জাপানি দুই শিশু
আদালত পরিবর্তন চেয়ে জাপানি দুই শিশুর বাবার আবেদন খারিজ
জাপান থেকে আসা দুই শিশুর বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের আপিল শুনানি ঢাকা জেলা জজ আদলতেই হবে। এই আদালত পরিবর্তন করে তার আপিলের শুনানি হাইকোর্টে করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১২ জুন) বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী।
শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আরও পড়ুন: জাপানি মায়ের রিট: ২ মেয়েসহ বাবা ও ফুপুকে ৩১ আগস্ট হাজিরের নির্দেশ
পরে শিশির মনির জানান, আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছিলেন ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু ইমরান শরীফ আপিল কোর্টে মামলা পরিচালনা না করে জেলা জজ আদালতের পরিবর্তে হাইকোর্টে আপিল শুনানি চেয়ে আবেদন করেন, যা খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
তিনি আরও জানান, আগামী ১৫ জুন ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল শুনানির জন্য দিন ঠিক করা আছে। সেই আদালতেই আপিলের শুনানি হবে।
দুই শিশুর মধ্যে এখন বড়জন মায়ের কাছে ও ছোটজন বাবার সঙ্গে রয়েছে।
এর আগে গত ৯ মার্চ জাপান থেকে আসা দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে ইমরান শরীফের আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ঢাকার জজ আদালতকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো এবং বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়।
তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন।
এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: জাপানি ২ শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ
ওই ঘটনার চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
তিনি ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট একই সালের ২১ নভেম্বর দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং এর আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। তাই আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।
শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরিফ আপিল করেন।
আরও পড়ুন: জাপানি দুই শিশু থাকবে বাবার হেফাজতে: হাইকোর্ট
১ বছর আগে
বাবা ও মায়ের কাছে একদিন করে থাকবে মেয়ে লায়লা লিনা
পারিবারিক আপিল আদালতে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপানি দুই শিশুর মধ্যে ছোট শিশু নাকানো লায়লা লিনা বাবা ও মায়ের কাছে একদিন করে থাকবে। অপরদিকে, পারিবারিক আদালতের দেয়া রায় মোতাবেক বড় মেয়ে মায়ের হেফাজতেই থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক আদালতে এ মামলার আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাবার মামলা খারিজ, দুই সন্তান থাকবে জাপানি মায়ের কাছে
এর আগে জাপানি দুই সন্তান নাকানো লায়লা লিনা ও নাকানো জেসমিন মালিকা এবং তাদের মা-বাবা আদালতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে বিচারক দুই সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন।
এরপর আদালত আপিল শুনানি পর্যন্ত ছোট মেয়ে নাকানো লায়লা লিনা পর্যায়ক্রমে একদিন তার মা নাকানো এরিকোর কাছে এবং আরেকদিন বাবা প্রকৌশলী ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে আদেশ দেন।
গত ২২ জানুয়ারি দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
এরপর গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান জাপানি বংশোদ্ভূত সেই দুই সন্তান তার মায়ের জিম্মায় থাকবে বলে রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রকৌশলী ইমরান শরীফ পারিবারিক আপিল আদালতে আপিল করেছেন। এ বিষয়ে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিমানবন্দরে ২ মেয়েসহ জাপানি নারীকে দেশত্যাগে বাধা
১ বছর আগে