আরব সাগর
তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’: মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান
আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সপ্তাহের শেষের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের উপকূলে আঘাত হানবে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। এটি এ অঞ্চলের জন্য এই বছরের প্রথম তীব্র ঘূর্ণিঝড়। তাই কর্তৃপক্ষ সব ধরনের মাছ ধরার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে।
আরব সাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলরেখা বরাবর ধেয়ে আসছে।
আগামী বৃহস্পতিবার এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যানুসারে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ঝড়ের গতিপথে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং শহরগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সম্ভবত পাকিস্তানের করাচির পাশাপাশি গুজরাট রাজ্যের ভারতের দুটি বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা ও কাণ্ডলাকে প্রভাবিত করবে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষীরাও প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে।
প্যাটেল বলেন, প্রয়োজনে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্যোগের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর
পাকিস্তানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সমন্বয় মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেছেন, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বিমান ও পণ্যসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা যাওয়ার এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হওয়ার পর থেকে বিপর্যয়ই প্রথম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় যা পাকিস্তানে আঘাত হানার শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরব সাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের আর্থ সিস্টেম সায়েন্টিস্ট রঘু মুর্তুগুড্ডে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র ইতোমধ্যেই উষ্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরের তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। এই বছরের মার্চ থেকেই তীব্র ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে উষ্ণ জলবায়ুতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়বে।
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ১৯৫০ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন কাউন্সিলের সদস্য এবং ইসলামাবাদভিত্তিক সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবিদ কাইয়ুম সুলেরি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল বাড়বে এবং এড়ানো যাবে না। বিশেষ করে করাচি, মুম্বাই, ঢাকা ও কলম্বোর মতো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ উপকূলীয় শহরগুলোর জন্য আরও ভাল প্রস্তুতি এবং উন্নত নীতিমালা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে; যা জীবন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।’
২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় তাকতাই ছিল সর্বশেষ মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়, যা একই অঞ্চলের স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ে ১৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে উপকূলের ৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
১ বছর আগে