সাইবার অপরাধ
ডাকসু নির্বাচন: সাইবার নিরাপত্তা শঙ্কায় প্রার্থীরা, প্রধান লক্ষ্য নারী প্রার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র নির্বাচন (ডাকসু) সামনে রেখে পুরো দেশেই যেন একটা নির্বাচনী হওয়া বইছে। প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে এই নির্বাচন। সামাজিকমাধ্যমের সুবাদে ডাকসু প্রার্থীদের খবরাখবর ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশের প্রান্তিক কোনো চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রবাসীদের কাছেও।
কিন্তু রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনার বাইরে সামাজিকমাধ্যমে অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। সাইবার জগতে ক্রমাগত হেনস্তা, অপতথ্য ও গুজবের শিকার হচ্ছেন তারা। এতে প্রধান লক্ষ্য আলোচিত নারী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের লক্ষ্য করে চলছে ট্যাগিং, বডি শেমিং, বুলিং, গুজব, কটুক্তি, বিদ্বেষমূলক প্রচার, প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ।
এছাড়াও সাইবার হামলার মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সংগঠনের পেইজ, বাটবাহিনীর উপদ্রবও চলছে ভয়াবহভাবে।
পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে লড়বে ৯ প্যানেল, প্রার্থিতায় নতুনত্ব
প্রধান লক্ষ্য নারী প্রার্থীরা
ডাকসু নির্বাচনে এবার নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ২০১৯ সালের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। এমনকি এবারের ঘোষিত ৯টি প্যানেলের মধ্যে ৫টিতেই নেতৃত্ব দেবেন নারী। ভিপি পদে লড়ছেন দুজন নারী, জিএস পদে একজন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়ছেন আরও দুজন নারী।
এছাড়াও বিভিন্ন প্যানেলের সম্পাদক ও সদস্য পদে রয়েছেন একাধিক নারী প্রার্থী, এরইমধ্যে তারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছেন। তবে, নারী প্রার্থীদের লক্ষ্য করে বডি শেমিং, বুলিংয়ের অহরহ ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডাকসু নির্বাচনে সবার আগে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন উমামা ফাতেমা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সাবেক এই মুখপাত্রের বিরুদ্ধে এরপর থেকেই গুজব ও অপতথ্যের হিড়িক পড়ে। তিনি কবি সুফিয়া কামাল হলে বাম রাজনীতি বাদে সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চান বলে গুজব ছড়ানো হয়। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিজের বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উমামা।
তিনি বলেন, প্রভোস্ট স্যারের কাছে জমা দেওয়া বিবৃতিতে আমরা সুফিয়া কামাল হলে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে লিখে দিয়েছি। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ (বাগছাস) ইত্যাদি, মানে যাবতীয় বাম, ডান, ইসলামিক সব দলের রাজনীতি হলে বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়াও, উমামার শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে যেমন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে, তেমনই মন্তব্যের ঘরেও কটূক্তি করা হচ্ছে। এদিকে, ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে এবার ডাকসু নির্বাচন করবেন ৪ নারী। প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই শিবিরের নারী প্রার্থীরা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভিপি পদপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম।
নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, এবারের ডাকসুতে রাজনৈতিক বলয়ের বাইরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, রাজনীতি কিংবা রাজনীতির বাইরে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো গড়ে উঠেনি। অব্যাহত কটূক্তি, প্রোপাগাণ্ডা, বিদ্বেষমূলক প্রচার, সাইবার বুলিং ও ট্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা।
সাদিক কায়েম বলেন, ফাতিমা তাসনিম জুমা, সাবিকুন্নাহার তামান্না, উম্মে ছালমা থেকে ডান-বাম ঘরানার কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই ব্যাধি থেকে। এই অব্যাহত অপপ্রচারের ফলে অনেক নারী শিক্ষার্থী এখনও রাজনীতিতে ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
পড়ুন: এক নজরে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন
‘তাদের সাহসী অবদান ও দুর্নিবার নেতৃত্ব আমাদের বিজয়কে তরান্বিত করেছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নারীরা কখনোই যথাযথভাবে অংশগ্রহণের উদ্দীপনা পাননি,’ বলেন সাদিক।
এছাড়াও, বিভিন্ন পদে প্রার্থীতার ঘোষণা করা নারীদেরও ক্রমাগত সাইবার অপরাধের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ছড়ানো হচ্ছে হরেক রকম গুজব
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছড়ানো হচ্ছে নানারকম গুজব। প্রার্থীদের রাজনৈতিক মতাদর্শসহ ব্যক্তিগত জীবনও রেহাই পাচ্ছে না এসব অপতথ্য থেকে। ডাকসু অন্যতম আলোচিত মুখ ছাত্রদল থেকে ভিপি পদপ্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বেশ কয়েকটি গুজব ছড়িয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়, তামিরুল মিল্লাত থেকে পড়া আবিদুল ইসলাম শিবিরের সাথী ছিলেন।
একটি টকশোতে এই গুজবের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছেন আবিদ। পৃথক আরেক টকশোতে তিনি বলেন, আমি এমন একটি পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছি, যার পরিবারের কেউ কখনো রাজনীতিবিদ ছিল না। আমি প্রথম বর্ষে গণরুম, গেস্টরুমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হল থেকে বেরিয়ে যাই। এরপর নিজ প্রচেষ্টায় ছাত্রদলের রাজনীতিতে যোগদান করি।
আবিদ অপপ্রচারে অভিযুক্ত করেছেন শিবিরকে। তিনি বলেন, ভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে শিবির এখন অপপ্রচারে নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথা দিয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের সেই নিয়ন্ত্রণ নেই।
এদিকে, ট্যাগিং থেকে বাদ যাচ্ছেন না শিবিরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার শিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদকে ছাত্রলীগ বলে ট্যাগিং করা হয়েছে।
মুহুর্মুহু বট অ্যাটাক
সামাজিক মাধ্যমগুলো মেতে উঠেছে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা পোস্টে। তবে পিছিয়ে নেই বট বাহিনী। এসব বট অ্যাকাউন্টের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না কেউ। সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে উল্টাপাল্ট প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যের ঘরে বট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নানা ধরণের গুজব ও প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে।
পড়ুন: হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ: উমামার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন
বট কি?
বট হলো ‘রোবট’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা নিজে নিজেই ইন্টারনেটে পুনরাবৃত্তিমূলক পোস্ট করা, মন্তব্য করা, শেয়ার ও রিঅ্যাক্ট দেয়। বট রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে ট্রল, গুজব বা প্রচারণা ছড়ানো, হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করানো, প্রতিপক্ষকে হেয় করা, মিথ্যা তথ্য ভাইরাল করানোয় কাজে লাগে।
হাজার হাজার ভুয়া বা ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে এসব বটের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়ানো, গণমাধ্যম ও জনমতকে প্রভাবিত করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী সংসদ-১,২-এ বট আক্রমণ চলছে। এ ছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ ও নিউজফিডে বট আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রার্থীরা।
পড়ুন: কুকি-চিনের উত্থান বনাম বান্দরবানের পর্যটন: ক্ষতির পাহাড়
প্রার্থীদের হেয় করতে বটদের দিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব প্রোপাগাণ্ডার কারণে প্রার্থীরা হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন, এমনকি হুমকি-ধমকি পর্যন্ত পাচ্ছেন। সূত্র অনুযায়ী, এরইমধ্যে সাইবার অ্যাটাক চালিয়ে সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের পেজ হামলা চালিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরইমধ্যে আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
১০৫ দিন আগে
সাইবার অপরাধ: ১০ হাজার শ্রমিককে থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে কারেন বিদ্রোহীরা
মিয়ানমারে বলপূর্বক সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়া ১০ হাজারের বেশি মানুষকে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী। শনিবার ( ১৫ ফেব্রুয়ারি) দেশটির জাতিগত মিলিশিয়া কারেন বর্ডার গার্ড ফোর্সের (বিজিএফ) মুখপাত্র মেজর নাইং মাউং জো এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
মিয়ানমারের থাই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতারণা কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করে আনা কর্মীদের দিয়ে জোর করে নানা ধরনের অবৈধ কাজ করানো হয়। সাইবারজগত ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রগুলো।
পাকিস্তানভিত্তিক ডনের খবরে বলা হয়, থাই সীমান্তে গড়ে ওঠা ওই অবৈধ ভবনগুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের হাতে জিম্মি এসব মানুষকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বিজিএফ। এখন তাদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিজিএফ মুখপাত্র জো বলেন, ‘আমাদের ভুখন্ড থেকে সব প্রতারককে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছি। এখন সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের বেপরোয়া মাদক সাম্রাজ্য বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের
একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ধীরে ধীরে থাইল্যান্ডে স্থানান্তর করা হবে।’
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিদিন ৫০০ জন করে শ্রমিককে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। এরইমধ্যে ৬১ জনকে থাই সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশটির তাক প্রদেশে সীমান্ত নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি সামরিক টাস্কফোর্স মিয়ানমারের বিজিএফের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিককে গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শুক্রবার মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় মেয়াওদি শহরতলিতে গড়ে ওঠা ‘শাও কোক্কো’ নামের একটি ভবনে টহল দিতে দেখা গেছে বিজিএফ সেনাদের। কারেন রাজ্যের সাইবার অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় এই ভবনটিকে।
২৯১ দিন আগে
সামাজিক মাধ্যমে সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকিতে বাংলাদেশ
প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ প্রত্যেককে জ্ঞানের এক অভূতপূর্ব জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এটি ইতিবাচকতার পাশাপাশি নেটওয়ার্কভিত্তিক অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধির পথকেও প্রশস্ত করেছে। আর এসব অপরাধের অনেকগুলোই ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টেলিগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো তথ্য চুরি হচ্ছে। এছাড়া জালিয়াতি থেকে শুরু করে অনলাইন জুয়া এবং ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমকে সহজতর করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
পারস্পরিক যোগাযোগ এবং ব্যবসার জন্য মানুষ যত বেশি ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকছে, অপরাধীরা এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে তত বেশি পরিমাণে ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর সুযোগটি লুফে নিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সাধারণ সাইবার অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিচয় হ্যাকিং, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং স্ক্যাম এবং জুয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেইলিং
সাইবার ক্রাইমের সবচেয়ে পীড়াদায়ক ধরনগুলোর একটি হলো ব্ল্যাকমেইলিং।
২৫ বছর বয়সী শোভা (আসল নাম নয়) ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে জড়ানোর সময় তার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা শিগগিরই ভিডিও কলের সময় ছবি প্রকাশের জন্য অনুপযুক্ত অনুরোধে পরিণত হয়েছিল।
শোভা লোকটিকে বিশ্বাস করে মেনে নিল। কিন্তু এর পরপরই তার আচরণ খারপ দিকে মোড় নেয়। তিনি বড় অঙ্কের টাকা দাবি করতে শুরু করেন এবং যখন তিনি তা অস্বীকৃতি জানান, তখন তিনি তার ছবি এবং ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের হুমকি দেন।
পরিস্থিতি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। কিন্তু একজন সিনিয়র মেন্টর এবং বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সহায়তায় শোভা লোকটির অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। তবে ঘটনার মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়েছে অনেক দিন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: সিলেটে সাইবার অপরাধ চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার: র্যাব
ফেসবুকের ভুয়া পেজের মাধ্যমে প্রতারণা
আরেকটি প্রচলিত সমস্যা হলো অনলাইনে প্রতারণা, বিশেষ করে ভুয়া ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, অনিক (ছদ্মনাম) একটি আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য ফেসবুক পেজ থেকে একজোড়া ব্র্যান্ডেড জুতা অর্ডার করেছিলেন, যা ব্যাপক পর্যালোচনা এবং একটি বড় অনুসরণকারী বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
পেজটিতে অগ্রিম পেমেন্টের প্রয়োজন ছিল, যা অনিক সরল বিশ্বাসে করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, জুতা আর পৌঁছাল না হাতে। এমন পরিস্থিতিতে বিক্রেতার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও অনিক ব্যর্থ হন এবং অগ্রিম দেওয়া অর্থ আর ফেরত পাননি।
দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়— অনেক ভুক্তভোগী প্রতিদিন একই ধরণের প্রতারণার শিকার হন।
হানি ট্রাপে তরুণরা
সম্ভবত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামনে আসা সবচেয়ে উদ্বেগজনক সাইবার অপরাধগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘হানি ট্র্যাপ।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই ফাঁদ বা প্রতারণা সাধারণত ফেসবুক থেকে শুরু হয়। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে ভিডিও কল করা হয়।
প্রতারক একজন নারী সেজে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথোপকথনে জড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের পুরোপুরি নগ্নভাবে ভিডিও কল করতে বলবে।
এরপর ভুক্তভোগীর আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করাই এই কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত লক্ষ্য।
অপরাধীরা প্রায়শই বাংলাদেশের বাইরে থেকে এসব কাজ করে। এসবের বেশিরভাগই ভারত থেকে করা হয়।
ভুক্তভোগীদের মানসিক ও আবেগীয় প্রভাব ভয়াবহ হয়। কেউ কেউ অবিরাম প্রতারণার কারণে আত্মহত্যাসহ চরম পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে যায়।
বাড়ছে অনলাইন জুয়া
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অনলাইন জুয়া একটি বিপজ্জনক আসক্তি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের যুবকদের মধ্যে।
দ্রুত উপার্জনের লোভ, স্মার্টফোনের মাধ্যমে জুয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সহজে ব্যবহারের সুযোগ একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করেছে।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার শাহজাহান হোসেন বলেন, প্রকাশ্যে জুয়া প্রতিরোধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ এখনো দুর্বল।
তিনি বলেন, সাইবার জুয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আমাদের নেই। তবে সরকারের নতুন উদ্যোগে এসব সমস্যা মোকাবিলা করা অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
অনলাইন জুয়াখেলার বিপজ্জনক প্রলোভন নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এসব আরও বেড়েছে, যা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আসক্তি এবং আর্থিক ক্ষতিতে ফেলছে।
ইনস্টাগ্রাম: হয়রানির জন্য একটি কেন্দ্রস্থল
ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোও সাইবার অপরাধের উৎস হয়ে উঠেছে।
নাজমুল ইসলাম ব্যাখ্যা করেছেন, ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে সাধারণ অপরাধগুলোর মধ্যে একটি হলো সাইবার স্টকিং। অপরাধীরা নাগরিকদের হয়রানির জন্য প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে। কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রোফাইলে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগিয়ে বাস্তব জীবনে তাদের শনাক্ত করে এবং ভয় দেখায়।
ইনস্টাগ্রামে আরেকটি প্রচলিত অপরাধ হলো জালিয়াতি। অপরাধীরা নকল পণ্য বা পরিষেবাদির বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে। এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়শই সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাইবার অপরাধের উদ্দেশ্য
এই সাইবার অপরাধগুলো বেশিরভাগের পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো অর্থ উপার্জন বা চাঁদাবাজির ইচ্ছা। অপহরণ, জালিয়াতি বা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমেই হোক না কেন, অপরাধীরা আর্থিক লাভের কারণে এসবে অনুপ্রাণিত হয়, প্রায়শই নির্দোষ ব্যক্তিদের ক্ষতি করে।
কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান
এই সাইবার অপরাধ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞরা আরও শক্তিশালী আইন এবং এর আরও কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এই অপরাধের জটিলতা এবং ক্রমবর্ধমান প্রকৃতি এটিকে একটি অবিরত চ্যালেঞ্জ পরিণত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাইবার ক্রাইমের শিকড় প্রযুক্তির মধ্যে থাকতে পারে। তবে এর প্রভাব খুব বাস্তব। ভুক্তভোগীদের মানসিক, আর্থিক এবং শারীরিকভাবে প্রভাবিত করে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই আধুনিক যুগে এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনসাধারণ এবং কর্তৃপক্ষ উভয়েরই সতর্ক ও সক্রিয় হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১০৩ তাইওয়ানি আটক
৩১১ দিন আগে
হ্যাকিং প্রতিরোধ: অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধানতা
অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটায় লেনদেনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম ক্রেডিট কার্ড। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংস্পর্শ এবং নগদবিহীন লেনদেনেও অবদান রাখছে ব্যাংকিং কার্ডগুলো। তবে উপযোগিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুগপৎভাবে বাড়ছে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং প্রবণতা। ক্রমবর্ধমান এই অনলাইন জালিয়াতির ঘটনাগুলো প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিকে ক্রমশ আশঙ্কাজনক করে তুলছে। এই সাইবার অপরাধ নিরসনে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রত্যেক কার্ড হোল্ডারের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তাই চলুন, অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং থেকে মুক্ত থাকার উপায়গুলো জেনে নেই।
ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
ইন্টারনেটের বিভিন্ন কার্যক্রমগুলোতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিরাচরিত উপায় হচ্ছে পাসওয়ার্ড। বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ কিছু অক্ষরের সংমিশ্রণে (যেমন @, !, #,* ) নিমেষেই একটি একক ও জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়।
পাসওয়ার্ড তৈরির এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সংকেতগুলোকে একত্রে বলা হয় আলফা-নিউম্যারিক ক্যারেক্টার। প্রাথমিকভাবে হ্যাকারদের জন্য এগুলো চুরি করা বেশ কঠিন। পাসওয়ার্ড হিসেবে জন্মদিন, নাম বা মোবাইল নাম্বার বেশ জনপ্রিয় হলেও এগুলো খুব সহজে অনুমানযোগ্য। আর হ্যাকারদের জন্য এই গোপনীয়তা ভাঙা কোনো ব্যাপারই নয়।
আরও পড়ুন: ডিএসএলআর ক্যামেরা খুঁজছেন? কেনার আগে জেনে নিন ফিচার ও দাম
তাই এই তথ্য ব্যবহার না করে আলফা-নিউম্যারিক ক্যারেক্টার দিয়ে গোপন কোড বানিয়ে তা মনে রাখা উচিৎ। নিদেনপক্ষে ব্যক্তিগত কোনো ডায়েরী বা প্যাডে লিখে রাখা উচিৎ। একাধিক কার্ড বা অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখা
পাসওয়ার্ড সুরক্ষাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে নিতে এখন সব থেকে প্রচলিত উপায় হচ্ছে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বা টু-এফএ। এই ব্যবস্থায় একটি অথেন্টিকেশন অ্যাপ থেকে সম্পূর্ণ একক একটি কোড শুধুমাত্র একবার কিছু সময়ের জন্য গ্রাহকের মোবাইল ডিভাইসে প্রেরণ করা হয়। সেই কোড নির্ভুল ভাবে টাইপ করতে পারলে বিভিন্ন সেবা প্রদানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি মিলে। পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি এই কোড প্রদানের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকায় পদ্ধতিটির নাম টুএফএ। অবশ্য এই কোড ছাড়াও টু-এফএ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা হয়। যেমন বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ যেমন আঙ্গুলের ছাপ বা মুখমন্ডল স্ক্যান, অ্যাপ-ভিত্তিক অথেন্টিকেটর যেমন গুগল অথেন্টিকেশন।
ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
প্রযুক্তি-বর্হিভূত এই স্টেটমেন্ট চেক করার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই কার্ড হোল্ডাররা অনুসরণ করে আসছেন। এটি সরাসরি কোনো নিরাপত্তা ব্যূহ না হলেও অবিলম্বে অননুমোদিত লেনদেন শনাক্ত করার মাধ্যমে গ্রাহক দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: আপনার মোবাইলটি অবৈধ নয়তো? অফিসিয়াল ফোন যাচাই করার উপায়
মাস শেষে ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত কার্ড স্টেটমেন্টে নিয়মিত চোখ রাখলে সন্দেহজনক চার্জ বা লেনদেনগুলো ধরা পড়ে। অতঃপর তা নিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এ সময় ব্যাংক থেকে প্রাথমিকভাবে সেই সন্দেহজনক চার্জগুলো যাচাই করে প্রয়োজনে কার্ড ফ্রিজ করা হয়।
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে ভিপিএন ব্যবহার
বর্তমানে দেশ জুড়ে উন্নত ইন্টারনেট সুবিধার ফলে শপিং মল ও রেস্টুরেন্টের মতো পাবলিক প্লেসগুলোতে অনেকেই ওয়াই-ফাই ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। হ্যাকাররা পাবলিক নেটওয়ার্ক থেকে শেয়ারকৃত ব্যক্তিগত তথ্য আটকাতে পারে। তাই এ ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কোনো কিছু কেনা মানেই কার্ডের গোপন তথ্যগুলো অনাবৃত হয়ে যাওয়া।
এই তথ্য চুরির ঝুঁকি কমাতে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করা যেতে পারে। ভিপিএনগুলো তথ্যের আদান-প্রদানকে এনক্রিপ্ট করে ফেলে, যা অনেকটা সুরক্ষিত বাক্সে লুকিয়ে কাউকে কোনো কিছু দেওয়ার মতো। ফ্রি ভিপিএনগুলো ব্যবহারে তথ্যের গোপনীয়তায় কিছুটা সন্দেহের অবকাশ থাকে বিধায় এই ঝুঁকি না নেয়াই উত্তম।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাসরুট খুঁজে পেতে দরকারি কিছু মোবাইল অ্যাপ
ফিশিং স্ক্যাম থেকে দূরে থাকা
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রায় সময় নানা ধরনের চিত্তাকর্ষক বা লোভনীয় পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়। ফিশিং স্ক্যাম নামে পরিচিত এই বিজ্ঞাপনগুলো মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের সংবেদনশীল তথ্য পাওয়ার জন্য সাইবার অপরাধীদের প্রতারণামূলক প্রচেষ্টা। এই স্ক্যামগুলোতে প্রায়শই প্রতারণামূলক ইমেল, টেক্সট বার্তা বা বিভিন্ন ওয়েবসাইট জড়িত থাকে। এগুলোতে ব্যবহারকারিদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে বা ক্ষতিকারক লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করতে বলা হয়।
ফিশিং স্ক্যামের শিকার হওয়া এড়াতে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় সাবধান থাকা জরুরি। সন্দেহজনক প্রেরকের ঠিকানা, সংবেদনশীল তথ্যের জন্য অপ্রত্যাশিত অনুরোধ বা মাত্রাতিরিক্ত চিত্তাকর্ষক বার্তাগুলোই ফিশিংয়ের পরিচয় বহন করে। ফিশিং মুক্ত সাইটগুলোতে সরাসরি যোগাযোগের নম্বর দেওয়া থাকে যেখানে ফোন করে পণ্য বা সেবার সত্যতা যাচাই করা যায়। তাই অনলাইন শপিংয়ের সময় কোনো কিছু দ্বারা প্রলুব্ধ না হয়ে সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখা উচিৎ।
ডিভাইস সুরক্ষিত রাখা
বর্তমানে যে কোনো জায়গা থেকে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও কার্ড ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ব্যাংকেরই রয়েছে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। ফলে কম্পিউটারের পাশাপাশি ছোট-বড় বিভিন্ন ডিভাইসে কার্ড ও অ্যাকাউন্টের তথ্যগুলো জমা থাকে। তাই ডিভাইসগুলো বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস আক্রমণ থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম, সফ্টওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলোকে সবসময় আপ-টু-ডেট রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন: দামি ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনার সুবিধা-অসুবিধা
অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্রাউজের সময় সন্দেহজনক লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করার মাধ্যমেও ডিভাইসে ক্ষতিকর ফাইল ঢুকে পড়ে। এছাড়া অজানা উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে তা প্রায় ক্ষেত্রে ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি এগুলোর মধ্যে তথ্য চুরির জন্য ডিজাইনকৃত ম্যালওয়্যারও থাকতে পারে। কার্ড নিবন্ধিত প্রতিটি ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখতে তাতে অনলাইনে গেম খেলা, মুভি দেখা ও শপিং করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিৎ।
ক্রেডিট কার্ডের তথ্য শেয়ার না করা
অনলাইনে বিভিন্ন সেবা বা পণ্য কেনার সময়মূল্য পরিশোধের জন্য কার্ডের তথ্য প্রদান করতে হয়। বিশেষ করে অনলাইন কোর্স, চ্যানেল সাবস্ক্রিপ্শন ও অ্যাপের মতো বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্যের ক্ষেত্রে কার্ডের তথ্যগুলো শেয়ারের পর থেকে সংশ্লিষ্ট সাইটগুলোতে তা সংরক্ষিত থাকে। এ ক্ষেত্রে সাইটগুলোর শর্তাবলি ও গোপনীয়তা নীতিমালা পড়ার পাশাপাশি ফোন করে যোগাযোগ করা উচিৎ।
মূলত গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো তারা কতটা নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ করে তা সুস্পষ্ট ভাব জানা দরকার। বিশ্বখ্যাত সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ থাকে না। কেননা এদের ওয়েবসাইটগুলো নিরাপদ সংযোগ (এইচটিটিপিএস) এবং সিকিউর সকেট লেয়ারের (এসএসএল) মতো নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ফোন হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
ক্রেডিট লক ব্যবহার
ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত অ্যাপগুলোর অত্যাধুনিক ফিচার হচ্ছে ক্রেডিট লক। এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন ব্যাঙ্কিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত ও অস্থায়ীভাবে কার্ড নিষ্ক্রিয় করা যায়। এর জন্য মোবাইল অ্যাপ বা ব্যাংকের ওয়েব প্ল্যাটফর্মের লগ ইন করতে হয়। অতঃপর কার্ড সিকিউরিটি বা অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট সেকশনে যেতে হয়। এই সেকশনগুলোর অধীনে ক্রেডিট ‘লক’ বা ‘টেম্পোরারিলি ডি-অ্যাক্টিভেট’ অপশনগুলো থাকে।
ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম ভেদে সেকশন ও অপশনগুলো ভিন্ন হতে পারে। চূড়ান্তভাবে কার্ড নিষ্ক্রিয় করার পূর্বে কার্ডধারীদের নিরাপত্তা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, পাসওয়ার্ড প্রদান বা বায়োমেট্রিক যাচাই করা হতে পারে। ক্রেডিট কার্ডটি একবার লক হয়ে গেলে কার্ডধারী একই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা আনলক না করা পর্যন্ত এটি লেনদেনের জন্য আর ব্যবহার করা যাবে না।
ক্রেডিট কার্ড অ্যালার্ট সক্রিয় রাখা
এই অ্যালার্মটি কার্ড ইস্যূকারীর অনলাইন ব্যাঙ্কিং পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সেট আপ করা হয়। নানা ধরনের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে অ্যালার্মে থাকে কাস্টমাইজেশনের সুবিধা। যেমন আন্তর্জাতিক লেনদেন বা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি পরিমাণে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অ্যালার্মের মাধ্যমে কার্ডধারীকে জানান দিবে। এমন নোটিফিকেশন পাওয়ার মাধ্যমে কার্ডধারী অবিলম্বে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্ড ফ্রিজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ডিপ ফ্রিজ খুঁজছেন? যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন
কার্ড টোকেনাইজেশন ব্যবহার
এটি এমন এক নিরাপত্তা প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে কার্ডের তথ্যকে (কার্ড নাম্বার বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ) একটি একক টোকেন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়। প্রতিটি লেনদেনের জন্য একটি অনন্য টোকেনটি তৈরি হয় এবং কার্ডের প্রকৃত বিবরণের জায়গায় তা স্থলাভিষিক্ত হয়। ফলশ্রুতিতে সংবেদনশীল তথ্যগুলো লুকানো থাকায় কার্ড জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে না। যে কোনো হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে কার্ড টোকেনাইজেশন একটি মোক্ষম সুরক্ষা ব্যবস্থা।
পরিশিষ্ট
অনলাইন কেনাকাটার সময় ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং থেকে দূরে থাকতে উপরোক্ত উপায়গুলো উৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। এগুলোর মধ্যে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার এবং ফিশিং স্ক্যাম থেকে দূরে থাকা যথেষ্ট কার্যকরী কৌশল।
উপরন্তু অ্যালার্ট সিস্টেম, কার্ড টোকেনাইজেশন ও ক্রেডিট লকের মতো উন্নত ব্যবস্থা অননুমোদিত লেনদেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষার অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করে। এরপরেও উপরোল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর নিয়মিত অনুশীলন যে কোনো সময় নগদ-বিহীন আর্থিক লেনদেন জনিত আকস্মিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট টিভি খুঁজছেন? জেনে নিন ফিচার ও দাম
৫১৯ দিন আগে
ইন্দোনেশিয়ায় সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১০৩ তাইওয়ানি আটক
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের একটি ভিলায় অভিযান চালিয়ে ১০৩ জন তাইওয়ানের নাগরিককে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন তদারকি ও প্রয়োগ বিভাগের পরিচালক সফর মুহাম্মদ গোদাম সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা ও বসবাসের পারমিটের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তারা সম্ভাব্য সাইবার অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ আটকদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ পরিচালনার অভিযোগ আনতে পারবে না বলে জানান গোদাম।
তিনি বলেন, 'পরিদর্শনের সময় আমরা জানতে পারি যে তারা মালয়েশিয়ায় লোকজনকে টার্গেট করছে। তারা ইন্দোনেশিয়ায় তাদের কার্যক্রম করেছে কিন্তু ভুক্তভোগীরা অন্য দেশে রয়েছে, তাই অপরাধের প্রমাণ পাওয়া কঠিন।’
শিগগিরই আটক ১০৩ জনকে ফেরত পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত বুধবার তাবানান জেলার কুকুহ গ্রামের একটি ভিলায় অভিযান চালিয়ে ৯১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীকে আটক করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। এ সময় কম্পিউটার ও মুঠোফোনও জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক সিলমি করিম বলেন, ‘তাদের কাছে কাগজপত্র না থাকা এবং অভিবাসন পারমিটের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পাওয়া কম্পিউটার ও সেলফোনের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সাইবার অপরাধের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কর্মকর্তারা জানান, তাদের সবাইকে বালির দেনপাসারের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসন মহাপরিচালক বালিতে বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে আরেকটি যৌথ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। বিদেশিরা দ্বীপে নিয়ম মেনে অবস্থান করছে কি না তা নিশ্চিত করতে এবং শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই অভিযান চালানো হবে।
৫২৪ দিন আগে
সিলেটে সাইবার অপরাধ চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার: র্যাব
সিলেটে সাইবার অপরাধ চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২৬ মার্চ) সকালে নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধ চক্রের অন্যতম মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯।
গ্রেপ্তার মো. রুমেন হোসেনকে (২৩) সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার কুমারকান্দি এলাকার মৃত আফরোজ মিয়ার ছেলে।
র্যাব-৯ জানায়, রুমেন শামীমাবাদ এলাকার একটি তিনতলা বাসা ভাড়া করে নিচতলায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। অভিযানকালে তার কাছ থেকে সাইবার অপরাধের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার সিপিইউ, একটি কি-বোর্ড, একটি মাউস, একটি কম্পিউটার মনিটর, তিনটি স্মার্ট ফোন ও চারটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
র্যাব সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার যুবক তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোবাইল কল ডাটা (সিডিআর) এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে অর্থের বিনিময়ে মানুষের নিকট সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
রুমেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে জব্দ আলামতসহ সোমবার কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় 'প্রলয় গ্যাংয়ের' দুই সদস্য গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়ায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমডির গাড়িচালক হত্যা: প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
৯৮৩ দিন আগে