বাড়ি-জমি
প্রধানমন্ত্রী ২২ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি-জমি দেবেন বুধবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ২২ হাজারের বেশি পরিবার অবশেষে তাদের নিজস্ব বাড়ি এবং জমি পাবে।
তাদের একজন দিনমজুর মোহাম্মদ কাশেম শেখ ৬৫ বছর বয়সে এসে বাড়ি পেয়ে আনন্দিত।
পাবনা জেলার সুজানগরে সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া তার আধা-পাকা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অন্যের বাড়িতে থাকতাম। নিজের জমিতে নিজের বাড়ি করার কথা কখনো ভাবিনি। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
তিনি বলেছিলেন যে তার পরিবার আর নির্ঘুম রাতগুলো নিয়ে চিন্তা করবে না যে তারা অন্যের ভাঙ্গা বাড়িতে কাটিয়েছে।
তিনি বলেন,‘আগামীকাল থেকে ঘুমাতে আমার কোন অস্বস্তি হবে না।’
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২২ হাজার ১০৫ পরিবারকে বাড়ি ও জমির মালিকানার নথিপত্র প্রদান করবেন।
এর মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলা এবং ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন: গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে আরও ১২ জেলা ও ১২৩ উপজেলাকে
বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মধ্যে আধা-পাকা ঘর বিতরণের উদ্বোধন করবেন এবং এই ঘোষণা দেবেন।
এর মাধ্যমে দেশের মোট ২১টি জেলা ও ৩৩৪টি উপজেলা হবে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত পরিবার।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২২ হাজার ১০১টি বাড়ির চাবি এবং দুই দশমিক দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিল পরিবারের হাতে তুলে দেবেন। তিনি বলেন, ওই দিন প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষকে বাড়িতে পুনর্বাসন করা হবে।
মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭ পরিবারকে বাড়ি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জনকে বাড়িতে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ জনের (৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারের) পুনর্বাসন করেছেন (১৯৯৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত)।
প্রায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জনকে ঘর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘বিশ্বে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত কারণ ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর ও জমি দেওয়া হচ্ছে এমন অন্য কোনো কর্মসূচি নেই।’
আরও পড়ুন: জনগণই আ. লীগের প্রভু, আর কেউ নয়: বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী
তোফাজ্জেল বলেন, শুধু বাড়ি-জমিই দেওয়া হয় না, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয় এবং তাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। ‘সুতরাং, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বড় (পুনর্বাসন) কর্মসূচি নেই। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য।’
তিনি বলেন, ভূমিহীনদের বাড়িঘর প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ফলে চরম দরিদ্র ও ভাসমান মানুষের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
এর আগে শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষ থেকে পাঁচ দফায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তর করেন।
বুধবার ষষ্ঠ পর্যায়ে বাড়ি বিতরণের সময় প্রধানমন্ত্রী তিনটি স্থানের সুবিধাভোগী এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।
তিনটি স্থান হলো খুলনার তেরখাদা উপজেলায় বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থান, পাবনার বেড়া উপজেলায় চাকলা আশ্রয়ন-২ প্রকল্প স্থান এবং নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানুল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থান।
ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত পরিবার হওয়ার গৌরব অর্জনকারী ১২টি জেলা হলো মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প
১২৩টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট; কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, নিকলী, হোসেনপুর, বাজিতপুর, মিঠামইন ও করিমগঞ্জ; টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, নাগরপুর, মির্জাপুর, কালিহাতী ও বাসাইল; মানিকগঞ্জের শিবালয়, হরিরামপুর ও সদর; মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও টঙ্গীবাড়ী; রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ; নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সদর; ফরিদপুরের বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও সদর; ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গফরগাঁও, মুক্তাগাছা ও সদর; শেরপুরের শ্রীবরদী ও সদর; জামালপুরের ইসলামপুর ও সরিষাবাড়ী; কক্সবাজারের পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ; চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও আনোয়ারা; চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া; নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ ও সদর; কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, বরুড়া, হোমনা, তিতাস, মেঘনা ও বুড়িচং; ফেনীর দাগনভূঁইয়া, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী; রংপুরের বদরগঞ্জ; দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট ও সদর।
অন্য উপজেলাগুলো হলো ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও সদর; নীলফামারীর ডোমার ও জলঢাকা; নওগাঁর আত্রাই, বদলগাছী, মান্দা, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও সদর; সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর ও কামারখন্দা; বগুড়ার গাবতলী, আদমদীঘি ও সদর; নাটোরের সিংড়া, নলডাঙ্গা ও সদর; পাবনার চাটমোহর, বেড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও সুজানগর; ঝিনাইদহ সদর; সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও সদর; যশোরের যশোর সদর; কুষ্টিয়ার খোকসা; খুলনার দিঘলিয়া; নড়াইলের কালিয়া; পিরোজপুরে পিরোজপুর সদর; ঝালকাঠি সদর; পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও গলাচিপা; বরগুনার পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী; সিলেটের বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ; মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী; হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল, লাখাই, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর; এবং সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধর্মপাশা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী দুই দফায় পঞ্চগড়, মাগুরা, মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গার ৯টি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত জেলা ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে টেকসই ঘর পাবে প্রায় ৬৫,৪৭৪ পরিবার
১ বছর আগে