যশোর-খুলনাগামী
মধুমতি সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর কালনাঘাট এলাকায় নেই পূর্বের ব্যস্ততা
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর কালনাঘাট ছিল জাঁকজমকপূর্ণ এবং হাঁকডাকে মুখর থাকতো পারঘাটা, সঙ্গে যশোর-খুলনাগামী বাস স্ট্যান্ডও।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হতো এই ঘাট দিয়ে। কিন্তু কালনা ঘাটে মধুমতি সেতু নির্মানের পর এখন সেখানে শুনশান নীরবতা। স্বপ্নের কালনা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে হারিয়ে গেছে ঘাটের চিরচেনা সেই রূপ। বাস টার্মিনালে বা খেয়াঘাটের কোথাও নেই যাত্রীদের পদচারণা। নেই লঞ্চ চালক ও বাসের হেলপারের ডাকাডাকি। ফেরিঘাট এলাকায় এখন আর কোনো বাস স্ট্যান্ড নেই। নেই কোনো পারাপারের খেয়া নৌকা। ফেরি পার হতে আসে না কোনো যানবাহন। ঘাটের ফেরিগুলো অলস পড়ে আছে। এক কথায় বলা যায়- মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্ধশত বছরের ব্যস্ততম সেই ঘাট।
বৃহস্পতিবার সকালে কালনা ঘাট এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এতো দিন মধুমতি নদীতে দাপিয়ে বেড়াতো শতাধিক পারের নৌকা ও যানবাহন পারাপারের চারটা ফেরি। ঘাটের দোকানগুলো অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। ফাঁকা পড়ে আছে সারি সারি খাবারের দোকান। কেউ কেউ মহাসড়কের পাশেই অস্থায়ীভাবে ঝালমুড়ি বা ফুচকা-চটপটির দোকান দিয়েছে। যে কোনো সময়ে তা উচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে। তবে মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় খুশি ঘাট সংশ্লিষ্ট সবাই। কালনা ঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি আনোয়ার হোসেন জানান, গত ১০ অক্টোবর মধুমতি সেতু চালু হওয়াতে মনটা আনন্দে ভরে গেছে, আমরা অনেক খুশি হয়েছি। বহু বছর ধরে যাত্রীদের নানা ভোগান্তি চোখের সামনেই দেখেছি। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করেছে, সে ভোগান্তি এখন আর নেই।
তিনি আরও বলেন, আনন্দের পাশাপাশি আমাদের বোবা কান্নাও আছে। কেননা এখন ঘাটে যাত্রী নেই, আমাদের জীবিকার কোনো ব্যবস্থাও নেই। এতো বছর এই ঘাটে নৌকায় যাত্রী পারাপার করেছি, সেই মায়ায় এখনও ঘাটে আসি। কিন্তু সেতু উদ্বোধনের পরদিন অর্থ্যাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে এখন আর কেউ নৌকায় পার হতে আসে না। এখন সেতু দিয়ে যানবাহনের সঙ্গে পায়ে হেঁটেও মানুষ চলাচল করছে। সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সেতু দর্শণার্থীরা ছাড়া পার হতে কেউ আর ঘাটে আসছে না। বর্তমানে আমরা আমাদের জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তবে আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের জীবিকার যেন কোনো ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য স্বাধীনতা পূর্বকালে কালনাঘাট বর্তমান স্থান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে ছিল। স্বাধীনতার পর লোহাগড়া থেকে কালনা ঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মানের ফলে কালনাঘাট বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয় এবং কালনায় ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হতো এই ঘাট দিয়ে। মধুমতি সেতু চালু হওয়ার পর এ ঘাটের নৌকাগুলির অধিকাংশই অন্যত্র চলে গেছে। যশোর খুলনাগামী বাস গুলি সেতু পার হয়ে ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে ছেড়ে আসছে। অর্থ্যাৎ সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে হারিয়ে গেছে কালনা ঘাটের চিরচেনা সেই রূপ।
আরও পড়ুন: কালনা সেতুর নাম এখন মধুমতি সেতু: সেতুমন্ত্রী
১ বছর আগে