প্রশান্ত মহাসাগর
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিলারি
প্রশান্ত মহাসাগরের মেক্সিকো উপকূল বরাবর আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিলারি। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৮ আগস্ট) শক্তিশালী ক্যাটাগরি-৪ এ রূপান্তরিত হয়ে হিলারি এ আঘাত হানে।
এটি ৮৪ বছরের মধ্যে প্রথম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় হিসেবে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানছে। এর প্রভাবে সীমান্ত শহর টিজুয়ানাতে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করে জানিয়েছেন, ঝড়টির প্রভাবে ওই অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধস ও এমনকি টর্নেডোও হতে পারে।
হিলারি শুক্রবার পর্যন্ত দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করেছে। তবে এরপর কিছুটা শক্তি হারিয়েছে। ঝড়টির কেন্দ্রে সর্বোচ্চ বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১৪৫ মাইল (২৩০ কিলোমিটার)। তবে সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৩০ মাইল (২১৫ কিলোমিটার)।
তা সত্ত্বেও, শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়া উপদ্বীপে এটি ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এবং রবিবার (২০ আগস্ট) দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
হিলারি ইতোমধ্যে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়োজিত মেজর লিগ বেসবল এর রবিবারের তিনটি খেলার সময় পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জোশুয়া ট্রি ন্যাশনাল পার্ক এবং মোজাভে ন্যাশনাল প্রিজার্ভ বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে মানুষ বন্যার মধ্যে আটকে না পড়ে।
অ্যারিজোনাসহ সারা রাজ্যের শহরগুলো বন্যার পানি ঠেকাতে বালির ব্যাগ মজুত রেখেছে।
আরও পড়ুন: চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাবদাহে ১৪৭ জনের মৃত্যু
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তথ্যমতে, ১৯৩৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের পর কোনো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য হুমকির বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করেছে।
সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, হিলারি প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর শহর এনসেনাডা থেকে প্রায় ২০০ মাইল (৩৩০ কিলোমিটার) দক্ষিণে বাজা উপদ্বীপের একটি কম জনবহুল এলাকা বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে।
এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিজুয়ানাতে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
মেয়র মন্টসেরাট ক্যাবলেরো রামিরেজ বলেছেন, তারা নিবিড়ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছেন।
১ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষের বসবাসকারী এই সীমান্ত শহরটি বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকার কারণে ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ ছাড়াও, কয়েক ডজন মানুষ এখানকার সড়ক ও খালের তীরে বাস করে। যার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন আসা অভিবাসীরাও রয়েছে।
ক্যাবলেরো রামিরেজ বলেছেন, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসা সীমান্তের মধ্যে একটি এবং আমাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে একটি ঝুঁকিপূর্ণ শহর।’
অন্যদিকে, মূল ভূখণ্ডের কিছু অংশে আঘাত হানা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের ব্যাপারে নজরদারি জারি করেছে মেক্সিকো এবং ১৮ হাজার সেনাসদস্য প্রস্তুত রেখেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হিলারি বাজা উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের কাছে কাবো সান লুকাসের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ৩১০ মাইল (৪৯৫ কিলোমিটার) জুড়ে কেন্দ্রীভূত ছিল।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে ৪০০টিরও বেশি
এটি উত্তর-পশ্চিমে ঘণ্টায় ১২ মাইল (১৯ কিলোমিটার) বেগে অগ্রসর হচ্ছিল এবং এটি আরও উত্তরের দিকে এগোবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শহরটির কর্মকর্তা ফ্লোরা আগুইলার বলেন, কাবো সান লুকাসের কয়েকটি স্কুল অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কর্টেজ সাগরের তীরের বাজা ক্যালিফোর্নিয়া সুর রাজ্যের মনোরম রাজধানী লা পাজে সাঁতারুদের সমুদ্র থেকে দূরে রাখতে পুলিশ সৈকতে টহল দিচ্ছে। পাঁচটি এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবার সান দিয়েগো অফিস জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের শক্তি নিয়ে সোমবার সকালে হিলারি ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানবে। তবে শনিবার সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কর্মকর্তারা বলেছেন, ঝড়টির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি (৮-১৫ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও দক্ষিণ নেভাদার অংশে কোনো কোনো জায়গায় ১০ ইঞ্চি (২৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।
আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী ও প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টেন কোরবোসিয়েরো বলেন, বছরের এই সময়ে ‘দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের কথা শোনা যায় না।’
ইয়েল ক্লাইমেট সংযোগের আবহাওয়াবিদ ও সাবেক সরকারি ইন-ফ্লাইট হারিকেন আবহাওয়াবিদ জেফ মাস্টারস বলেছেন, এই অঞ্চলে এবার ১০০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টি হতে পারে এবং নেভাদায় সর্বকালের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই অঞ্চলে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির উদ্ধারকারীরা অবস্থান করেছে।
শুক্রবার ক্যাম্প ডেভিডে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই ঝড়ের ব্যাপারে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং রাষ্ট্র ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা শুনতে অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে উপকূলে ভেসে এসেছে কয়েক হাজার মরা মাছ
১ বছর আগে
ইন্দোনেশিয়ার জাভায় শক্তিশালী ভূমিকম্প
ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপ জাভা শনিবার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। তবে হতাহতের কোনো তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পটি ৫ দশমিক ৭ মাত্রার। এটি ১১২ কিলোমিটার (৭০ মাইল) গভীরতায় পশ্চিম জাভা এবং মধ্য জাভা প্রদেশের মধ্যবর্তী শহর বানজার থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে কেন্দ্রীভূত ছিল।
এর আগে গত ২১শে নভেম্বর একটি ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে পশ্চিম জাভার সিয়াঞ্জুর শহরে কমপক্ষে ৩৩১ জন নিহত এবং প্রায় ৬০০ জন আহত হন। সুলাওয়েসিতে ২০১৮ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় চার হাজার ৩৪০ জন নিহত হওয়ার পর এটি ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬৮
ইন্দোনেশিয়ার মেটিওরোলজি, ক্লাইমাটোলজি এন্ড জিওফিজিক্যাল এজেন্সির প্রধান দ্বিকোরিতা কর্নাবতী বলেছেন, সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই, তবে সম্ভাব্য আফটারশকের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পটি ৬ দশমিক ৪ মাত্রার।
২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বাসকারী দেশটি প্রায়ই ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামি আক্রান্ত হয়। কারণ এটি ‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিনে আগ্নেয়গিরি এবং ফল্ট লাইনের মাঝে অবস্থিত।
২০০৪ সালে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভারত মহাসাগরের ভূমিকম্পের ফলে সুনামি আঘাত করে। যা ফলে এক ডজন দেশে দুই লাখ ৩০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। যাদের বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫২
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে ৪৬ জনের মৃত্যু, আহত ৭০০
২ বছর আগে