ঝিনজিয়াং বন্দিশিবির
ঝিনজিয়াংয়ে বন্দিশিবির নেই, বিদেশি গণমাধ্যমসহ সবার জন্য উন্মুক্ত: চীন
পশ্চিমা গণমাধ্যমসহ সবার জন্য ঝিনজিয়াং উন্মুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা। সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে আগ্রহী এমন যে কাউকে সাদরে গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঝিনজিয়াং পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমহাপরিচালক ঝ্যাং হুয়াঝং সাম্প্রতিক সফরের সময় এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনবিকে বলেন, ‘ঝিনজিয়াংয়ের দরজা পশ্চিমা গণমাধ্যমসহ সবার জন্য উন্মুক্ত।’
তিনি বলেন, তারা চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঝিনজিয়াং সম্পর্কে ‘আরও বিস্তৃত ও বস্তুনিষ্ঠ’ প্রতিবেদন দেখতে চান।
তাদের একটি ‘মুক্ত ও সম্যক’ মনোভাব রয়েছে উল্লেখ করে ঝ্যাং বলেন, ‘এখানে কোনো বন্দিশিবির নেই। এখানে সবাই সশরীরে এসে দেখতে পারেন। আপনারা (বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধি দল) আমাদের দৈনন্দিন জীবন দেখেছেন। ‘বন্দিশিবির’ এর মতো শব্দের ব্যবহার করা একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নয়।’
তিনি বলেন, ঝিনজিয়াংয়ের মানুষ সুখী জীবনযাপন করছে এবং এই অঞ্চল সবার জন্য উন্মুক্ত।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে ২ দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নয়নে মনোনিবেশ অব্যাহত রাখা উচিত।
চীনা সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উভয় দেশ একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বেঁচে থাকার অধিকার, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা হলো মূল মানবাধিকার।’
আরও পড়ুন: চীনের ঝিনজিয়াংয়ে 'বন্দিশিবিরের' দাবি ভিত্তিহীন: বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলকে অঞ্চলটির বৃহত্তম মসজিদের ইমাম
তিনি বলেন, তারা উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চান এবং জাতীয় স্থিতিশীলতা ও জনগণের কল্যাণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঝিনজিয়াং প্রদেশের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কর্মকর্তারা ১০ সদস্যের বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলের কাছে এসব কথা বলেন। এই প্রতিনিধি দলের সপ্তাহব্যাপী সফরের ইতি টানার আগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চীনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপ করেন- ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের উপমহাপরিচালক ইয়ান নাইমিন, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাহিত্য ফেডারেশনের সহসভাপতি উইলিজান ইয়াকুব, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নারী ফেডারেশনের সভাপতি আয়নুর মাহসেত, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জাতিগতবিষয়ক উপমহাপরিচালক (ধর্মবিষয়ক ব্যুরো) লি জিয়াং, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমিশনের উপমহাপরিচালক ইউ মিপিং, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিপিসির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের ধর্মবিষয়ক বিভাগের পরিচালক চু জিয়ান, ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন ব্যুরোর প্রধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপক মা ঝিবিন, ঝিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক লি জিয়াওডং, শিক্ষার পররাষ্ট্র বিভাগের উপপরিচালক কিন শান এবং ঝিনজিয়াং পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক গু মেই।
কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয়ের অধিকার রক্ষায় পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চীন সরকার। একই সঙ্গে ঝিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, সরকার প্রণীত আইন ও প্রবিধান জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি সব ধর্মের অনুসারীদের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।
আরও পড়ুন: খরচ ও শ্রম কমাতে চীনা বর্ষজীবী ধান চাষ করতে পারে বাংলাদেশ
ঝিনজিয়াং প্রদেশের জনগণের একটি বড় অংশ মুসলিম এবং মিডিয়ার একটি অংশে অভিযোগ রয়েছে যে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন এই অঞ্চলে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঝ্যাং বলেন, ‘যা সম্পূর্ণ মনগড়া… চীনবিরোধী শক্তিগুলো চীনের অর্জিত বিস্তৃত গণমুখী সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য এসব অপপ্রচার করছে।’
লি জিয়াং বলেন, এ অঞ্চলের জনগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করে থাকে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, তারা নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুরোপুরি সম্মান করেন এবং রক্ষাও করেন। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।
চু জিয়ান বলেন, নীতি নির্ধারণী ফোরামে জাতিগত সংখ্যালঘুদেরও যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
ইয়ান নাইমিন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও সংগীতের প্রচার করে আসছি। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ঝিনজিয়াং ভ্রমণ করা খুব সুবিধাজনক।’
এলিজান ইয়াকুব বলেন, সিপিসি সাহিত্য ও লোককাহিনির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে এবং প্রতি বছর এই উদ্দেশ্যে ১০ মিলিয়ন আরএমবি (ইউয়ান) বরাদ্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘জাতিগত ঐক্য জোরদার করতে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জন্য সংস্কৃতি ও সাহিত্যের উন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
আইনুর মাহসেত বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ নারী ও শিশুদের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়।
তিনি বলেন, উইঘুরের স্থানীয় সরকার মা ও শিশুর স্বাস্থ্য কল্যাণে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সরকারের আইন ও প্রবিধান নারী ও শিশুদের অধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়।
তিনি আরও বলেন, দল ও সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র ও ফোরামে বিপুল সংখ্যক নারী অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন- দৈনিক যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের উপসম্পাদক টিটু দাস গুপ্ত, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিবেদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের কূটনৈতিক প্রতিবেদক পরিমল পালমা, ইউএনবির বিশেষ প্রতিবেদক একেএম মঈনুদ্দিন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিশেষ প্রতিবেদক নাফিজা দৌলা, এটিএন নিউজের প্রধান প্রতিবেদক আশিকুর রহমান অপু, দৈনিক সমকালের কূটনৈতিক প্রতিবেদক তাসনিম মহসিন মিশু, যমুনা টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আহমেদ রেজা এবং সময় টিভির কূটনৈতিক প্রতিবেদক তাজওয়ার মাহমিদ।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে: চীনা কর্মকর্তা
১ বছর আগে