটা বরাবরই একটু বেশি। সেখানে আলুর চিপসের ব্যাপারে অনেকেরই দুর্বলতা আছে। কালে ভদ্রে মচমচে চিপস উপভোগ করাটা খারাপ নয়; বরং তা স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য বেশ ভালো কাজে দেয়। কিন্তু স্ন্যাকসের তালিকায় প্রতিদিন প্রায় নিয়ম করে চিপস খাওয়াটা স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে কোন তারতম্য অনূভুত না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ স্বাস্থ্য অবনতি ঘটতে পারে। তাই চলুন জেনে নিই প্যাকেটজাত আলুর চিপসের স্বাস্থ্যহানিকর দিকগুলো সম্বন্ধে।
প্যাকেটজাত আলুর চিপসের ৭টি ক্ষতিকর দিক
রক্তচাপের ঊর্ধ্বগতি
লবণযুক্ত চিপসের প্রধান উপাদান সোডিয়াম। দেহের খনিজ উপাদান যোগানে সোডিয়ামের প্রয়োজন আছে। কিন্তু অত্যধিক সোডিয়াম রক্তচাপ বৃদ্ধিজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিনের স্ন্যাকসের তালিকায় নিয়মিত আলুর চিপস থাকা মানেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেহে উচ্চ রক্তচাপের বিকাশ ঘটানো।
আরো পড়ুন: খাদ্যতালিকায় ৫ খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস
চিপসে থাকা সোডিয়াম কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে স্ট্রোক, হার্ট ফেইল, করোনারি হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের আশঙ্কা থাকে। আলুর চিপস-এ সাধারণত প্রতি আউন্সে ১২০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে এবং টর্টিলা চিপস-এ প্রতি আউন্সে ১০৫ থেকে ১৬০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। চিপসের প্যাকেটগুলো সাধারণত এক আউন্সের বেশি হয়ে থাকে। তাই চিপস খাওয়ার সময় সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সোডিয়াম দেহের ভেতর প্রবেশ করে।
ওজন বৃদ্ধি
চিপসে থাকা চর্বি এবং ক্যালোরির পরিমাণ ওজন বৃদ্ধি; এমনকি স্থূলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এক আউন্স প্লেইন পটেটো চিপস বা প্রায় ১৫ থেকে ২০টি চিপসে প্রায় ১০ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৫৪ ক্যালোরি থাকে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
চিপসের লবণ উপাদান চিপসকে অত্যন্ত মুখরোচক করে তোলে, যার ফলে অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় চিপস বেশি খেয়ে নেয়। লবণের সঙ্গে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত উপাদান একত্রিত হয়ে একটি ক্ষতিকর খাবারে পরিণত হয়, যেটি যে কারও ওজন নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
আরো পড়ুন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি খাবার
হৃদরোগের ঝুঁকি
যে কোন প্রক্রিয়াজাত চর্বিযুক্ত খাবার হৃদযন্ত্রের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। আর চিপস এ ধরণের খাবারগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। যাদের প্রিয় স্ন্যাক্স চিপস, তাদের কার্সিনোজেনিক অ্যাক্রিলামাইডের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। চিপসে থাকা এই রাসায়নিকটি হৃদরোগের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। ঘন ঘন চিপস খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রায় বৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে পারে। কারণ এতে আছে অধিক পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের ফ্যাট।
বেশিরভাগ চিপস বেশি করে ভাজা হয়, যার ফলে এতে তৈরি হয় ট্রান্স ফ্যাট, যেটি ফ্যাটের সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরণ। এছাড়াও চিপস ভাজার জন্য ব্যবহৃত তেলগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট সম্পন্ন, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য সক্রিয় প্রভাবক। রক্ত প্রবাহে উচ্চ মাত্রার ট্রান্স চর্বি করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ক্যান্সারের আশঙ্কাঅ্যাক্রিলামাইড এমন একটি রাসায়নিক, যেটি মুলত প্রক্রিয়াজাত খাবারে পাওয়া যায় এবং এর কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার হতে পারে। যারা চিপস পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি নিতান্ত ভয়ানক ব্যাপার। কারণ অনেকেই বিষয়টি উড়িয়ে দেন। আলুর চিপ্স-এ উচ্চ মাত্রায় অ্যাক্রিলামাইড থাকায় চিপসে আসক্ত ব্যক্তিরা আসলে অ্যাক্রিলামাইডে আসক্ত হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন বাজেটের মধ্যে ঢাকার সেরা ১০টি বুফে রেস্টুরেন্ট
সিগারেটের ধোঁয়া এবং আলুর চিপস দুটোই এই কার্সিনোজেন ধারণ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য স্পষ্টভাবে হুমকিস্বরূপ। ধূমপায়ীদের ন্যায় এই প্যাকেটজাত আলুর চিপস খাওয়া ব্যক্তিরাও দাবী করেন যে, এটা তাদের তেমন ক্ষতি করবে না। কিন্তু চরম পর্যায়ে এই অ্যাক্রিলামাইড ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
স্ন্যাক্স খাবার ক্ষেত্রে বিশেষ করে যখন চিপসের কথা আসে, তখন এতে থাকা অ্যাক্রিলামাইডের জন্য ব্যাপারটিকে একটু গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। এছাড়া চিপসে থাকা প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল অনেক ক্ষেত্রে খুব খারাপ ফলাফলের অবতারণা করতে পারে। বিশেষ করে ব্যক্তির পরিবারে যদি ইতোমধ্যে পূর্বে কারো স্ট্রোকের ঘটনা থেকে থাকে।
এ ধরণের রেকর্ড থাকা পরিবারের উত্তরাধিকারীদের চিপস এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যথায় যদি এই চর্বি ভর্তি আলু চিপসের লোভ সামলানো না যায়, তাহলে ভবিষ্যতে যে কোন সময় একটি সম্ভাব্য অ্যানিউরিজমের সম্মুখীন হতে হবে। উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার থেকে চর্বি জমা হয়। এটি ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ফলশ্রুতিতে সরাসরি স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি
এক প্যাকেট চিপসে থাকা চর্বি বা কোলেস্টেরল অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে। একটি মানুষের প্রতিদিনের বিপজ্জনক চর্বির যোগানের একটা বিরাট অংশ আসে চিপসে থাকা ট্রান্স ফ্যাট থেকে। এই ট্রান্স ফ্যাটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে এমন কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা চিপস পছন্দকারীদের অবিলম্বে চিপস থেকে মুখ ফিরিয়ে দিতে পারে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণায় দেখা গেছে ট্রান্স ফ্যাট মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। আর চিপস যেহেতু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাটের আধার, তাই অতিরিক্ত চিপস খাওয়া মহিলাদের জন্য এটি একটি সাবধান বাণী।
শেষাংশ
নিত্যদিনের ব্যস্ততার কারণে বাধ্য হয়েই সবাই প্রস্তুতকৃত খাবারের দিকে ছুটে থাকেন। ঘরে খাবার তৈরির প্রবণতা কমে যাওয়াতে কিশোর ও তরুণরাও ঝুঁকে পড়েছেন এই খাবারগুলোর প্রতি। বিশেষ করে চিপসের একটা প্যাকেট চলতে ফিরতে বা আড্ডার মাঝে সবার হাতে হাতে দেখা যায়। কিন্তু প্যাকেটজাত আলুর চিপসের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ঘন ঘন চিপস খাওয়াটা এড়িয়ে চলা উচিত।
আরো পড়ুন জবা ফুলের চা: গুণাগুণ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও বানানোর পদ্ধতি
শুধু দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়; এই পুষ্টিহীন খাবারটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। একদম ক্যালরি শূন্য এই খাবার মানুষকে দ্রুত ক্ষুধার্ত করে তুলে। এর থেকে শুরু হয় চিপসের প্রতি নেশা, যা শরীরকে আরো খারাপ অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়।
১ বছর আগে