‘ইন্টারনেট
বিরোধী দল দমনে সরকারের ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট বন্ধ’: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে ‘ইন্টারনেট বন্ধ’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।
রবিবার (২৩ জুলাই) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে জনগণকে দমন করতে। তাদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে সরকার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে জনগণের অবিরাম ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার এবং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য সরকার একটি নতুন ডিজিটাল অস্ত্র হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করছে।’
তিনি আরও বলেন, বিরোধী নেতাদের স্মার্টফোন পর্যবেক্ষণ, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং তাদের সেল ফোন চেক করাসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে সরকার। ‘আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ করি।’
ফেনীতে মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলায় ১ হাজার ৬৫১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কাপুরুষ’ আওয়ামী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়: ফখরুল
শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নয়, মুক্তচিন্তার মানুষও এর মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়ায় সরকারের কাছে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলের দাবি জানান বিএনপি নেতা।
‘ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাগুলো নাগরিক অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন। এটি হত্যা ও জোরপূর্বক গুমের মতো অপরাধ,’ –বলেন ফখরুল।
ফখরুল বলেন, একজন ব্যক্তি যখন গুমের শিকার হন, তখন একজনই হারিয়ে যান। কিন্তু কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ এর শিকার হয়। অনলাইনে মানুষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা একটি হত্যার মতোই অপরাধ। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসন ক্রমাগত এই অপরাধ করে চলেছে।
ইন্টারনেট বন্ধসহ সব ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।
এক দফা আন্দোলন: আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি
গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে এবং গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার ঘটনা তুলে ধরেন ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, ১২ জুলাই বিএনপির সমাবেশে নয়াপল্টন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হলেও একই দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশে ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল জনসমাগমে চলছে বিএনপির ‘যুব সমাবেশ’
এই বছর ডিজিটাল রাইটস ওয়াচডগ এক্সেস নাউ-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: ২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ
তিনি বলেন, চারটি দেশ- ভারত ৮৪ বার, ইউক্রেন ২২ বার, ইরান ১৮ বার এবং মায়ানমার ৭ বার - বিদ্রোহ বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমন কোনো যুদ্ধ আছে কি না, যার জন্য সরকার ৬ বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে- প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা। "সরকার কাদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ চালাচ্ছে?"
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট পরিষেবা এখন মানুষের মতামত প্রকাশের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এই পরিষেবা বন্ধ করা মূলত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।’
ইন্টারনেট সেবা এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, এই সেবাগুলো আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, আউটসোর্সিং, বিদেশ ভ্রমণ, চাকরি এবং চাকরির ইন্টারভিউসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে এবং জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইন্টারনেট পরিষেবাগুলো অবরুদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণের ঘটনাগুলো ব্যক্তির নাগরিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
পুলিশ সাধারণ মানুষকে অবৈধভাবে রাস্তায় আটক করে তাদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিএনপি সমর্থকরা
১ বছর আগে