দৌলতপুর ইউনিয়ন
বিশ্বনাথে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব শুরু
সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক ‘পলো বাওয়া উৎসব’- শুরু হয়েছে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে এই উৎসব শুরু হয়। এতে অংশ নেন গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ।
এই উৎসব আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে। কেননা গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই ১৫দিন বিলে মাছ ধরায় আটল (নিষেধাজ্ঞা) নেই।
আরও পড়ুন: পর্দা উঠল ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। পানি ও কচুরিপানা বেশি না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন গ্রামবাসী।
শিকারকৃত মাছের মধ্যে ছিল- বোয়াল, শোল, মিরকা, কার্পু, বাউশ ও ঘনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
গোয়াহরি গ্রামের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু এবার বিলে মাছ বেশি থাকায় এলাকাবাসী মিলে এসময় পলো বাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আগামী ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে পেলান জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।
পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলের পারে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপঝপ পলো বাওয়া।
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এ উৎসবে গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুষ অংশ নেন।
সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় কাটান।
এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পাড়ে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্মীয়- স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও ছেলে-বুড়ো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। বিল থেকে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি মাছ শিকার হয়েছে।
গোয়াহরি গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশগ্রহণ করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছে।
মাদরাসা শিক্ষক গোয়াহরি মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদরাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরেছি তাই আমার খুব আনন্দ লাগছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজামান বলেন, আমি পলো বাওয়ায় অনেক বছর দেখিনি। আমার ভাগ্য ভাল এবার এ উৎসব দেখতে পারলাম। আমার খুবই ভাল লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতে ব্যতিক্রমী উৎসব
সারাদেশে পিঠা উৎসবের মতো উৎসব ছড়িয়ে দিতে হবে: কে এম খালিদ
১ বছর আগে