ফ্যাসিবাদ
ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে সরকার: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বিরোধী দল দমন-পীড়নে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার বিচার বিভাগকে এর প্রধান ও বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে জনগণের মৌলিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন ও সংগ্রাম রুখে দিতে বিচার বিভাগের চরম হয়রানি ও দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে জাতিকে সীমাহীন সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ‘হামলার’ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের জানাল বিএনপি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং চলমান আন্দোলনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যেই আদালত তার বিরুদ্ধে 'নির্দেশিত' রায় দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে এভাবে আন্দোলন কখনো দমন করা বা থামানো যাবে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জনগণ ঘরে ফিরবে না।’
ফখরুল বলেন, জুবাইদা রহমানের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও তাকে 'মিথ্যা' মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, সব মামলায় তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা খালাস পেয়েছেন।
২০০৭ সালের এক-এগারো’র রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫টি দুর্নীতির মামলা বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: তারেক-জুবাইদার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার দেশব্যাপী বিএনপির সমাবেশ
তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আমরা বলছি, তারা (সরকার) আসলে তাদের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আদালত ও বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটা বিস্ময়কর যে বিচারিক আদালত তাকে (খালেদা জিয়া) ৭ বছরের সাজা দিয়েছেন এবং উচ্চ আদালত তা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা একই ধরনের মামলায় জামিন ও খালাস পেয়েছিলেন এবং এমনকি এখন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
ফখরুল অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগের পাশাপাশি সরকার সত্যকে দমন করতে এবং তাদের বক্তব্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে ছাত্রলীগের ‘ক্যাডাররা’ নুরের উপর জঘন্য ও অমানবিকভাবে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করেছে।
নুরের বাসভবনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা চলতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল হক নুরকে দেখতে যান ফখরুল। সেখানে তিনি নুরের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসকদের কাছে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়েছে: অভিযোগ ছেলের
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদ প্রচণ্ড আঘাত করেছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবিবার অভিযোগ করেছেন, 'বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার' ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) দেশের গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সংবাদপত্র দেখি এবং টেলিভিশন চ্যানেল দেখি, তখন মনে হয় একই মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিও ফ্যাসিবাদের ভয়ানক আক্রমণে আক্রান্ত।
এক ইফতার পার্টিতে বক্তব্যে ফখরুল বলেন, গোটা দেশ ও জাতি এক সংকটময় মোড় ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তাদের জন্য এটা খুবই বেদনাদায়ক কারণ একের পর এক সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন গণমাধ্যমসহ সর্বত্র ভয়ের পরিবেশ ছড়িয়ে দিয়েছে। ‘ফ্যাসিবাদ সফল হয় যখন সমগ্র সমাজে সন্ত্রাসের ভয় তৈরি হয় এবং যখন সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।’
আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বিএনপিপন্থী অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে ইফতারের আয়োজন করে।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই এবং বর্তমান সরকার এখন যেভাবে করছে অতীতের কোনো সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করেনি। ‘এ কারণে মিডিয়ার লোকেরা নিজেরাই সেলফ সেন্সরশিপ অনুশীলন করে। আপনারা সবাই (সাংবাদিক) এখন চিন্তা করুন এটা লেখা যাবে কি না এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মুখোমুখি হতে পারেন কিনা।’
ফখরুল বলেন, অনেক সাংবাদিক এখনও ডিএসএ-তে মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন। ‘আমি জেলে দেখেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আমাদের অনেক যুবক সেখানে আটক রয়েছে।)
আরও পড়ুন: সরকার দুর্যোগ সৃষ্টি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আড়াল করতে চাচ্ছে: তাবিথ আউয়াল
তিনি বলেন, সরকার সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে গণমাধ্যমকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য কাজ করতে পারছে না।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৪৪ জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার সময় সরকার দৈনিক দিনকালসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘মূল কথা হলো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য, কিন্তু সরকার বিষয়টি চাপা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে যেভাবে গণমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন তা একটি সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না। একটি সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন ভাষায় কথা বলতে পারেন না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা। ‘দেশের মানুষের একটাই দাবি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ। শক্তিশালী ঐক্য গড়ে এই দাবি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকার ক্ষমতাকে অন্যায় ও অগণতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘায়িত করতে চায়: মঈন খান