খুলনা-মোংলা রেলপথ
৭৩ বছর পর ট্রেন যাচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দরে
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দ্রুত এগিয়ে চলেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এবার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৭৩ বছর পর রেল যোগাযোগে যুক্ত হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা।
এরইমধ্যে খুলনা-মোংলা রেলপথের কাজ ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুনে বাকি কাজ শেষ হওয়ার কথা।
জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
১৯৫০ সালের ১লা ডিসেম্বর মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। মোংলা বন্দর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে সেলফি তোলার সময় ট্রেন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পশুর নদী ও মোংলা নদীর সংযোগস্থলে এই বন্দরের অবস্থান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পণ্য ও পর্যটন পরিবহনে মোংলা বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে রেলপথের ৯৬ শতাংশ কাজ। চলতি বছরের জুনে পুরো কাজ শেষ হবে।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রেলসেবা চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। রেলপথ না থাকায় এতদিন বন্দরের বড় বড় কন্টেইনার পরিবহনে সমস্যা হতো।
এছাড়া সুন্দরবনে পর্যটক পরিবহন সহজ হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল, মশিউর রহমান ও ইকবাল হোসেন জানান, মোংলা দেশের অন্যতম সমুদ্রবন্দর হলেও এখানে এতদিন রেল সংযোগ ছিল না। ফলে বন্দরটিতে অন্য দেশের বড় মালবাহী জাহাজ ভিড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। বরং বড় বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছিল। এতে মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।
তারা আরও জানান, মোংলা বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনতে ইতোপূর্বে একাধিক পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ২১শে ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এরমধ্যে:
প্যাকেজ ১-রেললাইন নির্মাণ,
প্যাকেজ ২-রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু,
প্যাকেজ ৩-টেলিযোগাযোগ ও সিগন্যালিং সিস্টেম।
আরও পড়ুন: যশোরে শিক্ষিকার নাক ফাটানো সেই ট্রেনপরিচালক বরখাস্ত
এসব প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।
তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু।
ইতোমধ্যে ওই সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৩১টি ছোট সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর ১০৭টি কালভার্টের মধ্যে ১০৫টির কাজ শেষ হয়েছে। ৯টি ভিইউপি’র নির্মাণকাজ এবং ২৯ এলসি গেটের মধ্যে ২৬টির কাজ শেষ হয়েছে।
সাতটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদ নগরের কাজও শেষ হয়েছে। বাকি পাঁচ স্টেশনের মধ্যে কাটাখালীর ৮০ শতাংশ, চুলকাঠির সাত শতাংশ, ভাগার ৭২ শতাংশ, দিগরাজের ৯৮ শতাংশ ও মোংলা স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। গত কয়েক মাসে আরও অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
এছাড়া জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় লোন রয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ কোটি এক লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি এক হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণের জেলাগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে জানালেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। এখন খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের চাপ কমবে। সেইসঙ্গে পণ্য পরিবহন ব্যয় ও সময় কমবে।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি বন্দরের নৌ, সড়ক ও রেলপথের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য পরিবহন সহজ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে।
আরও পড়ুন: ঈদ যাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ৭ এপ্রিল
১ বছর আগে