পলো বাওয়া উৎসব
গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসব
‘ঝপ-ঝপা-ঝপ’ শব্দে মুখর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের বিল (দক্ষিণের বড় বিল)। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দিতে দেশে এসেছেন অনেক প্রবাসী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি এসেছে গ্রামের অনেক মেয়েরা। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েক দিন ধরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব শুরু
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব শুরুর আগে সকাল থেকেই গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। বেলা ১১টার দিকে গ্রামের সব বয়সের পুরুষ ও অন্য গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন একসঙ্গে গোয়াহরি গ্রামের বিলে মাছ শিকারে নামেন।
তবে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। এর সঙ্গে কচুরিপানা থাকায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে মাছ শিকারের পরিমাণ কম। তাই পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেওয়া অনেককেই ঘরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকে যুগ যুগ ধরে বুকে ধারণ করে রেখেছেন গোয়াহরি গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা। তাই নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব।
আরও পড়ুন: পর্দা উঠল ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
সোমবার থেকে আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে ওই উৎসব। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই ১৫ দিন বিলে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা।
এজন্য ওই ১৫ দিনের ভেতরে বিলে গ্রামের যে কেউ হাত দিয়ে বা ঠেলা জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে এক সঙ্গে আবারও পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেবে গ্রামবাসী।
এবারের পলো বাওয়া উৎসবে পলোর সঙ্গে সঙ্গে ঠেলা জাল (হাত জাল), উড়াল জাল, চিটকি জাল, কুচাসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকারে অংশ নেয় কয়েক শতাধিক সৌখিন শিকারী।
আরও পড়ুন: ঢাকা লিট ফেস্টে শনিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হবে ‘রিকশা গার্ল’
তবে বিলে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকার হয়েছে অনেক কম। মাছের মধ্যে রয়েছে- বোয়াল, কাতলা, রুই, কার্প, শোল, গণিয়া, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ।
পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে ও দেখতে সোমবার সকাল ৮টা থেকেই গোয়াহরি গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের গ্রামের লোকজন বিলের পাড়ে এসে জমায়েত হতে থাকে।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আসে বিল পাড়ে। শিশুরাও এসেছে ঠান্ডা উপেক্ষা করে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে বার্ষিক ওই পলো বাওয়া উৎসব।
আরও পড়ুন: ‘নাসেক নাসেক’ দিয়ে শেষ হলো দশম ঢাকা লিট ফেস্ট
তবে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো পলো বাইতে পারেননি অনেকেই। তবে মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ঝাঁপিয়ে পড়া শিকারীদের এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ্য ছিল।
মাছ শিকারী সাহিদুর রহমান বলেন, গত বছর ১৫টি মাছ শিকার করেছিলাম। কিন্তু এবার মাত্র একটি মাছ শিকার করেছি।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলম খান বলেন, ছোট বেলায় তিনটা মাছ শিকার করেছিলাম। তা নিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আজ আবার পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে পিঠা উৎসবের মতো উৎসব ছড়িয়ে দিতে হবে: কে এম খালিদ
তাজ উদ্দিন বলেন, বিলে পানি কম থাকায় কেউ মাছ শিকার করতে পারছে, আবার কেউ পারছে না। তবে আমি দুইটি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দ লাগছে।
গ্রামে আসা আত্মীয় সৌখিন মাছ শিকারী শামীম আহমদ বলেন, পলো বাওয়াতে অংশ নিতে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। আর পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে একটি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দই লাগছে।
পাঁচ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসী গোলাম কামরান বলেন, দীর্ঘদিন পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তাই এবারে দেশে এসে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ পেতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর মাছ শিকার করতে পেরে এর পরিধি আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতে ব্যতিক্রমী উৎসব
মাছ শিকার কম হওয়ার ব্যাপারে গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ময়না মিয়া বলেন, দিন বিলের সঙ্গে এলাকার নদী-নালার পানি চলাচল না থাকার কারনে বিলের পানি কমে গেছে। তাছাড়া কচুরিপানাও আছে প্রচুর। এসব কারণে এবার মাছ কম শিকার করতে পেরেছেন শিকারীরা।
১১ মাস আগে
বিশ্বনাথে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব শুরু
সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক ‘পলো বাওয়া উৎসব’- শুরু হয়েছে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে এই উৎসব শুরু হয়। এতে অংশ নেন গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ।
এই উৎসব আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে। কেননা গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই ১৫দিন বিলে মাছ ধরায় আটল (নিষেধাজ্ঞা) নেই।
আরও পড়ুন: পর্দা উঠল ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। পানি ও কচুরিপানা বেশি না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন গ্রামবাসী।
শিকারকৃত মাছের মধ্যে ছিল- বোয়াল, শোল, মিরকা, কার্পু, বাউশ ও ঘনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
গোয়াহরি গ্রামের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু এবার বিলে মাছ বেশি থাকায় এলাকাবাসী মিলে এসময় পলো বাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আগামী ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে পেলান জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।
পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলের পারে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপঝপ পলো বাওয়া।
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এ উৎসবে গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুষ অংশ নেন।
সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় কাটান।
এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পাড়ে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্মীয়- স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও ছেলে-বুড়ো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। বিল থেকে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি মাছ শিকার হয়েছে।
গোয়াহরি গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশগ্রহণ করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছে।
মাদরাসা শিক্ষক গোয়াহরি মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদরাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরেছি তাই আমার খুব আনন্দ লাগছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজামান বলেন, আমি পলো বাওয়ায় অনেক বছর দেখিনি। আমার ভাগ্য ভাল এবার এ উৎসব দেখতে পারলাম। আমার খুবই ভাল লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতে ব্যতিক্রমী উৎসব
সারাদেশে পিঠা উৎসবের মতো উৎসব ছড়িয়ে দিতে হবে: কে এম খালিদ
১ বছর আগে