এরদোগান
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত ১০০
তুরস্কের দক্ষিণ-পূবাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। দেশটির সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা গাজিয়ানটেপে এই এই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
সোমবার এক বিবৃতিতে প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ার কর্মকর্তারা নিহতের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি উল্লেখ করেছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
নিহতদের মধ্যে তুরস্কের মালত্যায় কমপক্ষে ২৩ জন, সানলিউরফায় ১৭ জন, দিয়ারবাকিরে ছয়জন এবং ওসমানিয়েতে আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিরিয়ার সীমান্ত জুড়ে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে, সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬৮
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক টুইটে বলেছেন, ভূমিকম্পে আক্রান্ত এলাকায় আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করতে পারবো।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সুয়েলু জনগণকে বিধ্বস্থ ভবনে প্রবেশ না করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন থেকে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে যে সাত দশমিক আট মাত্রার কম্পনটি স্থানীয় সময় ০৪টা ১৭ মিনিটে (০১:১৭ জিএমটি) গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরতায় আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: পূর্ব ইন্দোনেশিয়া ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল
রাজধানী আঙ্কারা এবং তুরস্কের অন্যান্য শহর এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল।
বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।এতে অনেক মানুষ সেখানে আটকে থাকতে পারে।
শহরের একটি শপিং মল ধসে পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন দিয়ারবাকিরের বিবিসির তুর্কি সংবাদদাতা।
গাজা উপত্যকায় বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুলউফ বলেছেন যে তিনি যে বাড়িতে ছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড কাঁপুনি ছিল।
তুর্কি ভূমিকম্পবিদরা সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি পরিমাপ করেছেন।
তারা বলেছে যে এই অঞ্চলে মাত্র কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় কম্পন আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন: ইরানে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প
১ বছর আগে
ন্যাটোর সদস্যপদ: ফিনল্যান্ডকে হ্যাঁ, সুইডেনের প্রতি নাখোশ এরদোয়ান
ন্যাটের সদস্যপদ পেতে ফিনল্যান্ডকে সমর্থন করতে তুরস্ক এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
অন্যদিকে ইউরোপের আরেকটি দেশ সুইডেনের ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নিবেন না তুরস্ক।কারণ সম্প্রতি সুইডেনে তুরস্ক বিরোধী বিক্ষোভ যাকে ইসলামফোবিয়া হিসেবে বর্ননা করে ইউরোপের দেশটির নাগরিককের তুরস্কে সফরে এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের বাইরে গত সপ্তাহান্তে বিক্ষোভের পর এক বিধর্মী পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানো এবং কুর্দিপন্থী দলগুলো তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পর শনিবার ভ্রমণ সতর্কীকরণ দেয়া হয়। এই ঘটনাগুলো সুইডেনের ন্যাটোর সদস্যপদ অনুমোদন করতে তুরস্কের অস্বীকৃতিকে আরও শক্ত করেছে।
সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার জন্য যৌথভাবে আবেদন করেছে।
রবিবার প্রকাশিত একটি ইভেন্টের পূর্ব-রেকর্ড করা ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তুরস্ক শুধুমাত্র ফিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করতে পারে।
বিলেসিক প্রদেশে তরুণদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এরদোয়ান বলেন, যদি প্রয়োজন হয় আমরা ফিনল্যান্ড সম্পর্কে একটি ভিন্ন বার্তা দিতে পারি। আমরা যখন ফিনল্যান্ড সম্পর্কে ভিন্ন বার্তা দেবো, তখন সুইডেন হতবাক হয়ে যাবে।’
তুরস্ক অভিযোগ করে বলেছে যে কুর্দি গোষ্ঠীগুলোসহ সন্ত্রাসী সংগঠন বা অস্তিত্বের হুমকি হিসাবে বিবেচনা করা গোষ্ঠীগুলোর প্রতি খুব নম্রতা দেখায় স্টকহোম সরকার।
ন্যাটোর নতুন সদস্যদের যোগ করার জন্য তার বিদ্যমান সদস্যদের সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন, কিন্তু এরদোয়ানের সরকার বলেছে যে দেশটি তার শর্ত পূরণ করলেই তারা সুইডেনকে সমর্থন দিতে রাজি হবে।
নাগরিকদের জন্য তার ভ্রমণ সতর্কতায় তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গোষ্ঠী‘ দ্বারা তুর্কি-বিরোধী বিক্ষোভের বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তারা এক দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। তুরস্কের পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
কুর্দিপন্থী গোষ্ঠীগুলো তাদের ন্যাটো সদস্যপদে তুরস্কের অনুমোদন পেতে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের তাদের দেশে পিকেকে-এর কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রুতির প্রতিক্রিয়া হিসাবে সংগঠিত সুইডেনে বিক্ষোভের সময় পিকেকে এবং এর সহযোগীদের পতাকা উড়িয়েছে।
এরদোয়ান বলেছেন যে তিনি সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আপনি যদি সত্যিই ন্যাটোতে প্রবেশ করতে চান তবে আপনি এই সন্ত্রাসীদের হস্তান্তর করবেন। আপনি যদি এই সন্ত্রাসীদের হস্তান্তর না করেন, তাহলে দুঃখিত।’
তিনি বলেছিলেন যে তুরস্ক সুইডেনের কাছ থেকে প্রত্যার্পণ চায় এমন ১২০ জনের একটি তালিকা সরবরাহ করেছে।
জুনে স্বাক্ষরিত সমঝোতায় একটি দাবি ছিল যা নর্ডিক দেশগুলোর যৌথ আবেদনে তুরস্কের ভেটোর কারণে বাদ পড়ে যায়।
ডিসেম্বরে সুইডিশ সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে দেশটি গুলেনের সঙ্গে যুক্ত একটি সংবাদপত্রের প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক বুলেন্ট কেনেসকে হস্তান্তর করতে পারে না,যা তুরস্ককে ক্ষুব্ধ করে।
তুরস্ক ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত মুসলিম ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনের কিছু অনুসারী কথিত পিকেকে জঙ্গিদের প্রত্যার্পণের দাবি করছে।
তুরস্ক স্টকহোমে গত সপ্তাহান্তে উগ্র ডানপন্থী কর্মী রাসমাস পালুদানের কুরআন পোড়ানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যা তিনি শুক্রবার কোপেনহেগেনে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। ডানপন্থী আরেক কর্মী হেগে কুরআনের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর আঙ্কারা ডাচ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়।
আরও পড়ুন: সুইডেন আ. লীগ নেতা ওবায়দুল হকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
গত সপ্তাহের বিক্ষোভের পর এরদোগান সুইডেনকে সামরিক জোটের সদস্যপদ পাওয়ার দৌড়ে সমর্থন আশা না করার জন্য সতর্ক করেছিলেন। তুরস্ক ব্রাসেলসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। যেখানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং ইউরোপে বিক্ষোভ এলাকা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে তারা জেনোফোবিক বা বর্ণবাদী আক্রমণের সম্মুখীন হলে তাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া উচিত।
একটি পৃথক পরামর্শে মন্ত্রণালয়টি তুর্কি নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেমফিস, টেনেসি, নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি টায়ার নিকোলসের পুলিশ কর্তৃক মারাত্মক মারধরের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার তুরস্ক তার ভ্রমণ সতর্কতা জারি করার আগে নর্ডিক দেশগুলো পৃথকভাবে তুরস্কের জন্য সর্বশেষ ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করেছিল। ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন তুরস্কে আসা তাদের নাগরিকদের বড় জমায়েত এড়াতে এবং সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে।
সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ওয়েবসাইটে একটি বার্তায় বলেছে যে আঙ্কারায় সুইডেনের দূতাবাস জনসাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং ইস্তাম্বুলে দেশটির কনস্যুলেট জেনারেলের দর্শনার্থীদের ‘সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্টকহোমে গত সপ্তাহান্তের ঘটনার পর তুরস্কে শুরু হওয়া পাল্টা প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করে সুইডেনের মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা তুরস্কে সুইডিশদের সচেতন করতে চাই যে আরও প্রতিবাদ হতে পারে।’
আরও পড়ুন: সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকার নিন্দা
১ বছর আগে