প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
দেশীয় পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণায় সহযোগিতার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাজ্যের বিজনেস এন্ড ট্রেড স্টেট মিনিস্টার নাইজেল হাডলস্টোনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম আরএমজি রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদক এবং অভ্যন্তরীণ স্বাদু পানির মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। এছাড়া উচ্চ মানের ওষুধ, জেনেরিক ওষুধ, অনন্য পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক, আসবাবপত্র, খেলনা এবং ইলেকট্রনিক পণ্যসহ অনেক বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে দেশে। এসব পণ্য আমদানির জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী
যুক্তরাজ্য বর্তমানে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য উল্লেখ করে টিপু মুনশি জানান ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পণ্য রপ্তানি করেছে এবং যুক্তরাজ্য থেকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
তিনি বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগের উত্তম জায়গা জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রোরেলের উদ্বোধন, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজারে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতি অঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশভিত্তিক আলাদা অর্থনৈতিক জোন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছে এবং খুব শিগগিরই তৃতীয় বৈঠকে বসবে। ঢাকায় প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশ-ইউনাইটেড কিংডম ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগের অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়মিত সংলাপ আমাদের যৌথ মূল্যবোধ এবং মানদণ্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগকে আরও শক্তিশালী করতে অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, ডেভেলপিং কান্ট্রি ট্রেডিং স্কিম-ডিসিটিএস এর অধীনে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা দীর্ঘতম সম্ভাব্য সময় পর্যন্ত আমাদের ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি সুবিধার স্থিতি অব্যাহত রাখতে চাই। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশ উত্তরণের পর পরবর্তী আরও ছয় বছর শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে পাশে থাকারও আহ্বান জানান।
এসময় সফররত যুক্তরাজ্যের বিজনেস এন্ড ট্রেড স্টেট মিনিস্টার নাইজেল হাডলস্টোন তার দেশ বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশিাপশি এভিয়েশন, শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষার বিষয়ে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার চমৎকার বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে রেডিমেড গার্মেন্টস ছাড়াও বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বাজার বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় তিনি বাংলাদেশে তার দেশের ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জে মোকাবেলা করছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য অনুরোধ জানান। নির্দিষ্ট করে সমস্যার কথা জানালে সেগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠককালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহিম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা চলছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
১ বছর আগে