কিন গ্যাং
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পরবর্তী অধ্যায়ে চীন পাশে থাকবে: মোমেন
নবনিযুক্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে তারা বাংলাদেশের ‘উল্লেখযোগ্য’ অর্থনৈতিক অগ্রগতি লক্ষ্য করছেন এবং তার দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার পরবর্তী অধ্যায়ে ‘পাশে থাকবে’।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের আলোচনা খুব প্রয়োজনীয় ও ফলপ্রসূ ছিল। সুখবর হলো চীন আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায়।’
মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনায় অংশ নেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোমেন বলেন, তিনি এবং তার চীনা প্রতিপক্ষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং অর্থনৈতিক পতন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মোমেন বলেন, ‘... বর্তমান পরিস্থিতি (ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে) কাটিয়ে উঠতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাণিজ্য সম্পর্ক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধানের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কারণ বাংলাদেশ চীন থেকে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম মূল্যের রপ্তানির বিপরীতে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও গেজেট প্রজ্ঞাপনের অভাবে তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোমেন
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, চীন মিয়ানমারে কিছু সমস্যা কথা জানায়, যে কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিলম্ব করছে। তবে তিনি (চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আশাবাদী।
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু যদি অমীমাংসিত থেকে যায়, তাহলে তাদের (রোহিঙ্গাদের) ‘র্যাডিক্যালাইজড’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘এসব লোকেরা রাষ্ট্রহীন। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই কারণে, তারা চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের কাছে বিশেষ ব্যবস্থা চেয়েছেন, যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন , ‘অন্তত প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। তিনিও রাজি হয়েছেন।’
বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আতিথ্য করছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা হয়নি।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মারাত্মক দমন-পীড়নের কারণে কয়েকশ’ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
বেইজিংকে ঢাকার সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশ চীনকে জানায় যে তারা সব দেশের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত
মোমেন মঙ্গলবার ভোরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এক-চীন নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি বজায় রাখি। এটি আমাদের নীতি। আমরা সময়ে সময়ে আমাদের সমর্থন (চীনের প্রতি) বজায় রাখব।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, মোমেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাত ১টা ৫৮ মিনিটে অভ্যর্থনা জানান।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মোমেন ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করলেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি বলেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদ্মা সেতুর রেল সংযোগসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানান।
জবাবে মোমেন তার চীনা প্রতিপক্ষকে আরও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকার জন্য আবার আসার আমন্ত্রণ জানান।
মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার চীনা প্রতিপক্ষকে বিদায় জানান।
এর আগে, মোমেন ইউএনবিকে বলেছিলেন যে এটি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফর নয়, তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য গন্তব্যে যাওয়ার পথে এখানে যাত্রাবিরতি করবেন।
কিন গ্যাং, পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি আফ্রিকার পাঁচটি দেশে সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের মাধ্যমে তার মেয়াদ শুরু করেছেন।
‘চীন-আফ্রিকা ব্যাপক কৌশলগত ও সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে গভীরতর করার জন্য’ কিন গ্যাং ২০২৩ সালের ৯ থেকে ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় সফরে ইথিওপিয়া, গ্যাবন, অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, মিশর, আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ও আরব স্টেটস লিগের সদর দপ্তর পরিদর্শন করবেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
১ বছর আগে