ভিকি জাহেদ
মেহজাবীন অভিনীত ভিকি জাহেদের ‘তিথিডোর’ নিয়ে কেন এত আলোচনা
ঈদুল আজহা ২০২৪-এর চতুর্থ দিন ২০ জুন চ্যানেল আই প্রাইম ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় ‘তিথিডোর’। টেলিফিল্মটি ছিল রোমান্টিক-কমেডি নির্ভর ঈদ আয়োজনের একটি ভিন্ন পরিবেশনা। ভিকি জাহেদের নির্দেশনায় নাম ভূমিকায় দেখা গেছে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে। তার সাবলীল অভিনয়ে টেলিফিল্মের সংবেদনশীল গল্প স্পর্শ করেছে দর্শকদের মন। মুক্তির পর থেকে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে গোটা সামাজিক মাধ্যম জুড়ে। চলুন, এই হৈচৈ-এর নেপথ্যের কারণটি জেনে নেওয়া যাক-
‘তিথিডোর’ নাট্য বৃত্তান্ত
চিরাচরিত নাট্যশৈলীর বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধারার নাটক নির্মাণে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সুপরিচিত নাম ভিকি জাহেদ। তারই পরিচালনায় টেলিফিল্মটির শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী, আবুল হায়াত, প্রান্তর দস্তিদার, আশা মজিদ রোজী, শামীমা নাজনীন এবং শিশু শিল্পী দিবা সাজ্জাদ।
গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জাহান সুলতানা। এছাড়া টেলিফিল্মের অন্যান্য কারিগরি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল ভিকির পুরনো টিম। তাদের মধ্যে চিত্রগ্রহণে ছিলেন বিদ্রোহী দীপন এবং সম্পাদনা, ভিএফএক্স, রঙ ও আবহ সঙ্গীত বিন্যাসে কাজ করেছেন অর্ণব হাসনাত।
আরও পড়ুন: ইতালির ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হলো 'ময়না'
তিথিডোর: একজন নারীর জীবনের টানাপোড়েনের গল্প
সামাজিক নানা টানাপোড়েনের মাঝে নিশাত নামের ৩০ বছর বয়সী এক তরুণীর জীবনের মানে খুঁজে পাওয়ার গল্প তিথিডোর। শুরুটা হয় মুষলধারে পড়ন্ত বৃষ্টি দেখার সময় চায়ে সেই বৃষ্টির পানি মিশিয়ে তাতে চুমুক দেওয়া দিয়ে। এমন ভালো লাগা রোমান্টিক দৃশ্য ক্রমশ এগিয়ে ক্লাইমেক্সে উপনীত হয় চরম হতাশায়।
নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য সম্পর্কে জড়াতে দেখে নিশাতের পুরো পৃথিবীটা ধ্বংস হতে শুরু করে। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে বিয়ে সংক্রান্ত বিড়ম্বনায় পরিবারের কাছেও ঠাঁই মেলে না তার। অন্যদিকে বিয়ের মিথ্যে নাটক সাজিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সে একা একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। ধীরে ধীরে বেঁচে থাকার স্পৃহা হারিয়ে ফেলতে থাকে নিশাত।
ঠিক এমন সময়েই আকস্মিকভাবে আবির্ভাব ঘটে এক দেবশিশু- দিবার। নিশাত যে বিল্ডিংয়ে থাকে সে বিল্ডিংয়ে নতুন এসেছে। সব সময় হাসিখুশি থাকা মেয়েটি দেখা হলেই নিশাতের মন খারাপের কারণ জানতে চায়। সে জানায় তার মা বলেছে, মন খারাপ থাকলে জীবনের সব সুন্দর জিনিসগুলোর লিস্ট করতে।
আরও পড়ুন: 'প্রিয় মালতী' হতে যাচ্ছে মেহজাবীন চৌধুরীর প্রথম সিনেমা
নিশাত যখন চূড়ান্তভাবে নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে উদ্যত হয়, তখনি সে জানতে পারে দিবা মরণব্যাধি লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে দিবাকে দেখতে গেলে শিশুটি তাকে বলে, এখন সে আর সেই লিস্ট করতে পারছে না। লিস্টে আরও সুন্দর জিনিস যোগ করতে তার নিশাতের সাহায্য দরকার। এই অনুরোধ রেখে এক সময় চলে মারা যায় শিশুটি। কিন্তু নিশাতকে দিয়ে যায় বেঁচে থাকার অমূল্য নির্যাস।
এই নির্যাসে এক চিমটি টনিক যোগ করে দেয় শামসুর রহমান নামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ। তার ভাষায়- ‘প্রতিটা বয়সেরই একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে।’
তার সঙ্গে কথোপকথনে নিশাত বুঝতে পারে জীবন শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পাওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনটা অনেক বৈচিত্র্যময় এবং অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিসে ভরপুর। আর এই প্রত্যেকটি সৌন্দর্যের মূল্য রয়েছে। এই উপলব্ধির পর সব দুঃখ ভুলে নিশাত আনন্দের খোঁজার মাঝে দিন যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: আসছে তাহসান-মিথিলার ওয়েব সিরিজ ‘বাজি’
দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার চিত্রপট
টেলিফিল্মটির পেছনে ভিকি জাহেদের নির্মাণশৈলী এবং মেহজাবীনের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসায় মুখর দেশের নেটিজেন পাড়া। সাম্প্রতিক সময়ের অভিনেত্রীর অধিকাংশ কাজগুলোর মতো এটিও ছিল গতানুগতিক ধারা বহির্ভূত।
চরিত্রের প্রয়োজনে বিষাদের প্রতিটি দৃষ্টিকোণ ফুটে উঠেছে মেহজাবীনের অভিনয়ে। নারীপ্রধান টেলিফিল্মটির পুরোটাতেই মিশে ছিল নারীত্বের বিষণ্নতার আবহ। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে এরকম কাজের নজির খুব একটা দেখা যায় না। এমনি অনবদ্য পরিবেশনাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন নাট্যপ্রেমীরা। বিশেষ করে নারী দর্শকরা নিশাতের মাঝে অবিকল খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুঃখ-ভারাক্রান্ত বিষয়গুলো অগোচরেই থেকে যায়। মুখে হাসি রেখেও অনেক নারীই দিনের পর দিন বিষণ্নতাকে নীরবে বয়ে বেড়ান। এই টেলিফিল্মটি সেই সব নিঃশব্দ কান্নাকে যেন এক নিমেষে উগড়ে দেয়ার ইন্ধন জুগিয়েছে। সামাজিক মাধ্যম জুড়ে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নারী দর্শকদের মন্তব্যে।
আরও পড়ুন: ঈদুল আজহা ২০২৪ এ মুক্তির অপেক্ষায় কিছু চমকপ্রদ বাংলা নাটক
শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতাগুলো বরাবরই এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মনোকষ্ট যত ঘনীভূত হয়, ততই তা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাছাড়া আত্মহত্যার প্রবণতাও বর্তমান সমাজের একটি ভয়াবহ সমস্যা। এর নিরসনকল্পে অবিলম্বে হতাশার রসদগুলো আলোচনার মঞ্চে নিয়ে আসা জরুরি। ‘তিথিডোর’ যেন তারই এক মাইলফলক নাটকীয় মোড়কে।
সেই ধারাবাহিকতায় মেহজাবীন নিজেও একজন নারী অভিনেত্রী হিসেবে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এই কাজটি করেছেন। এ ধরনের গল্প যত মানব সম্মুখে আসবে তত এ নিয়ে কথা হবে। আর গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধানের মুখ দেখবে।
আর তাই জীবনযুদ্ধে জর্জরিত অনেক নারী দর্শক নিজেদের অনুপ্রেরণার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। বিশেষত সম্পর্কের জটিলতায় জর্জরিত মধ্যবয়স্ক নারীরা ব্যক্ত করেছেন সামাজিক মর্যাদা হারানোর কথা। একদিকে শরীরে বয়সের ছাপের সঙ্গে বাড়তে থাকা মানুষের কটু কথা, অন্যদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের স্বনির্ভরশীলতা নিয়ে বিতর্ক।
আরও পড়ুন: কিরণ রাওয়ের ‘লাপাতা লেডিস’ নিয়ে যে কারণে এত আলোচনা
এই সূত্রে দর্শকদের মন্তব্যে আরও উঠে এসেছে মেয়ে সন্তানের প্রতি মা-বাবাদের বৈষম্যের কথা। তথাকথিত সামাজিক নিয়মের তাড়নায় এই একুশ শতকেও একটি মানব সত্ত্বা হিসেবে নারীদের রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। এমনকি ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকেও মেলে না কাঙ্ক্ষিত আচরণ।
প্রতিটি জীবনমুখী উপাদানের পরিবেশনার পর সুন্দর সমাপ্তিটা শুধু ভালো লাগাই দেয়নি, উৎসাহ জুগিয়েছে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের। মূলত এই বার্তাই পূর্ণতা দেয় একটি নাটকের। টেলিফিল্মটিকে বিশাল সেই অর্জনে ভূষিত করে একজন দর্শক ঐতিহাসিক শ্লোকের বেষ্টনীতে তার মন্তব্য আওড়েছেন এভাবে, ‘দুনিয়ায় মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই আসল।’
শেষাংশ
সব মিলিয়ে ‘তিথিডোর’ ভিকি জাহেদের আরও একটি অনবদ্য নির্মাণ, যা আরও গভীরতা দিয়েছে মেহজাবীন চৌধুরীর বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় নৈপুণ্যে। আর এই নির্মাতা-অভিনেত্রীর জুটির ভূমিকায় প্রাণ পেয়েছে হাজারও নারীর হৃদয় নিঙড়ানো আর্তনাদের গল্প। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে একজন আশাহত নারীর নিঃশব্দ দিনাতিপাতের কেবল অকাট্য পরিবেশনাই নয়, টেলিফিল্মটির সফলতা ছিল একটি ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানো। আর তাই দর্শকরা নিজের জীবনের সঙ্গে শুধু মিলই খুঁজে পাননি, সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে ফিরে খুঁজে পেয়েছেন সঠিক পথটি।
আরও পড়ুন: ঈদুল আজহা ২০২৪ এ বাংলাদেশি যেসব সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়
৪ মাস আগে
আমি কী তুমি: মেহজাবিনকে নিয়ে ভিকি জাহেদের নতুন ওয়েব সিরিজ
নিজের একটি আলাদা দর্শক শ্রেণী তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে পরিবর্তনের হাওয়া দিয়ে চলেছেন নাট্য নির্মাতা ভিকি জাহেদ। যুগের চলমান সম্প্রচার মাধ্যম ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) প্ল্যাটফর্মেও ঘটে চলেছে তার সরব বিচরণ। সেই অবিস্মরণীয় কাজগুলোর সারিতে শামিল হওয়া আরও একটি কাজ ‘আমি কী তুমি’। গত ২৭ জুলাই চ্যানেল আইয়ের ওটিটি আই স্ক্রিনের পর্দায় দুপুর ৩টায় স্ট্রিমিং হয়ে গেলো ওয়েব সিরিজটির। নারীপ্রধান সিরিজটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন মেহজাবিন চৌধুরী। চলুন, সদ্য শুরু হওয়া এই ধারাবাহিকটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আমি কী তুমি: বৈজ্ঞানিক পটভূমির রহস্য গল্প
একদিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আট এপিসোডের সিজনকে খুব সংক্ষেপে বলা যেতে পারে রহস্য গল্প। প্রতিটি এপিসোডে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে রহস্যের জাল বুনে ধীরে ধীরে খোলা হয়েছে জটগুলোকে।
তবে নিজের প্রথাগত থ্রিলার ও সাসপেন্স আবহের সঙ্গে ভিকি জাহেদ এবার যোগ করেছেন বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট।
তিথি নামের একটি মেয়ের জীবনের একটাই লক্ষ্য; আর তা হলো সিনেমার নায়িকা হওয়া। শহরে একের পর এক ঘটতে থাকা নারী হত্যা এবং সিনেমায় কাজ করার ব্যাপারে পরিবারের চাপ কোন কিছুই তার পথের কাঁটা হতে পারে না। কিন্তু একদিন রহস্যময় ক্রিস্টাল বৃষ্টির পর থেকে অদ্ভূত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে তিথির জীবনে। শুধু তাই নয়, পুরো জীবনের মানেটাই বদলে যায় তিথির কাছে।
আরও পড়ুন: ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে এবার বলিউড নায়িকা
এমনি রহস্যে মোড়া জীবনচরিতের চারপাশ জুড়ে চিত্তাকর্ষক এক আবহের সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশের গায়ে সবুজ বলয়রেখা দেখিয়ে। ট্রেলারের সময় থেকেই দৃশ্যটি দর্শকদের মনে একটাই সম্ভাবনার উদয় ঘটায়; আর তা হচ্ছে পৃথিবীতে এলিয়েন আগ্রাসন। কিন্তু তার সত্যতা এই প্রথম সিজনেই যাচাই করা হয়নি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয় সিজনের জন্য।
তবে প্যারালাল বা সমান্তরাল জগতের বিষয়টি এই প্রথমবারের মত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হলো বাংলাদেশি কোনও নাটকে। বাংলাদেশের প্যারালাল ভার্সন; বা সিগমা বাংলাদেশ শব্দ দুটো ইতোমধ্যেই ঠাই করে নিয়েছে দর্শকদের হৃদয়ে।
ট্রেলার বা পোস্টার দর্শন পর্যন্ত ‘আমি কি তুমি’ শিরোনামটিকে ভাবা হয়েছিলো মনস্তাত্ত্বিক অথবা প্রতীকী হিসেবে। কিন্তু তা যে আসলে আক্ষরিক, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে সিরিজটি মুক্তির পর।
কিন্তু এরপরেও টুইস্টে ভরপুর সিজনটি নতুন কিছু রহস্যের বীজ রেখে গেছে দর্শকদের জন্য। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দিয়ে গেছে দ্বিতীয় সিজন দেখার অদম্য আগ্রহ।
ভিকি জাহেদের নৈপুণ্যে নাট্যশাস্ত্রের অভিজাত ষোলকলা
রেডরাম, দ্যা সাইলেন্স ও পূনর্জন্ম-এর দর্শকরা ভিকি জাহেদের অনন্য গল্প বলার সঙ্গে অভ্যস্ত। সেই সঙ্গে বিদেশি গল্প ও সিনেমা অনুসরণের ব্যাপারটিও জড়িয়ে আছে তার নাটক নির্মাণের সঙ্গে। কিন্তু এই অনুসরণ তাকে নগ্ন অনুকরণের দিকে ঠেলে দেয়নি। বরং তাকে সাহায্য করেছে নাট্যশাস্ত্রের অভিজাত উপাদানগুলোকে আবিষ্কার করতে এবং তা রপ্ত করতে। আর তারই প্রভাব দেখা গেছে তার প্রতিটি কাজে।
২০১৬-এর সেই ‘মোমেন্ট্স’ শর্টফিল্ম থেকে শুরু করে এই ‘আমি কী তুমি’ ওয়েব সিরিজ পর্যন্ত গল্প দেখানোর ব্যাকরণগুলোর উত্তোরোত্তর আগমন ঘটেছে তার নির্মাণশৈলীতে।
অধিকাংশ কাজে তার অনুসৃত পূর্বসূরীদের কিছুটা ঝলক থাকে। তবে এবার তিনি যেন উজাড় করে পরিবেশন করেছেন আলফ্রেড হিচকক, ডেভিড ফিঞ্চার ও মার্টিন স্করসেজের মত বিশ্বখ্যাত থ্রিলার নির্মাতাদের।
তাছাড়া এর সম্পাদনা এবং ভিজুয়াল ইফেক্টের কাজও বাংলাদেশি নাটকে আগে কখনোই দেখা যায় নি। তিনি দারুণ ভাবে দেখিয়েছেন, কিভাবে কারিগরি বিভাগের অল্প পরিবেশনা দিয়েও বিশ্ব মানের কন্টেন্ট তৈরি করা যায়।
নিজের কন্টেন্ট নির্মাণে যে তিনি কোনও রকম তাড়াহুড়ো করেন না, সে ব্যাপারে ভিকি ভক্তরা অবহিত আছেন।
আরও পড়ুন: সাড়ে ষোলো: হইচই ওটিটিতে আফরান নিশোর নতুন ওয়েব সিরিজ
কিন্তু এবার আরও মজবুত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তিনি বেশ পড়াশোনা করে তবেই মাঠে নামেন। সুতরাং দর্শক শুধু নির্মল বিনোদনই পাবেন না, তার নাটক দেখে অনেক চমকপ্রদ বিষয় সম্পর্কে জানবেনও। সেই অবাক করা তথ্যচিত্রের সাক্ষী হওয়ার জন্য হলেও দর্শকরা চোখ রাখতে চাইবেন এই নব্য নির্মাতার কাজে। এরকম বিস্ময়কর তথ্য সমৃদ্ধ কন্টেন্ট নির্মাণ করতে বাংলাদেশে এর আগে কেবল একজনকেই দেখা গেছে। তিনি হলেন প্রয়াত ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ।
১ বছর আগে
ভিকি জাহেদের প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’ বিঞ্জের পর্দায় দেখা যাবে ফেব্রুয়ারিতে
ভিডিও স্ট্রিমিং ম্যানিয়াতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে নতুন এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত করে নিয়েছে বিঞ্জ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোকে বেশ সহজলভ্য করে তুলেছে দেশীয় এই ওটিটি পরিষেবা। এই সুবিধাকে আরও গতিশীল করেছে আন্তর্জাতিক মানের ওয়েব সিরিজগুলোর আঙ্গিকে বাংলা ধারাবাহিকগুলোর নতুন রূপে আবির্ভাব। এই বিবর্তনেরই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হতে চলেছে উদীয়মান পরিচালক ও নাট্যকার ভিকি জাহেদের প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ওটিটি প্লাটফর্ম বিঞ্জের পর্দায় মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এই থ্রিলার সিরিজ নিয়েই আজকের নিবন্ধ।
ভিকি জাহেদ: একজন ভিন্নধর্মী গল্পকথক
মিস্টার টুইস্ট খ্যাত ভিকি জাহেদের জন্ম ১৯৯০ সালের ২৯ আগস্ট রাজধানীতে। জীবনের তিন দশকেই তিনি প্রমাণ করেছেন যে চলচ্চিত্র নির্মাণকে তিনি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। তার পড়াশোনা ছিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ এক প্রকৌশলী হয়ে উঠবেন এমনটাই ছিল কাম্য।
তবে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল থেকে পড়াশোনা শেষ করে সোজা চলে আসেন ভিজুয়াল মিডিয়াতে। ক্যারিয়ারের এই নতুন মোড় নেয়াটা খুব একটা সুখকর ছিল না। নিদেনপক্ষে স্রোতের প্রতিকূলে ক্যারিয়ারের হাল ধরার পাশাপাশি নিজের ও পরিবারের সঙ্গেও অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে।
আরও পড়ুন: চরিত্রটি আমি আড়াই বছর বহন করেছি: ‘গুটি’-তে অভিনয় প্রসঙ্গে বাঁধন
সিনেমা নির্মাণের শুরুটা করেন শর্ট ফিল্মে। বেশ কয়েকটি কাজের পর অবশেষে ২০১৬ সালে শর্ট ফিল্ম 'মোমেন্টস' চলচ্চিত্র জগতের লাইমলাইট পড়ে ২৬ বছর বয়সী ভিকি জাহেদের ওপর। এর জনপ্রিয়তার রেশ ধরে একে একে আরও নির্মিত হয় ‘মায়া’, ‘দেয়েল’, ‘ডার্বিন’, এবং ‘আজ আমার পালা’। এগুলো যে শুধুই তার বিনোদনধর্মী কাজ ছিল তা নয়, এগুলোর মাধ্যমে তিনি নিজেকে যেমন শিখিয়েছেন তেমনি বোঝার চেষ্টা করেছেন তার দর্শকদের।
‘দ্বিতীয় সূচনা’, ‘প্রিয় আদনান’ এবং ‘কায়কোবাদ’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের থ্রিলার জনরাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে থাকেন। অবশেষে ‘চিরকাল আজ’ নাটক এবং ‘পূণর্জন্ম’ ওয়েব ফিল্ম সিরিজ তার কেরিয়ারে এক দীর্ঘ মাইলফলক রচনা করে। বিনোদন জগতের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গে পৃষ্ঠপোষকতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন ভিকি। পুণর্জন্ম-৩ প্রকাশের মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা ভিডিওর মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। এমনকি যারা এতদিন ভিকিকে চিনতেন না, তারাও ফিল্মটি দেখে এর প্রথম অংশগুলো দেখতে গিয়েছে।
এখন বাংলাদেশের অপরাধ, থ্রিলার, অতিপ্রাকৃত এবং সাসপেন্স ঘরানার নাটক-সিনেমা মানেই ভিকি জাহেদ। হলিউডে মডার্ন থ্রিলার জনরার জনক আলফ্রেড হিচককের এই একনিষ্ঠ ভক্ত নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি দর্শকদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। সমালোচকদের কাছেও তিনি গল্প বলার ব্যাপারে একদম নির্মম, সোজা-সাপ্টা এবং স্বতঃস্ফূর্ত।
আরও পড়ুন: ওয়েব সিরিজ-২০২২: কনটেন্টের ‘নায়ক’ নির্মাতা
প্রতিবার স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসার সময় প্রথমেই তিনি একটি মাত্র শব্দ নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। অতঃপর সেই শব্দকে ঘিরে শুরু হয় থিম কল্পনা, যাকে আরও প্রশস্ত করতে চলতে থাকে গবেষণা। গবেষণালব্ধ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবার শুরু হয় গল্পের বিকাশ, যেটি গিয়ে শেষ হয় একটি পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিপ্টে। তিনি তার টিম সদস্যদের ঘন ঘন বদলাতে রাজি নন। বরঞ্চ তার দাবি- একটি নির্দিষ্ট দলের সাথে কাজ করা তার কন্টেন্ট নির্মাণের প্রক্রিয়াকে আরও বেশি সহজ করে তোলে।
বিঞ্জ: অনলাইন দুনিয়ায় একুশ শতকের দূর-দর্শন
এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মটি রবি অ্যাজিয়াটার চাইল্ড কোম্পানি রেডডট ডিজিটালের একটি সার্ভিস, যেটি যাত্রা শুরু ২০২০ সালে। দেশের বৃহত্তম এই ডিজিটাল বিনোদন প্ল্যাটফর্মটির নির্মাতা তথ্য ও প্রযুক্তি পরিষেবা পরিচালনা প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। বিঞ্জের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি আইপিটিভি (ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন) এবং ডিজিটাল বিনোদনের পরিষেবাগুলোকে একটিমাত্র অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটে একত্রিত করেছে।
১ বছর আগে