৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট
এসেনসিয়াল ড্রাগসে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ
দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের সরকারি অডিটে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন নজরে নিয়ে রবিবার (১২ মার্চ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: অনলাইন প্লাটফর্মে ফারাজ সিনেমাটি প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
রুলে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এর আগে শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ এক সরকারি অর্থ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। ক্যান্টিন বন্ধ, কিন্তু বিল তোলা হয়েছে ভর্তুকির। কাঁচামালের তুলনায় ওষুধের উৎপাদন কম দেখিয়ে করা হয়েছে তছরুপ। বিধি লঙ্ঘন করে টেন্ডার দেয়া হয়। বিনা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ বাণিজ্য এমন কোনও অনিয়ম নেই যা হয়নি এখানে। এটি দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ্স কোম্পানি লিমিটডে (ইডিসিএল)। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি অডিটেই আর্থিক বড় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।
গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে ৩২টি গুরুতর অনিয়মে সরকারি ৪৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় যেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে তার মধ্যে আছে-নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ব্যবহৃত কাঁচামালের চেয়ে ওষুধ উৎপাদন কম দেখানো, উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করে গুণগত ওষুধ উৎপাদন না করা, কনডম প্রস্তুতে কাঁচামালের ঘাটতি, বনভোজনের নামে ভ্রমণভাতা, করোনাকালীন ক্যান্টিন বন্ধ থাকলেও প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদেরকে অনিয়মিতভাবে ক্যান্টিনে সাবসিডি প্রদানের নামে টাকা আত্মসাৎ।
এছাড়া সর্বনিম্ন দরে মালামাল ক্রয় না করে উচ্চমূল্যে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সরকারি টাকার লুটপাট, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে সরবরাহকারীগণকে কার্যাদেশ দিয়ে মালামাল ক্রয় সংস্থার আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম উঠে এসেছে নিরীক্ষায়।
প্রাথমিকভাবে ইস্যুকৃত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫১টি আপত্তি তুলেছে অডিট কমিটি। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কমিটি ১৯টি আপত্তি বাতিল করে দেয়। বাকি ৩২টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (এসএফআই) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ১১টিকে পিএ কমিটির জন্য (সংসদীয় কমিটিতে) পাঠানো হচ্ছে বলে সূত্র বলছে। পরিচালক ও দলনেতা মোহা. নূরুল আবসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দলটি ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ১০ই এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করেন। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এআইআর হিসেবে দাখিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ই-অরেঞ্জ থেকে রাজস্ব আদায় না করায় হাইকোর্টের উষ্মা প্রকাশ
ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকে দুদকের মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট
১ বছর আগে