পাইকারী
খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নিবে বিইআরসি
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এখন খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে গণশুনানির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
বিইআরসি’র সদস্য (পাওয়ার) মোহাম্মদ বজলুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা মনে করি জমা দেয়া প্রস্তাবগুলোর ওপর গণশুনানির জন্য কোনও প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আমাদের প্রথমে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।’
সরকার খুচরা এবং বাল্ক বিদ্যুত ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ তৈরি করতে বিইআরসি আইন ২০০৩ সংশোধন করার সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপের পটভূমিতে বিইআরসি সদস্যের কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য আসলো।
বজলুর রহমান বলেন, ‘প্রস্তাবিত সংশোধনীর পর বিইআরসি কোনও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিতে যাওয়া উচিৎ নয়।’
কমিশনের গণশুনানি এবং সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে জ্বালানি শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিতে ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ-২০২২-এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: পাইকারি পর্যায়ে অপরিবর্তিত থাকবে বিদ্যুতের দাম: বিইআরসি
তিনি বলেন, বিইআরসি শুল্ক হার নির্ধারণের বিষয়ে পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্ত নিতে ৯০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে এবং এটি একটি দীর্ঘ সময়। এখন বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে সরকার জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারে সেজন্য এই সংশোধন করা হচ্ছে।
বৈঠকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি ও জ্বালানি আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে বিইআরসি চেয়ারম্যান সরকারের সাবেক সচিব আবদুল জলিল প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে গেজেট প্রজ্ঞাপনে যাওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাকে আগে গেজেট বিজ্ঞপ্তি দেখতে দিন... তারপর কমিশন জনশুনানি বা ট্যারিফ নির্ধারণ সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।’
এদিকে, বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা তাদের নিজ নিজ প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ছয়টি প্রতিষ্ঠান- বিপিডিবি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলএস (নেসকো) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডব্লিউজেডপিডিসিএল) খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে।
১ ডিসেম্বর থেকে বিইআরসির বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর তারা তাদের প্রস্তাব জমা দেয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের প্রধান সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের একক ক্রেতা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক ক্ষতি বছরে ১৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিপিডিবি’র সর্বশেষ নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতি ২০২১ থেকে ২০২২ অর্থবছরের ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা থেকে ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে, যা প্রায় ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র জানায়, বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয় ও কম দামে বিক্রি, পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপিডিবির রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে যখন একটি বিশাল রাজস্ব ঘাটতি বিপিডিবি’র একটি বড় বোঝা হবে তখন বাল্ক ট্যারিফের সাম্প্রতিক ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি সংস্থাটিকে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোকসান কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে, বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধিতে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোকে তাদের নিজস্ব রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বিইআরসিতে তাদের খুচরা শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিতে চাপ দেয়।
আরও পড়ুন: বিইআরসি ছাড়াই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার, মন্ত্রিসভায় সংশোধনী অনুমোদন
বিইআরসি একটি গণশুনানির পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল।
একটি ঘোষণার মাধ্যমে, বিইআরসি ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকরভাবে খুচরা পর্যায়ে পরিমিত গড়ে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা)ছয় দশমিক ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ১৩ টাকা করা হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ তার বিশাল আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য বাল্ক এবং খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি চাপ বাড়িয়েছে। কারণ দাতা সংস্থাটি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাস এবং ক্ষতি পূরণের জন্য বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিইআরসি আইন সংশোধনে সরকারি পদক্ষেপের নেপথ্যে যা রয়েছে
২ বছর আগে