প্রথম মেট্রোরেল
টিকিট কাটা থেকে শুরু করে আসনব্যবস্থা: ঢাকা মেট্রোরেলে প্রথম ভ্রমণের আগে যা জানা দরকার
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের বহু প্রতীক্ষিত প্রথম মেট্রোরেল শিগগিরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। তবে যাত্রীদের সম্পূর্ণ পরিষেবা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, কারণ প্রথম পর্যায়ে এটি শুধুমাত্র উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পরবর্তীতে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। প্রথম দিকে সীমিত পরিসরে শুরু হবে। পরিপূর্ণভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে তিন মাস।
১৫ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপটি ২৮ ডিসেম্বর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন: কাদের
মেট্রোরেলে প্রথম যাত্রা কেমন হবে?
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক ইউএনবিকে বলেন, প্রথম পর্যায়ে অল্প সংখ্যক যাত্রী বহনকারী সীমিত সংখ্যক ট্রেন সকাল ও বিকালে স্বল্প সময়ের জন্য চলবে এবং যাত্রীদের অভ্যস্ত হওয়ার জন্য তিন মাস ধরে গতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকবে।
যাত্রীদের নতুন আসন ও টিকিট ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করার জন্য ট্রেনগুলো প্রথমে স্টেশনে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় অপেক্ষা করবে। ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনগুলোতে কম সময় অপেক্ষা করবে, যা ভ্রমণের সময় কমিয়ে আনবে।
শুরুতে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে না। ট্রেন উত্তরা স্টেশন থেকে ছেড়ে পল্লবীতে থামবে, তারপর না থামিয়ে আগারগাঁও যাবে। মধ্যবর্তী স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামানো হবে পরবর্তীতে।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশেই যখন প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় তখন পরিপূর্ণ ভাবে চলাচল করে না। প্রথমে সীমিত যাত্রী নিয়ে চালু করে, তারপর পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে। প্রথম সীমিত যাত্রী নিয়ে এমআরটি লাইন-৬ চালু হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে ট্রেনে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে চলবে, পরে ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী। এভাবে যাত্রীদের প্রথমে অভ্যস্ত করা হবে।
সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা ১২টি ট্রেনের মধ্যে ১০টি নিয়মিত চলবে এবং দুটিকে যেকোনো সমস্যার জন্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।
মেট্রোরেলে আসনব্যবস্থা
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি ট্রেনে দুই প্রান্তে দুটি চালক কোচসহ মোট ছয়টি কোচ থাকবে। দুটি চালক কোচে ৪৮ জন যাত্রী বসতে পারবে। বাকি চার কোচে বসবেন ৫৪ জন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে ৩০৬ জন যাত্রী বসতে পারবেন।
উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এরপর ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১৭০০ যাত্রী বহন করা হবে।
ডিএমটিসিএল অনুসারে, প্রাথমিকভাবেই এটি এক হাজার ৭০০ যাত্রী বহন করতে পারবে। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়েও ভ্রমণ করতে পারবেন। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সুবিধার জন্য উপরে হাতল এবং একটু পর পর খুঁটি রয়েছে। কোচের ভেতরে দুই সারিতে সবুজ রঙের লম্বা আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে দুই হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের মালামাল নিয়ে আরও একটি জাহাজ মোংলা বন্দরে
টিকিট ব্যবস্থা ও ভাড়া
ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড ও টিকিটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের টিকিট কাটার জন্য অটো ও ম্যানুয়াল দুটি মাধ্যমই রয়েছে। অটো পদ্ধতিতে যাত্রীরা নিজেদের টিকিট নিজেরাই কাটতে পারবেন। একজন যাত্রীর সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকিট সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে।
যারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকেট কাটতে পারবেন না তাদের জন্য রয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে কাউন্টার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তা স্মার্টকার্ড পাসের মাধ্যমে গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে।
মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ভ্রমণের জন্য খরচ করতে হবে ১০০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা (উত্তর) থেকে উত্তরা (মধ্য) এবং উত্তরা (দক্ষিণ) স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। এছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা (উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০টাকা। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিপূর্ণ চালু হতে কত সময় লাগবে?
ডিএমটিসিএল থেকে জানা যায়, মতিঝিল পর্যন্ত আগামী ২০২৪ সালের শেষদিকে চালুর কথা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আগারগাঁও থেকে কমলাপুর রুটে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে। তখন চব্বিশটি ট্রেন চলবে পুরোদমে। ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে ৩৮ থেকে ৪০ মিনিট।
ডিএমটিসিএল সূত্রে আরও জানা যায়, মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি করার পর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পথে উত্তরা (উত্তর - দিয়াবাড়ি),উত্তরা (মধ্য), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী,মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও মোট নয়টি স্টেশন রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ৭টি। বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। এছাড়াও কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে ২৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়া ৫০% কমানোর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
১ বছর আগে