রাষ্ট্র সংস্কার
রাষ্ট্র সংস্কারে জামায়াতের ৪১ প্রস্তাবনা, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার ও ইভিএম বাতিলের আহ্বান
রাষ্ট্র সংস্কারে মোট ৪১টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে অন্যতম বিচার বিভাগ সংস্কার, ইভিএম বাতিল, পুলিশি আইন সংস্কার ও সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের সময়সীমা ৬২ বছর করা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিয়েছে আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আওয়ামী লীগ দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য একনায়কতন্ত্র কায়েম করে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ কুক্ষিগত করেছিল। হাজার হাজার মামলা দায়ের করে জুলুমের রাজনীতি কায়েম করেছিল।
বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা কারার প্রস্তাব দিয়ে তাহের বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইন সংস্কার করতে হবে। দেওয়ানি মামলা ৫ বছর ও ফৌজদারি মামলা ৩ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল। এখন এটি অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে।
পুলিশের আইন পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বদলি ও পদোন্নতির জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। কোনো সুপারিশের সুযোগ রাখা যাবে না। পুলিশ ট্রেনিংয়ের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা রাখতে হবে। মারণাস্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে।
জামায়াত নেতা এসময় সরকারি চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনামূল্যে করতে হবে। চাকরিতে বয়স সময়সীমা আগামী ২ বছরের জন্য ৩৫ ও পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর, আর অবসরের বয়স হবে ৬২ বছর।’
আরও পড়ুন: গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই: জামায়াতের আমীর
এ সময় সরকারি চাকরিতে প্রশ্নফাঁস বা দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দুদককে শক্তিশালী করে স্বাধীনভাবে কাজ করার ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
পরপর দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এমন প্রস্তাবনা দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ব্যবহারে ভাগভাগি থাকতে হবে।
এ সময় শিক্ষা ও দেশের বিনোদন সেক্টর নিয়েও সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, সকল শ্রেণিতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিষয় যুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও কন্টেন্ট অশ্লীলমুক্ত করতে হবে।
চীন, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদী বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। পররাষ্ট্র বিষয়ে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখতে হবে বলেও জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রস্তাব দেন। এতে হজ্জ ও ওমরার খরচ কমানোর জন্য কার্যকরী উদ্যেগ নেওয়ার কথাও বলা হয়।
অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণহত্যায় জড়িত যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আগে নির্বাচন, না আগে সংস্কার এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের, আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেনো অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। একটি বর্ণাঢ্য সংসদের জন্য জনগণকে কোনো ব্যক্তিকে না, দলকে ভোট দিতে হবে।
আরও পড়ুন: যারা দেশ বিক্রি করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে থাকবে না: জামায়াতের নায়েবে আমির
২ মাস আগে
বিএনপি নেতাদের মুখে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হাস্যকর: তথ্যমন্ত্রী
বিএনপির ২৭ দফা নিয়ে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল আর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করেছিল, সেই বিএনপি নেতাদের মুখে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হাস্যকর।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় হ্যাকাথন ‘কোড সামুরাই’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার বলে তারা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে সেটা আমি দেখেছি। ১৩ নম্বর প্রস্তাবে আছে-দুর্নীতির ব্যাপারে কোনও আপোষ করা হবে না।
আরও পড়ুন: তদন্তের স্বার্থে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ: তথ্যমন্ত্রী
যারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল, যাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত, তারা যখন এ সমস্ত কথা বলে তখন মানুষ হাসে গাধাও হাসে।
এছাড়া খন্দকার মোশাররফ সাহেব তো ছাত্রলীগ করতেন। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার জন্য রাজনীতির কাকরা সমবেত হয়ে বিএনপি গঠন করেছিল। এই উচ্ছিষ্ট গ্রহণকারী নেতারা যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে তখন সেটি হাস্যকর ছাড়া অন্য কোনও কিছু নয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২৭ দফায় গতানুগতিক কিছু কথা বলেছে যে সব দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন করছে। আমাদের দেশে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হয় তখন রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের ওপর অনাস্থার কথাই চলে আসে। কারণ রাজনীতিতে আমরা সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সেটি তারা করতে চায় না বিধায় অগণতান্ত্রিক কিছুকে আনতে চায়। এটি কখনই সমীচীন নয়।
ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বক্তব্য রেখেছেন। তবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের জেনেভা কনভেনশন মেনে বক্তব্য রাখা প্রয়োজন। আমাদের রাজনৈতিক বিষয়গুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের বা ১৯৭৬-৭৭ সালের কিংবা ১৯৮২-৮৩ সালের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশ এখন ২০২২ সালের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে এখন বাজেট প্রণয়নের জন্য প্যারিস কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে ছুঁটে যেতে হয় না। আমাদের বাজেট আমরাই প্রণয়ন করি সুতরাং বিদেশিদের নাক গলানোর কোনও সুযোগ নেই।
এর আগে মন্ত্রী ঢাবি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এবং সফটওয়্যার সংস্থা বিজেআইটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কোড সামুরাই’ ২৪ ঘন্টার হ্যাকাথন উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে পিছিয়ে পড়লেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পিছিয়ে পড়েনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু, ওয়ানপ্রুপ ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইজুমি হিরায়ামা, মারুবেনি করপোরেশন ঢাকার মহাব্যবস্থাপক হিকারি কাওয়াই, কোড সামুরাই কমিটি সদস্য ইয়াসুহিরো আকাশি এবং ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাইফুদ্দিন মো. তারিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রাথমিক পর্বের পাঁচ শতাধিক থেকে বাছাই হয়ে আসা দেড় শতাধিক প্রতিযোগী হ্যাকাথনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নেপথ্যে থাকা জামায়াত বিএনপির প্রধান সহযোগী: তথ্যমন্ত্রী
১ বছর আগে