দ্বীপ ভ্রমণ
ভিয়েতনামের হা লং বে দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ: ঘুরে আসুন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা মেলে এশিয়া ভ্রমণে। ভ্রমণবান্ধব এই মহাদেশে ভিন্ন সংস্কৃতির জনপদ যেমন রয়েছে,ঠিক তেমনি রয়েছে ঝর্ণাস্নাত শান্ত পাহাড়,প্রাণবন্ত রেইনফরেস্ট ও আদিম সৈকত। তবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনামে এমন কিছু প্রাকৃতিক নিদর্শন রয়েছে,যা দেখার জন্য কেবল এই দেশেই বারবার ফিরে আসতে হবে। তারমধ্যে অত্যাশ্চর্য দর্শনীয় স্থানটি হলো হা লং বে,আর বিশ্ব পরিব্রাজকদের এই জনপ্রিয় গন্তব্য নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন,বিস্তারিত ভ্রমণ বৃত্তান্তের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কোন বিষয়গুলো হা লং বে’কে অন্যান্য বিশ্ব পর্যটনকেন্দ্র থেকে আলাদা করেছে
হা লং বে দ্বীপপুঞ্জের ভৌগলিক অবস্থান
উত্তর-পূর্ব ভিয়েতনামের কোয়াং নিন প্রদেশে অবস্থিত হা লং বে। উপসাগরটি কোয়াং ইয়েন শহর থেকে শুরু হয়ে হা লং ও ক্যাম ফা শহর পেরিয়ে ভ্যান ডন জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে ল্যান হা বে,উত্তরে হা লং শহর এবং পশ্চিমে বাই তু লং বে-এর সঙ্গে এর সীমান্ত।
১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখার এই উপসাগরের প্রায় ১,৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে প্রায় ২ হাজার ছোট দ্বীপ রয়েছে।
আরো পড়ুন: ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
হা লং বে-এর বিশেষত্ব
উপসাগরটির বিশেষত্ব হলো এর নানান আকার-আকৃতির চুনাপাথরের কার্স্ট এবং ছোট দ্বীপগুলো। একে ঘিরে বিশাল অঞ্চলগুলোর প্রত্যেকটিরই ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ু সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলো একই রকম।
১৯৬২ সালে ভিয়েতনামের সংস্কৃতি,খেলাধুলা ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বে’টিকে একটি ‘বিখ্যাত জাতীয় ল্যান্ডস্কেপ স্মৃতিচিহ্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
বিশ্ব জুড়ের শৈল্পিক মূল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অঞ্চলটি ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি হা লং বেকে তার স্বতন্ত্র ভূতাত্ত্বিক মূল্যের জন্য স্বীকৃতি দেয়।
২০১২ সালে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন আনুষ্ঠানিকভাবে উপসাগরটিকে প্রকৃতির নতুন ৭ আশ্চর্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে।
আরো পড়ুন: তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
হা লং বে ভ্রমণে কি কি দেখবেন আশ্চর্য কয়েকটি গুহা
এখানকার রহস্যময় গুহাগুলোর বর্তমান আকৃতি পেতে লেগেছে লাখ লাখ বছর। দানবীয় আকার ছাড়াও,গুহাগুলোর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে স্ট্যালাগ্মাইট এবং স্ট্যালাক্টাইট।
স্ট্যালাক্টাইট বা উষ্ণ প্রস্রবণ হলো এক ধরনের খনিজ গঠন, যা গুহার ছাদ থেকে বরফের মতো জমাট বেঁধে ঝুলে থাকে। মূলত গুহার চুনাপাথরের ছাদ থেকে পানি ঝরার সময় চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে এগুলো তৈরি হয়।
অপরদিকে,স্ট্যালাগ্মাইটও একই ধরণের খনিজ গঠন;পার্থক্য শুধু এই যে,এই শিলাকৃতির গঠনগুলো গুহার মেঝে থেকে উর্ধ্বমুখী হয়ে বৃদ্ধি পায়। অনেকটা সুন্দরী গাছের শ্বাসমূলের মতো;তবে দেখতে বরফাকৃতির।
শুধুমাত্র এই খনিজ গঠনগুলো কাছ থেকে দেখার জন্যই এখানে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পর্যটক।
তন্মধ্যে,রঙিন স্ট্যালাক্টাইট দেখা যায় থিয়েন কুং গুহায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় অত্যাশ্চর্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে সুং সট এবং ডাউ গো গ্রোটো গুহা দুটি। কায়াকিংয়ের জন্য উৎকৃষ্ট হচ্ছে লুওন গুহা। গুহার একদম ভেতর থেকে সূর্যালোক দেখতে যেতে হবে ত্রিন নু গুহায়। মেজ কেভ সত্যিই দর্শনার্থীদের গোলক ধাঁধায় ফেলে দেয়। সেই সঙ্গে গুহার দেয়ালে আলোর প্রতিফলনের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ পর্যটকদের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে খেলা করে|
আরো পড়ুন: নেপালের অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে
ইন্দোনেশিয়ার বাটাম দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের অকৃত্রিম মেলবন্ধনের সান্নিধ্য মিলে এশিয়ার দ্বীপদেশ ভ্রমণে। নিত্য জীবন ধারণের প্রতিচ্ছবিগুলো একই থাকলেও এক ভিন্ন অনুভূতির পরিস্ফুটন ঘটে সাগর পাড়ের শহরগুলোতে। কোথাও বা জনাকীর্ণ অত্যাধুনিক বিপণি জুড়ে চির ব্যস্ততা,কোথাও অতিকায় উচ্চতায় নিঃসীম নিরবতা। সব কিছু ছাপিয়ে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো। বিশেষ করে গন্তব্য যখন ইন্দোনেশিয়ার বাটাম দ্বীপ তখন উপকূলবর্তী পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেখার নেশাটা অদম্য হয়ে ওঠে। কেননা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই শহর বেশ স্বল্প খরচে একদিনেই ঘুরে শেষ করা যায়। চলুন জনপ্রিয় এই দ্বীপাঞ্চলের ভ্রমণ বৃত্তান্ত বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাটাম দ্বীপের অবস্থান ও বিশেষত্ব
সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ শহর বাটাম। সিঙ্গাপুর প্রণালি ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটারের দূরত্বে সিঙ্গাপুর থেকে পৃথক করেছে ভূ-খণ্ডটিকে। দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের শিল্প ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। পরিবহনসহ বাণিজ্য ও যোগাযোগ নীতিমালায় শিথিলতার কারণে তিন দেশের গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেলের একটি অংশ এই বাটাম। বালি ও জাকার্তার পর ইন্দোনেশিয়ার ব্যস্ততম প্রবেশ বন্দরগুলোর মধ্যে এর অবস্থান তৃতীয়।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডের ফুকেট ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাটামের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
.
ব্যারেলাং ব্রিজ
রেম্পাং,গালাং ও ব্যারেলাং বাটাম-এই তিন দ্বীপকে সংযুক্ত করে গঠিত হয়েছে এই নান্দনিক সেতু। রিয়াউ দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ধরনের ছয়টি সেতুর এক দীর্ঘ শৃঙ্খল এই ব্যারেলাং ব্রিজ। সমগ্র ব্যারেলাং অঞ্চলটি ৭১৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। সেখানে সেতুর এক প্রাপ্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং পুরোটা অতিক্রম করতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লাগে।
নোংসা
বাটামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রায় পুরোটাই দখল করে আছে নোংসা অঞ্চলটি। এখানকার সৈকত স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। এখান থেকে নৌকা ভ্রমণ করে যাওয়া যায় অদূরেই পুত্রী দ্বীপে। এছাড়া নোংসা ভূ-খণ্ডেই রয়েছে ম্যানগ্রোভ পান্ডাং তাক জেমু। এটি মূলত একটি ম্যানগ্রোভ বন,যাকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে অপূর্ব একটি রিসোর্ট। বেশ পরিপাটি,কারুকার্যময় এবং গ্রামীণ পরিবেশের আমেজ থাকায় এটি ভ্রমণপিপাসুদের অবকাশ যাপনের জন্য উৎকৃষ্ট জায়গা।
রায়া মসজিদ
আসল নাম গ্র্যান্ড,যেটি ইন্দোনেশিয়ার মেদানে অবস্থিত বাটাম দ্বীপের বৃহত্তম মসজিদ। এটি গড়ে তোলা হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য,ভারতীয় ও স্প্যানিশ স্থাপত্য শৈলীর সন্নিবেশে। এর অষ্টভূজাকার আকৃতি এবং চারপাশ জুড়ে বিস্তৃত শাখাগুলো মসজিদটির বিশেষ আকর্ষণ। দেয়াল, ছাদ, স্তম্ভ, খিলান ও পৃষ্ঠ; সব জায়গায় ফুল ও গাছপালার অলঙ্করণের জয়জয়কার।
আরো পড়ুন: হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
মহা বিহার দূতা মৈত্রেয় মন্দির
উত্তর সুমাত্রার মেদানে অবস্থিত এই মন্দির গোটা ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম আধুনিক বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ৪ দশমিক ৫ হেক্টর জায়গার ওপর। বুদ্ধ মৈত্রেয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন স্বরূপ তৈরি করা হয়েছিল মঠটি। চীনা সম্প্রদায়গুলোর মাঝে এটি লাফিং বুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এর ভেতর রয়েছে ড্রাগন,পৌরাণিক প্রাণীদের বিভিন্ন মূর্তি ও ভাসমান চাপাতার একটি ফোয়ারা।
অত্যাধুনিক শপিংমল
বাটাম পর্যটনের এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এর অভিজাত শপিংমলগুলো। তন্মধ্যে ৮ দশমিক ৯ একর আয়তনের নাগোয়া হিল মার্কেটটি সুলভ মূল্যে খুচরা পণ্যের জন্য সুপরিচিত। অনেকেই শুধু এখান থেকে মার্কেট করবেন বলেই বাটামে আসেন।
এছাড়াও রয়েছে ফেরি টার্মিনালের কাছাকাছি অবস্থিত মেগামল বাটাম সেন্টার। সাগর পাড়ে নজরকাড়া স্থাপনাশৈলীর মল দেখার অভিজ্ঞতা নিতে অনেকে ভিড় জমান এখানে।
দ্বীপের ঠিক কেন্দ্রে থাকায় বাটাম সিটি স্কোয়ার বা বিটিএস এখানকার পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় শপিং গন্তব্য।
আরো পড়ুন: দার্জিলিংয়ের টংলু ও সান্দাকফু যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাটাম ভ্রমণের সেরা সময়
এখানে ঋতুর খুব একটা পরিবর্তন হয় না। বিষুব রেখায় ও সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় অধিকাংশ সময়েই সর্বত্র জুড়ে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই প্রকৃতিগতভাবেই বেশিরভাগ সময় গরম থাকে। আর বৃষ্টির মৌসুম মানেই একটানা মুষলধারে বৃষ্টি।
মৌসুম যেমনই হোক না কেন,বাটাম ভ্রমণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম। ফেরি টার্মিনাল থেকে শুরু করে শপিংমল সব জায়গায় ভয়াবহ ভিড় থাকে। তাছাড়া এই সময়ে সবকিছু দামও একদম লাগাম ছাড়া থাকে। তাই ভ্রমণের অফ-পিক সময় বেছে নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: নেপালের অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাটাম ভ্রমণের জন্য পর্যটন ভিসা নেওয়ার উপায়
বাংলাদেশি পর্যটকরা তিনভাবে বাটাম যেতে পারেন। প্রথম উপায় হলো সরাসরি ইন্দোনেশিয়ার সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে,আর অপর দুটি হলো সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার ডাবল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে। দ্বিতীয় উপায়ে বাটাম ফেরি টার্মিনালে নেমে ইন্দোনেশিয়ার অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে হবে।
আরো পড়ুন: তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
ভিসার আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· সম্পূর্ণ পূরণকৃত ভিসা আবেদনপত্র
· কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট
· গত ৩ মাসের মধ্যে তোলা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· ফিরতি ফ্লাইট ভ্রমণের অনুলিপি
· অর্থপ্রদানের রশিদ
· ব্যবসা,সম্মেলন বা মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে,বাংলাদেশভিত্তিক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র বা রেফারেন্স চিঠি। সেই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক অংশীদার কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি আমন্ত্রণপত্র।
· গত ৩ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২ হাজার মার্কিন ডলার বা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৩ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১১৯ দশমিক ৪০ বাংলাদেশি টাকা) তহবিলের প্রমাণ
· স্বাস্থ্য অর্থায়ন বা চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধের জন্য সম্মতিপত্রসহ ভ্রমণ বিমা |
আরো পড়ুন: ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়ার বাটাম যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে বাটামে সরাসরি প্লেনে যেতে ১০ থেকে ১৬ ঘণ্টা লাগবে। এছাড়া সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ঢাকার নিয়মিত ফ্লাইট আছে,যেগুলোতে সময় লাগবে সোয়া ৪ ঘণ্টা।
তবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়াতে নেমে সেখান থেকে বাটামের ফেরি ধরা। সমুদ্র ভ্রমণের সুযোগ থাকায় এই যাত্রা আনন্দায়কও বটে। সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা লাগে বাটাম সেন্টার আন্তর্জাতিক টার্মিনালে পৌঁছাতে। ঝকঝকে এই আধুনিক টার্মিনালেই ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দ্বীপ ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
গোটা এশিয়া জুড়ে বেশ সমাদৃত পর্যটন স্থান হওয়ায় বাটামে প্রচুর হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। হোটেল ভাড়াও প্রায় সিঙ্গাপুরের অর্ধেক। তিন হাজার টাকার মধ্যেই পাঁচতারকা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। ট্রিপ অ্যাডভাইজার,অ্যাগোডা,বুকিং ডট কম থেকে অগ্রিম রুম বুক করে রাখা ভালো।
উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানে জনপ্রিয় সামুদ্রিক খাবার। স্থানীয় খাবারগুলোর চেয়ে এগুলোর দাম বেশি হলেও তা সিঙ্গাপুরের তুলনায় অনেক সস্তা।
অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে গাজরের কেক এবং মরিচ ও মিষ্টি সয়া সসের সঙ্গে কেওয়ে টিও কাই পু। এটি মূলত ডিম,মাংস,মুরগি বা সামুদ্রিক খাবারের টপিংস দিয়ে এক ধরনের বিশেষ নুডলস।
আরো পড়ুন: সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
বাটামের আভ্যন্তরীণ ভ্রমণের সম্ভাব্য খরচ
ফেরিতে অভিবাসন শুল্কসহ বাটাম যাওয়া-আসায় খরচ পড়বে জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। দ্বীপের ভেতর আবাসন বাবদ খরচ হতে পারে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ার মধ্যে। এই খরচ প্রায় ৪৫৪ থেকে ৯০৮ টাকার (১ ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া = ০ দশমিক ০০৭৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান।
প্রতি বেলা খাবারের জন্য ব্যয় করতে হবে ২৫ থেকে ৫০ হাজার রুপিয়া (১৮৯ থেকে ৩৭৮ টাকা)। এভাবে প্রতিদিনের খাবার বাবদ ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া (৭৫৭ থেকে ১ হাজার ১৩৫ টাকা) বাজেট রাখা যেতে পারে।
শহরের ভেতরে যাতায়াতের জন্য বাজেট রাখতে হবে দিনপ্রতি ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ রুপিয়া। এই বাজেট প্রায় ১ হাজার ৮৯১ থেকে ২ হাজার ২৭০ টাকার সমতূল্য।
আরো পড়ুন: বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ভ্রমণকালীন কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা
· মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর বা ইন্দোনেশিয়া যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন; অভিবাসনের প্রয়োজনীয় প্রতিটি কাগজপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। বিশেষ করে বাংলাদেশে ফেরার বিমান টিকিট,হোটেল বুকিং স্লিপ এবং পর্যাপ্ত ডলারের এন্ডোর্সমেন্ট।
· শহরের ভেতরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাতায়াতের জন্য নিরাপদ উপায় হচ্ছে গ্র্যাব এবং গোজেক রাইডিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করা। এছাড়া ট্যাক্সি ক্যাবের তুলনায় ভ্যান ভাড়া করাটা অধিক সাশ্রয়ী।
· শীতের সময়েও দিনের বেলা রোদের তীব্রতা থাকে। তাই সঙ্গে হালকা পোশাক, সানস্ক্রিন, সানগ্লাস ও হেডক্যাপ রাখা ভালো।
· ব্যাগপ্যাক বহন করা উত্তম, তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অত্যধিক ভারী হয়ে না যায়।
আরো পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
পরিশিষ্ট
ইন্দোনেশিয়ার বাটাম দ্বীপ ভ্রমণ মাঝ সাগরে প্রাণের সরব স্পন্দনের এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে নোংসার আদিম সৈকত এবং ব্যারেলাং ব্রিজের বিস্ময়কর স্থাপত্য যেন অবিনশ্বর স্মৃতিচিহ্নের নামান্তর। সিঙ্গাপুর থেকে স্বল্প দূরত্বের পানিপথ যোগাযোগ থাকায় বাজেট-বান্ধব ভ্রমণের উপযোগী হয়ে উঠেছে গন্তব্যটি। এখানকার থাকা-খাওয়া ও আভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার মূল শহরগুলোর তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকায় আরও চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠেছে সুযোগটি। তাই অতিরিক্ত খরচের চাপ ছাড়াই একটি নিশ্চিন্ত ছুটি কাটানোর জন্য সেরা গন্তব্য এই এশীয় দ্বীপ।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের চিয়াং মাই ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে
মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিধ্বস্ত জলরাশির ঐকতানের সঙ্গে রোদের আলোয় সোনালি বালির মৃদু আলিঙ্গন, এর সঙ্গে সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের মাঝে নিজেকে পরখ করার নেশা কিছুতেই উপেক্ষা করার নয়। গভীর রাতে শীতল সৈকতে আকাশ ভরা তারার সমীপে নিজেকে সপে দেওয়ার মাঝেই যেন চির প্রশান্তি। এই প্রাকৃতিক উপাচারগুলো নিয়ে ভারত মহাসাগরের বুকে মালদ্বীপের প্রতিটি দ্বীপ সরবে জানান দেয় নিজেদের উপস্থিতির কথা। কিন্তু মাফুশি নামের দ্বীপটি যেন আদ্যোপান্ত শব্দহীন এক নৈসর্গ। খুব কম সময়ের মধ্যে মালদ্বীপের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হওয়া এই দ্বীপটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।
মাফুশি দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে ২৬ দশমিক ০৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মাফুশি দ্বীপের অবস্থান। মাফুশি দ্বীপপুঞ্জের এই মধ্যমণির ১ হাজার ২৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৬৫ মিটার প্রশস্ত। অ্যাটলে অবস্থিত বাকি দ্বীপগুলোর তুলনায় এটি সব থেকে বড়।
মাফুশি দ্বীপ ৩টি এলাকায় বিভক্ত। স্থানীয় অধিবাসীদের এলাকা, পর্যটন এলাকা এবং দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে কারাগার এলাকা। পর্যটন এলাকাটি আবার বিকিনি সৈকত, পাবলিক সৈকত এবং ওয়াটার-স্পোর্টস সৈকতে বিভক্ত।
মাফুশি দ্বীপের ইতিহাস ও নামকরণ
এই দ্বীপবাসীরা মাছ ধরা সম্প্রদায় হিসেবে সুপরিচিত ছিল। দু-একজন পর্যটকের আনাগোণা হওয়া শুরু করতেই এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কম খরচে গেস্টহাউস পাওয়ার জন্য মাফুশি দ্বীপের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। প্রথম দিকে এই কারণেই স্থানীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
২০০৪ সালের বিধ্বংসী সুনামি দর্শনীয় জায়গাটির অনেক স্থাপনাই নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যটনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
‘মাফুশি’ নামটির উৎপত্তি মালদ্বীপের শব্দ ‘মা’ (maa) এবং ‘ফুশি’ (Fushi) থেকে। ‘মা’-এর অর্থ ‘বড়’ এবং ‘ফুশি’-এর অর্থ ‘দ্বীপ’। সমগ্র দেশের অন্যান্য অধ্যুষিত দ্বীপের তুলনায় এই দ্বীপটি বড় বলে এরকম নামকরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণের উপায়
মালদ্বীপের পর্যটন ভিসা
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যেতে হলে প্রথমেই মালদ্বীপের ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশিদের মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য আগমনী ভিসা দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি পর্যটকদের দেশ ছাড়ার পূর্বে পর্যটন ভিসার জন্য কোনো রকম আবেদনের প্রয়োজন হয় না। তবে মালদ্বীপের বিমান বন্দরে অভিবাসন ছাড়পত্র পেতে কিছু প্রাথমিক শর্ত রয়েছে যেগুলো আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হয়। শর্তগুলো হলো:
- কমপক্ষে ১ মাস মেয়াদী একটি বৈধ পাসপোর্ট। এমনকি শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য।
- আসা-যাওয়ার টিকিট, অগ্রীম হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণপত্রসহ মালদ্বীপে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রমাণ অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত ভিসা স্পনসরশিপ।
- পূরণকৃত ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ফর্ম, যা ফ্লাইটের সময় ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে হয়। https://imuga.immigration.gov.mv/ethd লিঙ্কের মাধ্যমে ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
এই শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে মালদ্বীপের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিনামূল্যেই বাংলাদেশিরা পেতে পারেন। এই পর্যটন ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন।
ঢাকা থেকে মাফুশি দ্বীপ যাতায়াত
ঢাকা - মালে রাউন্ড ট্রিপ বিমান ভাড়া নির্ভর করবে কিছু বিষয়ের উপর যেমন এয়ারলাইন্স কোম্পানি, বুকিংয়ের সময়, বিভিন্ন অফার, ইত্যাদি।
মালে থেকে মাফুশি দ্বীপ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য স্পিডবোট বা ফেরিতে যেতে হবে। স্পিডবোটের ভাড়া লাগবে ২৫ মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৭৫০ টাকা। এভাবে দ্বীপে পৌছতে প্রায় ৪৫-মিনিট সময় লাগবে। মালে শহরের ব্যাঙ্ক অফ সিলনের সামনে থেকে ৬ নম্বর জেটি থেকে পাওয়া যাবে এই স্পিডবোটগুলো।
আর সরকারি ফেরিগুলো শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলে এবং ভ্রমণপথে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় নেয়। ফেরিতে টিকেট খরচ নিতে পারে জনপ্রতি ২ মার্কিন ডলার বা ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়
মালদ্বীপের অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মতো এখানেও সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে বেশি ভিড় থাকে। এই শুষ্ক মৌসুমে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে এবং সামগ্রিকভাবে কম আর্দ্রতা থাকায় ভ্রমণের পরিবেশ বেশ মনোরম হয়। আর এরপর থেকে; অর্থাৎ মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘলা থাকে।
কখনো কখনো ঝড়ে কবলে পড়তে হয় বলে এই সময়টি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। তবে এই সময়গুলোর সবচেয়ে সেরা সুবিধা হচ্ছে- দ্বীপে ভ্রমণ খরচ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম থাকে।
৭ মাস আগে
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শুধুমাত্র কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোই নয়, ফেনিল সাগরের মাঝে কোনো দ্বীপ ভ্রমণ করা শরীর ও মন দুটোর জন্যই স্বাস্থ্যকর। দ্বীপের সৈকতে এসে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ যে কোনো মনের অস্থিরতাকে শান্ত করতে সক্ষম। তাছাড়া দ্বীপের সুস্থ কোলাহল অতি বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের ভেতর থেকেও বের করে আনতে পারে শিশুসুলভ চঞ্চলতা। দ্বীপদেশ না হলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের আঙ্গিনার চরগুলো এই অভিজ্ঞতার ষোল আনাই পূরণ করতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে সেরকম একটি অকৃত্রিম জায়গা- নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের নানা দিক।
নিঝুম দ্বীপ: সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ
বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পড় গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নিঝুম দ্বীপের নামকরণ
জনবসতি গড়ে ওঠার একদম শুরুর দিকে এই দ্বীপের নাম ছিল চর ওসমান ও বাউল্লার চর। লোকমুখে শোনা যায়, এখানে বসতি গড়া প্রথম মানুষটির নাম ওসমান। তিনি ছিলেন একজন বাথানিয়া; আর তখন তার নামানুসারেই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল। শুধু সৈকতই নয়, দ্বীপের মাটিও বালুতে চিকচিক করতো। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো বালুর ঢিবি বা টিলার মতো জায়গা। আর এই কারণেই বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চর শব্দগুলো এই দ্বীপের নামের সঙ্গে জুড়ে যায়। এমনকি এখনও নিঝুম দ্বীপের অবস্থান জানার জন্য স্থানীয়দেরকে বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হয়।
প্রথম বসতি গড়ের ওঠার সময় চরে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। চিংড়ির স্থানীয় নাম ইছা; তাই স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ইছামতির চরও বলতো। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি একদম জনমানব শূন্য হয়ে যায়। ঝড় শেষে হাতিয়ার তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে পরিদর্শনে গিয়ে নাম বদলে দ্বীপের নাম নিঝুম রাখেন।
নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিঝুম দ্বীপের বিশেষত্ব হচ্ছে চিত্রা হরিণ ও শীতকালের অতিথি পাখি। একসঙ্গে এতো চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের ডাক শিরদাঁড়া দিয়ে রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে।
পাখি, হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। আগে থেকেই কোনো স্থানীয় গাইডকে বলে রাখা যেতে পারে। তাহলে সঠিক জায়গায় যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেরাই গাইডের কাজ করে। ওরাই সাধারণত পর্যটকদের ম্যানগ্রোভ বনের হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানকার সেরা জায়গা নামা বাজার সৈকত। নামা বাজার থেকে পায়ে হেটে ১০ মিনিটের মধ্যেই সৈকতে পৌঁছা যায়। বারবিকিউয়ের জন্যও এ জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়।
নিঝুম দ্বীপ ছাড়া পাখিদের মেলা বসে পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চরে। পড়ন্ত বিকেলে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে নৌকা করে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ। ট্রলার রিজার্ভ করা হলে মাঝিই হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া পড়তে পারে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য কমলার দ্বীপ সেরা জায়গা। জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে সাগর ঘোরার জন্য ৪০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার বোট ভাড়া দেয়া হয়।
শীতের অতিথি পাখি দেখার জন্য এখানকার আরো একটি দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চরের দক্ষিণে নতুন সৈকতটিই ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চর ঘুরে আসতে হলে ট্রলার ভাড়া পড়বে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। নিঝুম দ্বীপ থেকে একটু দূরের পথে দেখা মিলবে ভোলার ঢালচর আর চর কুকরি-মুকরি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়
নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য্যে আপাদমস্তক অবগাহন করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে শীত ও বসন্তকাল। হেমন্তের শেষলগ্নে তথা অক্টোবর থেকে এপ্রিলের ঠিক মাঝামাঝি সময়টাই উপযুক্ত সময়। এ সময় রাস্তাঘাট শুকনো থাকায় আশেপাশের যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে। এছাড়া হরিণ দেখার জন্য বনের পথে হাটতে সুবিধা হবে।
বর্ষাকালে গেলে হাটু সমান কাদায় পুরো দ্বীপ হেটে ঘুরতে হবে। যানবাহন নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে ভোসন রসিকদের জন্য সুখবর হল যে এ সময়টাতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় সেখানে। এছাড়া বছরের বাকিটা সময় মেঘনা নদী ও সাগর অনেক উত্তাল থাকে।
ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়
সাগরের মাঝখানে হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রার শুরুটা সড়ক পথে হলেও শেষব্দি জলপথ ব্যবহার করতেই হবে। বাসে চড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল অথবা ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাসের ধরণের উপর ভিত্তি করে এসব বাসে ভাড়া পড়তে পারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন: বনভোজনের জন্য ঢাকার কাছেই ১০টি মনোরম জায়গা
১ বছর আগে