উইন মিন্ট
দুর্নীতির দায়ে সু চির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা, ৩৩ বছরের কারাদণ্ড
সেনা শাসিত মিয়ানমারের একটি আদালত শুক্রবার দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় সু চিকে টানা ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একজন আইনি কর্মকর্তা বলেছেন, শুক্রবার শেষ হওয়া ফৌজদারি মামলাটি দুর্নীতি বিরোধী আইনের অধীনে পাঁচটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মামলায় সু চিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
তিনি জানান, এর আগেই সাতটি দুর্নীতির মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এগুলোতে সু চিকে মোট ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
৭৭ বছর বয়সী সু চি অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি ও নিজের কাছে রাখা, করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ লঙ্ঘন, দেশের সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন, রাষ্ট্রদ্রোহ ও নির্বাচনে জালিয়াতিসহ আরও কয়েকটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
সু চির সমর্থক ও স্বাধীন বিশ্লেষকরা বলছেন, সু চি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মূলত সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার একটি প্রচেষ্টা এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে সু চিকে রাজনীতি থেকে সড়ানোর অপচেষ্টা।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কারচুপি মামলায় সু চির ৩ বছরের কারাদণ্ড
তার সরকারের প্রধান ছিলেন সু চি। উইন মিন্ট, তার সরকারে প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনিও একই মামলার অপর অভিযুক্ত।
ওই আইনী কর্মকর্তা বলেছেন, সু চিকে চারটি অভিযোগে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে এবং হেলিকপ্টার কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগের জন্য চার বছরের সাজাসহ মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। উইন মিন্টকেও একই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যদিও আসামিরা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার আইনজীবীরা আগামী দিনে আপিল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সু চি ও উইন মিন্ট দুজনেই সুস্থ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন একটি ইমেলে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্তা তার (সু চির) বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করে যাচ্ছে। আর সামরিক বাহিনী যা চাইবে, দেশটির ক্যাঙ্গারু আদালত শাস্তির সেই রায়ই দেবে।’
সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে, আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তা বিবেচনা করব।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির মামলায় সু চির ৫ বছরের কারাদণ্ড
রবার্টসন বলেন, বয়সের কারণে সু চির ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ‘তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সমান’।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার জান্তার প্রহসনমূলক, সম্পূর্ণ অন্যায্য অভিযোগ এবং অং সান সুচির বিরুদ্ধে দোষী সাব্যস্ত করা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শাস্তির সমান। তাকে সারাজীবন কারাগারে আটকে রাখার জন্য এসব করা হয়েছে।’
মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে সু চি ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে প্রায় ১৫ বছর কাটিয়েছেন।
মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান তাকে গণতন্ত্রের জন্য অহিংস সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত করে এবং ১৯৯১ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে সহজেই জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে এবং ১৯৬২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো সত্যিকারের বেসামরিক সরকার গঠন করে।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর ২০১৭ সালের দমন-পীড়নের নৃশংসতাকে উপেক্ষা করে, অবিশ্বাস্যভাবে সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য সু চি সমালোচিত হয়েছিলেন।
তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ২০২০ সালের নির্বাচনে আবার ভূমিধস বিজয় লাভ করে। কিন্তু তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সংসদে তাদের আসন গ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয় এবং তার সরকার ও দলের শীর্ষ সদস্যদের আটক করা হয়।
সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে, কিন্তু স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কোন বড় অনিয়ম খুঁজে পাননি।
২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। সেসময় দেশব্যাপী ব্যাপক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সেসব বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে এবং শিগগিরই এই আন্দোলন সশস্ত্র প্রতিরোধে পরিণত হয়।
সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা একটি বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তালিকা অনুসারে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে দুই হাজার ৬৮৫ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং ১৬ হাজার ৬৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন: সু চির আরও ৪ বছরের কারাদণ্ড
১ বছর আগে