সংখ্যালঘু নেতা
সংসদে জামায়াতের অনুপস্থিতির প্রশংসায় সংখ্যালঘু নেতারা
সম্প্রতি ঢাকায় এক সভায় গতমাসে(৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নবগঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর অনুপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬০ জনেরও বেশি নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর ফলাফল মূল্যায়নের জন্য দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভাটি বলছে, অতীতে তারা(জামায়াত) যখন বিএনপির সঙ্গে জোট করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এবং সংসদে দেওয়া বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালিয়েছেন। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে তারা দলটির(জামায়াতের) সংসদ থেকে দূরে থাকাকে 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির' ভবিষ্যতের জন্য 'আশা এবং ভরসা জাগানোর' নতুন কারণ হিসাবে অভিহিত করেন।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এমন একাধিক নেতার কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানোর পর জামায়াত বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সরকার নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিলে দলটির প্রধান মিত্র বিএনপি ভোট বর্জন করে।
সভায় বলা হয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির অবরোধ ও আহমদিয়াসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা চালানোর লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে জামায়াত।
বৈঠকে হতাশার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, জোট এখনও একই ধরনের দাবিতে অটল রয়েছে।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে শরিয়াহ আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেয়ার পরও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষমতার জন আন্দোলনে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বলে বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।
বৈঠকে একাধিক বক্তা জোটকে পাকাপোক্ত করার উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বজায় রাখার বহুল প্রচারণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য নির্বাচন পরিচালনাকে একটি অপরিহার্য নির্দেশক বলে মনে করেন এবং ফলাফলটি সংখ্যালঘু ভোটারদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে। বেশি পরিমাণ ভোটারদের অংশগ্রহণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে প্রমাণ করে বলেও মনে করেন তারা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া মানবাধিকার কর্মী রঞ্জন কর্মকার বলেন, ক্ষমতার দৃঢ়তা পাকাপোক্ত করতে জামায়াত ও বিএনপির পাঁচ দশকের সাম্প্রদায়িক কার্ডের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার বিষয়ে সজাগ থাকুন: শিক্ষামন্ত্রী
তিনি বলেন, নির্বাচনে না এসে রাজপথে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে তারেক রহমানের আহ্বানের নিন্দা জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত বক্তাদের অনেকেই।
বাংলা ভাইয়ের মতো উগ্র ধর্মীয় জঙ্গি ও ধর্মান্ধদের প্রতি তার ঐতিহাসিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞ চালানো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দায়মুক্তি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন নেতারা।
প্লাটফর্মটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্মকার বলেন, এ ধরনের অপরাধের নতুন করে অস্বীকার করাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানকে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয়দানের ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
এর আগে ছয় মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের চিঠির মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অবস্থা ভয়াবহ হিসেবে তুলে ধরার বিএনপির প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তারা আরও মন্তব্য করেন, 'বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার জন্য এই জোট নির্বাচনের পরে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অনুরূপ প্রচেষ্টা শুরু করেছে।’
এই দাবির প্রেক্ষিতে ডি রোজারিও বলেন, 'আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, এই বক্তব্য বাস্তবতাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। চিঠিতে যা বলা হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
আরও পড়ুন: বিরামপুরে ‘বিক্ষোভ’ মিছিল থেকে জামায়াতের ১৬ কর্মী আটক
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে, খ্রিস্টানরা সমর্থন পেয়েছে; এটা বলা নিরাপদ যে তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রোমান ক্যাথলিক চার্চের কলেজ অব কার্ডিনালসে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হন ডি'রোজারিও।
বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ছিল দেশের সবচেয়ে বড় সহিংসতা।
সভার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০০১ সালে জিয়ার বিধবা স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং সেই আমলেও (বিএনপি জামায়াত জোট) সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল শক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা গণহত্যায় সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রায় ২৮ হাজার সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়।
তবে মঠ পোড়ানো, হিন্দু ভোটারদের ওপর হামলা ও উত্তরাঞ্চলের নারী ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনে বিএনপি ও জামায়াতের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই এসব অভিযোগকে অপপ্রচার বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন: জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি ৬ নভেম্বর
১০ মাস আগে
তারেক রহমানের আহ্বানকে ‘সহিংসতার প্ররোচনা’ বলে দাবি অধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘু নেতাদের
অর্থ পাচার ও শেখ হাসিনার উপর ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে ‘দেশের ভাগ্য ফয়সালা হবে রাজপথে’ আহ্বানের সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা।
তারা বলেছেন, এটি ‘নতুন করে সহিংসতা শুরু করার জন্য একটি প্ররোচনা।’
এ ছাড়া তারা তারেকের ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার’ তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তারা বলেন, ‘পলাতক অবস্থায় এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ।’
তারেকের ছবিসহ বিএনপির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘দেশের ভাগ্য ফয়সালা হবে রাজপথে।’
তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর বিশিষ্ট আইন, শিক্ষাবিদ এবং বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘একজন পলাতক ব্যক্তির কী সাহস! এটা বিরাট একটা উসকানি!’
তিনি বলেন, ‘বিচার এড়াতে তারেক বছরের পর বছর ধরে লন্ডনে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায় ২ আগস্ট
অধ্যাপক রহমান আরও বলেন, ‘একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের মাটিকে এ ধরনের বেআইনি কাজ করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’
তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমাদের মিশনের অবিলম্বে ব্রিটিশ সরকারের কাছে কঠোর প্রতিবাদ জানানো উচিত। বাকস্বাধীনতার ছদ্মবেশে এটাকে অনুমোদন করা যাবে না।’
আইনজীবী, অধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা রানা দাশগুপ্ত একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অতীতে বিএনপি কর্তৃক সংগঠিত সহিংস হামলার কথা বিবেচনা করে তিনি বলেন, ‘তারেকের এই বর্তমান হুমকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য গভীর উদ্বেগজনক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দাশগুপ্ত বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি মেনে চলে; তাদের প্রকাশ্যে এই ধরনের হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজপথে সহিংসতা এবং সারা দেশে সংখ্যালঘুদের উপর টার্গেটেড হামলা এখনও ভুক্তভোগীদের পীড়া দেয়।
আরও পড়ুন: তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সাক্ষ্য
দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে শতাধিক পরিবারকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সম্পত্তি লুট করা হয়েছিল এবং উপাসনালয়গুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে অসংখ্য মৃত্যু এবং সম্পত্তি ও জীবিকা ধ্বংস হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যখন তারেক ও তার মা দেশ শাসন করত সেসমযের বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা সংঘটিত সংখ্যালঘুদের উপর হামলাগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।’
২০০১ ও ২০০৬ সালের মধ্যে তারেক বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছিল। যার ফলে এফবিআই এজেন্ট দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলাসহ অর্থপাচার ও বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ‘শোষক সরকার ও সহিংস রাজনীতির’ প্রতীক আখ্যা দিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এমনকি সে সময় তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
মার্কিন দূতাবাসের একটি ফাঁস হওয়া মার্কিন দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাস বিশ্বাস করে যে তারেক ‘গুরুতর রাজনৈতিক দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা ও মার্কিন বৈদেশিক সহায়তার উদ্দেশ্যগুলোতে প্রবাব ফেলে।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষ্য
১ বছর আগে