মানোন্নয়ন
শিক্ষকরা দক্ষ না হলে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়: ইউজিসি চেয়ারম্যান
শিক্ষকরা দক্ষ না হলে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, বর্তমানে উচ্চশিক্ষা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে এবং সদা পরিবর্তনশীল শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।
রবিবার (২৬ মে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (বিএসএমআরএমইউ), বাংলাদেশের নবনিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএসএমআরএমইউর নবনিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ২০ দিনের ফাউন্ডেশন কোর্সের অংশ হিসেবে ইউজিসি অডিটোরিয়ামে এ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইউজিসি
আলমগীর বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে গতানুগতিক কাজের ৫০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সম্পন্ন হবে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জলবল তৈরি করা না গেলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়বে। তাই শিক্ষকদের যুগের চাহিদা অনুধাবন করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের চাহিদা উপযোগী জনবল গড়ে তুলতে বর্তমান উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার স্থান। নতুন ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার চর্চাকে উৎসাহিত করতে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে এবং খুব শিগগিরই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব।
আলমগীর আরও বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র অনেক বড়। বর্তমানে ৬১টি পাবলিক ও ১১৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। শিক্ষার্থীর এ সংখ্যা অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। তাই বর্তমানে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ১২০০ কোটি টাকা প্রতিযোগিতামূলকভাবে উচ্চাশিক্ষায় উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করা হবে।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে বর্তমান সরকার অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এর (বিএসএমআরএমইউ) মধ্যে অন্যতম।
দেশের সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমআরএমইর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মোশাররফ হেসেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রফেশনাল ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তাসরীফ পারভীন সুইটি।
মত বিনিময় সভায় বিএসএমআরএমইয়ের ২১ জন নবনিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে চায় ইউজিসি
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভূমিকা রাখতে ইউজিসির আহ্বান
৬ মাস আগে
হিট প্রকল্পের প্রথম মিশন সভা: উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন ও রুপান্তরের আশাবাদ ইউজিসির
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ‘এডুকেশন এক্সিলারেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্প দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নসহ উচ্চশিক্ষার রূপান্তর, গতি ত্বরান্তিতকরণ, আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে হিট প্রকল্পের প্রথম ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট মিশন (আইএসএম) সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মঙ্গলবার(২০ জুন) ইউজিসি ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উপাচার্য ড. রুবানা হক, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার মোখলেসুর রহমান, ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়াসহ ইউজিসি, বিশ্ব ব্যাংক ও এইউডব্লিউ এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষা খাতে ১২ হাজার ২৬২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন ইউজিসি’র
প্রফেসর আলমগীর বলেন, হিট প্রকল্প দেশের শিক্ষা ও গবেষণাসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্নখাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের উচ্চশিক্ষায় গৃহীত কার্যকর উদ্যোগসমূহ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষাখাতের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং উচ্চশিক্ষা সম্পন্নকারীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করা।
এছাড়া গৃহীত এ প্রকল্পটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নের একটি বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্যে।
এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে নারীদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপক রূপান্তর ঘটাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক বলেন, হিট প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার ড. মোখলেসুর রহমান ইউজিসিকে হিট প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও ইউজিসি’র সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক এ লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে তিনি জানান।
সভা শেষে বিশ্ব ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প শুরু হবে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইউজিসি। মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্ব ব্যাংক বহন করবে।
প্রকল্পে বাজার চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা কোর্স প্রবর্তন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জন্য অ্যাকাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং দেশের উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এর কার্যাবলি বাস্তবে রুপান্তর করা, ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিযোগিতামূলক গবেষণার উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রফেসর সাজ্জাদ ও আলমগীরকে পুনরায় ইউজিসির সদস্য নিয়োগ
ইউজিসিকে কর্মমুখী পাঠ্যক্রম চালু করার আহ্বান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের
১ বছর আগে