২১শে ফেব্রুয়ারি
২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ পালনের আহ্বান
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হাইকমিশন খুব শিগগিরই লন্ডনের মেয়রের কাছে পাঠাবে।’
গত মঙ্গলবার (২১শে ফেব্রুয়িারি) সন্ধ্যায় লন্ডনের কেন্জিংটনের একটি হোটেলে ‘সেফগার্ডিং ইন্ডিজেনাস ল্যাঙ্গুয়েজেস থ্রু ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন’-শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা এ আহ্বান জানান।
এসময় তিনি যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০০টি এবং লন্ডনে প্রায় ২০০টি মাতৃভাষার প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা খুবই যৌক্তিক এবং এবিষয়ে আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারি সকল দেশের রাষ্ট্রদূতগণ অভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।’
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্যদের তাদের নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে লন্ডন মেয়রের নিকট এবিষয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: ক্যানবেরায় বহু ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অমর একুশে উদযাপন
তাছাড়া তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং চর্চার জন্য যুক্তরাজ্যে কমিউনিটি সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করলে হাইকমিশন বিনামূল্যে বাংলা বই সরবরাহ করতে সহায়তা করবে বলেও জানান।
তিনি তার বক্তব্যে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ-এর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ৫২-র ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়া, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগসহ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষপে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করনে।
অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
পেট্রিসিয়া তার বক্তব্যে এবছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে প্রতিটি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনকে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজীর বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছিলো, তাদের সেই আত্মদান থেকে আজও আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি।’
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য পল ব্রিস্টো অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে নয়া দিল্লির বাংলাদেশ মিশন
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি অমর একুশের মহান আদর্শ ধারণ করে আছে, যা আগামী দিনগুলোতেও এদেশে নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অন্য ভাষার মানুষকেও উৎসাহ যোগাবে।’
যুক্তরাজ্যে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ অনুষ্ঠানে লন্ডনে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, ১৭টি দূতাবাসের কূটনীতিক ও প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
এছাড়া হাইকমিশনের স্মারক অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক যুক্তরাজ্যে ইউনেস্কোর জাতীয় কমিশনের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রাবাগলিয়াতি, ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিনিধি ও'বায়ার্ন মুলিগান ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতগণ এবং দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীরা ভাষা শহীদদের উৎসর্গ করে নিজ নিজ ভাষায় মনোজ্ঞ সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
এছাড়াও, উদীচী স্কুল অব পারফরমিং আর্টসের শিশু-কিশোর শিল্পীরা সমবেত কন্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’- অমর সঙ্গীতটি পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার অতিথি ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাষায় শ্রদ্ধাঞ্জলি
১ বছর আগে
২১শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের রুট নির্ধারণ
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি রুট ম্যাপ চূড়ান্ত করেছে, যা ২০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাত ৮টা থেকে কার্যকর হবে।
রুটম্যাপ অনুযায়ী, সর্বস্তরের জনসাধারণ পুরনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমি, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট-ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেইট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবেন এবং শহীদদের কবর জিয়ারতের পর আজিমপুর কবরস্থানের মূল গেট (দক্ষিণ দিকের) দিয়ে বের হয়ে আজিমপুর সড়ক হয়ে পলাশী মোড় থেকে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।
আরও পড়ুন: জার্মান সংসদীয় প্রতিনিধিদল ২২ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করবে
কবরস্থানে না গিয়ে বিকল্প পথে যারা শহীদ মিনারে যেতে চান তারা উপাচার্য ভবন পার হয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড় থেকে বাম দিকের রাস্তা দিয়ে (জহুরুল হক হলের পশ্চিমের রাস্তা) সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।
নিউমার্কেট ক্রসিং থেকে ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও আজিমপুর মোড়, পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা ধরে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।
চাঁনখারপুল এলাকা থেকে বক্শি বাজার মোড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়েও পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা ধরে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।
টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ শিব বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখারপুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখারপুল হয়ে শুধু প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা থেকে ক্যাম্পাস এলাকার অন্যান্য সড়ক বন্ধ থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
যেখানে তারা ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে নেয়া রুটম্যাপ ও সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাবির ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য বরাবরের মতো এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি এবং বিভিন্ন উপ-কমিটি নানাবিধ দায়িত্ব পালন পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার শ্রদ্ধা জানানোর পর অন্যান্য সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এবছর ব্যক্তি পর্যায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা যাবে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, বেদির প্রাঙ্গণ ধুয়ে-মুছে রং করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাটিকে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে এবং চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে এলাকা পর্যবেক্ষণ করছে।
আইন অনুষদের সামনে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যাতে এলাকা মনিটরিং করতে এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়।
অন্যদিকে, ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শেষ সময়ে তাদের চিত্রকর্মে তুলির সর্বশেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আরও পড়ুন: ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসী হামলার কোনো সম্ভাবনা নেই: ডিএমপি কমিশনার
ঢাবির চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম গত দুই দিন ধরে দেয়ালচিত্র করছেন।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বাকি আছে শুধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের গ্রাফিতি। বাকি অংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে।
১ বছর আগে