খুলনার উপকূলবাসী
কয়রায় অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
খুলনার কয়রা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক বেড়িবাঁধ অত্যন্ত অরক্ষিত এবং বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। বেড়িবাঁধ এমন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
এছাড়া এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ১১ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে এবং ১১ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে তা উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে স্থানীয় শত শত মানুষ
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি মিয়ানমারের রাখাইন ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
তার মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত আনার সম্ভবনা দেখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এটির বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ থাকতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার।
গত বছরের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় অশনি। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে ইতোমধ্যে দিন অতিবাহিত করছে উপকূলবাসী। এরমধ্যে আবার দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে তাদের শঙ্কা বেড়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্থানীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ২১টি জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সাত কিলোমিটারের বেশি সংস্কারকাজ চলমান। তবে এখনো ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে আছে।
এলাকাবাসী ও পাউবোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
এদিকে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়া কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে পানি সরবরাহের আটটি জলকপাট অকেজো পড়ে আছে।
শাকবাড়িয়া নদীর নয়ানী ও সুতিয়া বাজার-সংলগ্ন জলকপাটটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। জলকপাটের দুই পাশের মাটি ডেবে গিয়ে নদী থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে এমন আশংকা করছে স্থানীয়া।
শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধের পাশেই হেমলতা মন্ডলের (৫০) ঘর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁধের ওপর বসে তিনি কখনো নদীর দিকে, আবার কখনো নিজের ঘরের দিকে তাকাচ্ছিলেন।
কাছে যেতেই ধসে যাওয়া বাঁধটি দেখিয়ে বললেন, আগে দুই বার ভেঙেছে। পরে বড় বাঁধ দিলেও সেটিও কয়েক দিন আগে ভেঙে গেছে। বালু দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় এ অবস্থা। আরেকটু হলে গ্রামে পানি ঢুকবে। ভাঙন তাঁদের নিঃস্ব করেই ছাড়বে।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের গাজীপাড়া ও গাতিরঘেরী এলাকায় নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য পাউবোর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, তীব্র ভাঙনে সিসি ব্লক সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ।
উত্তর বেদকাশী থেকে দক্ষিণ বেদকাশী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধের ঢালে মাটি ধসে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও দুই পাশের মাটি সরে বাঁধ সরু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
১ বছর আগে