সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন
১৪ দফা নিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নামবে গণতন্ত্র মঞ্চ
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং শাসনব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলনের জন্য ১৪ দফা দাবি ঘোষণা করেছে সাত বিরোধী দলের রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।
সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকায় বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, ৭ ডিসেম্বর পুলিশের অভিযানে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: 'গণতন্ত্র মঞ্চ' রাজনীতিতে গুরুত্বহীন: তথ্যমন্ত্রী
এছাড়া দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের উদ্যোগ নিতে খুব শিগগিরই একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে।
এর আগে শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন রাজধানীতে দলের সমাবেশ থেকে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচির মাধ্যমে একযোগে আন্দোলন শুরু করতে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন।
মান্না বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রের (শাসনব্যবস্থার) গুণগত পরিবর্তন চাই। সেজন্যই আমরা ১৪ দফা রাখছি। আমরা বিএনপিকেও আমাদের পয়েন্ট দিয়েছি এবং আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।’
নাগরিক ঐক্যের নেতা বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী একজন মুঘল সম্রাটের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, কারণ তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। এটা চলতে পারে না এবং সংবিধান সংশোধন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি সামগ্রিকভাবে জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দেশের প্রশাসন, আইন ও সংবিধানে উল্লেখযোগ্য সংস্কার করা উচিত।’
রাজনৈতিক এই মঞ্চটির ১৪ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, অতিরিক্ত অর্থের ব্যবহার বন্ধ করা। নির্বাচন ও মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ, আরপিও সংশোধন, প্রশাসনে পরিবর্তন আনা, ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপার ব্যবহার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
এছাড়া সংসদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, ন্যায়পাল নিয়োগ, সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, প্রত্যক্ষ নির্বাচনসহ আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য দাবিগুলো হলো- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক রাজবন্দির মুক্তি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সভা-সমাবেশে কোনও বাধা না দেয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ সব কালো আইন বাতিল এবং শিল্প পুলিশের নামে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করা।
১৪ দফার সঙ্গে বিএনপির ১০ দফার অনেক মিল রয়েছে। কারণ গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির দাবিতে কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে।
আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বসেছে বিএনপি
রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ বিরোধীদের পক্ষে
২ বছর আগে
২৪ ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি
সকল জল্পনা-কল্পনা অবসান ঘটিয়ে এবং অসংখ্য বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে বিএনপি শনিবার রাজধানীতে শান্তিপূর্ণভাবে একটি বিশাল সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে দলটি ২৪ ডিসেম্বর ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
দলটি ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে গণসমাবেশ করবে।
৭ ডিসেম্বর বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী নিহত, দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাতে ১৩ ডিসেম্বরও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গোলাপবাগ মাঠের জনসভায় এ কথা বলেন।
মোশাররফ বলেন, যে সব দল যুগপৎভাবে আন্দোলন শুরু করতে তাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাবে তারা এগিয়ে যাবে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করবে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ: ১০ দফা দাবিতে একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা
তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, সংবিধানে সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। ব্যালট পেপার ব্যবহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অন্য সব রাজনৈতিক বন্দিদের কোনো শর্ত ছাড়াই মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইন প্রত্যাহার, মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র রাখা।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দেয় এবং জনসমাগম সমাবেশস্থলের চারপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটারে ছড়িয়ে পড়ে।
সমাবেশে যোগ দেয়ার আগে দলের সাত সংসদ সদস্য ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন করে ক্ষমতায় বসার চেষ্টা করছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে পূর্বে পুলিশের অভিযানে দলের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও পরিবহন ধর্মঘট কাটিয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে সমাবেশের আয়োজন করেছে দলটি।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল যে আগামী সাধারণ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানে এটির সুযোগ নেই বলে দাবিটিকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন: মুগদায় আ.লীগ-বিএনপির ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ২টি মোটরসাইকেলে আগুন
ঢাবিতে ৫ ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ
২ বছর আগে