স্বাধীনতা বার্ষিকী
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
দেউলিয়া অবস্থার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ নাগরিক ক্রুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন এবং তারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করার মতো অবস্থায় নেই।
দেশটির অনেক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মযাজক রাজধানীতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অনেক মানবাধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকও তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকে অর্থের অপচয় হিসেবে অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, সমালোচনা সত্ত্বেও সশস্ত্র সৈন্যরা কলম্বোর প্রধান এসপ্ল্যানেড বরাবর প্যারেড করে, নৌবাহিনীর জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা করার সময় ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করে এবং হেলিকপ্টার ও বিমানগুলো শহর প্রদক্ষিণ করে।
ক্যাথলিক ধর্মযাজক রেভ. সিরিল গামিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার স্মরণে এই বছরের অনুষ্ঠানকে একটি ‘অপরাধ ও অপচয়’- বলে অভিহিত করেছেন, দেশ যখন এমন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে হচ্ছে।
গামিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই যে তারা ২০০ মিলিয়ন রুপি (৫৪৮ হাজার ডলার) খরচ করে গর্বের সঙ্গে কোন স্বাধীনতা উদযাপন করতে যাচ্ছে?’
তিনি আরও বলেন, ক্যাথলিক চার্চ উৎসব উদযাপনে জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করাকে ক্ষমা করে না এবং কোনও যাজক সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ খ্রিস্টান, যাদের বেশিরভাগই ক্যাথলিক। সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে চার্চের মতামতকে সম্মান করা হয়।
বিশিষ্ট বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রেভ. ওমালপে সোবিথা বলেন, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কোনো কারণ নেই এবং অনুষ্ঠানটি অন্য দেশে তৈরি অস্ত্রের প্রদর্শনী মাত্র।
শ্রীলঙ্কা কার্যকরভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনায় কোনো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত, এই বছর প্রায় ৭ ডলার বিলিয়ন বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে।
দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১ ডলার বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৮ বিলিয়ন ডলার ২০২৭ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী সংকটগুলোর শীর্ষে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং পরিশোধে গুরুতর ভারসাম্য সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেমন- জ্বালানি, ওষুধ ও খাদ্য।
ঘাটতির কারণে গত বছর দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দেয়; যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে পালাতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।
তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের অধীনে অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। কিন্তু জ্বালানির ঘাটতির কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধের ঘাটতি রয়েছে এবং কোষাগার সরকারি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে লড়াই করছে।
অর্থনৈতিক সংকট জনগণকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করে তুলেছে।
দেশের ব্যয় পরিচালনার জন্য সরকার আয়কর দ্রুত বৃদ্ধি করেছে এবং এই বছর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দকৃত তহবিল ৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করেছে।
এছাড়াও, দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের কারণে গড়ে ওঠা দুই লাখেরও বেশি সদস্যের সামরিক বাহিনীর আকার, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পাবে।
সরকারের স্বাধীনতা উদযাপন এবং অর্থনৈতিক বোঝা কমাতে ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে একদল নেতাকর্মী নীরব বিক্ষোভ শুরু করেন।
১ বছর আগে