হিন্ডেনবার্গ
হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভারতের আদানি গ্রুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা ও শর্ট-বিক্রেতা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনকে প্রত্যাখান করেছে। তারা প্রতিবেদনটিকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’, ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘নির্দিষ্ট কিছু ভুল তথ্য’ এ পূর্ণ বলেও অভিহিত করেছে।
হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অন্যান্য অপকর্মের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকে গ্রুপের শেয়ার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
যদিও সোমবার আদানি গ্রুপ কিছু হারানো শেয়ার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এদিন গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজ ৩.২ শতাংশ লাভ করেছে এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ৩.৩ শতাংশ লাভ করেছে। এছাড়া আদানির অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন: সাইকেলে হজযাত্রায় বেনাপোল হয়ে ভারত গেলেন থাই নাগরিক সালাম
রবিবার আদানি গ্রুপের প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিক্রিয়ায় তারা হিন্ডেনবার্গকে ভারত ও দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ করার এবং সিকিউরিটিজ ও বৈদেশিক মুদ্রার আইন ভঙ্গ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
এছাড়া হিন্ডেনবার্গকে অভিযুক্ত করে বলেছে যে এটি আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে এবং এর শেয়ার বিক্রিতে ধস নামানোর চেষ্টা করছে।
আদানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি নিছক কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির ওপর কোনো অযৌক্তিক আক্রমণ নয়, বরং ভারতের ওপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ। কেননা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও গুণমান হলো ভারতের প্রবৃদ্ধির ঐতিহ্য ও ভবিষ্যত উন্নয়নের প্রত্যাশা।’
জবাবে হিন্ডেনবার্গ ফার্ম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে আদানির প্রতিক্রিয়া মূলত তার ত্রুটিগুলোকে নিশ্চিত করেছে এবং তারা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ আরও বলেছে, আদানি গ্রুপ তার উন্নয়নকে ভারতের সাফল্যের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছে।
হিন্ডেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি ভারত একটি প্রতিনিধিত্বকারী গণতন্ত্র এবং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত সমৃদ্ধ একটি উদীয়মান পরাশক্তি। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে ভারতের ভবিষ্যত আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে আটকে রাখা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে জালিয়াতি মানে জালিয়াতি। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি তা করলেও, তা জালিয়াতিই থাকে।’
আরও পড়ুন: দুই ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, ১ পাইলট নিহত
কয়লা খনির মাধ্যমে গৌতম আদানি এবং তার পরিবার ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও তাদের রয়েছে অবকাঠামো, বন্দর, ডেটা ট্রান্সমিশন, মিডিয়া, নবায়নযোগ্য শক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং কৃষিসহ বিভিন্ন শিল্পের ব্যবসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদানির নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার শতাংশ বেড়েছে।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুসারে, গত বছরের শেষের দিকে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে আদানি অ্যামাজনের প্রধান জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তির খেতাব পেয়েছেন।
গত সপ্তাহের লোকসানের পর, ব্লুমবার্গের সূচকে তিনি ৯২.৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে বিশ্বের সপ্তম ধনীর স্থানে রয়েছেন।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদনে বলেছে দুই বছরের তদন্তের ভিত্তিতে তারা ‘আদানি গ্রুপ: কিভাবে বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি কর্পোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলকাঠি নাড়ছে’-শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদনে ৮৮টি প্রশ্ন তালিকাভুক্ত করেছে এবং তারা এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আদানিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এরমধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই গ্রুপের ঋণের মাত্রা, এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কার্যকলাপ, অফশোর শেল কোম্পানির ব্যবহার এবং জালিয়াতির অতীত তদন্ত বিষয়ে।
বিনিয়োগকারীরা বুধবার আদানি-সংযুক্ত শেয়ারগুলো ডাম্প করা শুরু করে এবং আদানি গ্রুপ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারায়।
প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে যে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের ৮৮টি প্রশ্নের একটিও ‘স্বাধীন বা সাংবাদিকতাগত তথ্য অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি।’ এগুলোর অধিকাংশই ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর বা পক্ষপাতদুষ্ট।
সোমবার সিএনবিসি টিভি ১৮-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে আদানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুগেশিন্দর সিং বলেছেন, গ্রুপের মোট ঋণ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলার ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোর থেকে নেয়া।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত
হিন্ডেনবার্গ বলেছিল যে আদানি তাদের উত্থাপিত ৮৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬২টির উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আদানির প্রতিক্রিয়ার মাত্র ৩০ পৃষ্ঠা প্রাসঙ্গিক; বাকি পৃষ্ঠাগুলোয় আদালতের রেকর্ড, সাধারণ তথ্য, কোম্পানির আর্থিক ও ‘অপ্রাসঙ্গিক কর্পোরেট উদ্যোগ’ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের আইনি বিভাগের প্রধান যতীন জলন্ধওয়ালা বলেছিলেন যে গ্রুপটি হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে।
হিন্ডেনবার্গ বলেছে যে তারা তাদের প্রতিবেদনে অটল এবং তারা আদানি গ্রুপের আইনি পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।
১ বছর আগে