ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে আইনের সঙ্গে সচেতনতা জরুরি: বাণিজ্যমন্ত্রী
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভোক্তাদের অধিকতর সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ ছায়া সংসদের আয়োজন করে যৌথভাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভোক্তাদের যেমন তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে তেমনি ব্যবসায়ীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে। মূল্যবোধের অবক্ষয় নয় বরং জাগরণ দরকার। দাম না কমালে আমদানি করা হবে এমন হুঁশিয়ারি দিলেই দাম কমে। রমজান মাস এলেই পণ্যের দাম বাড়ে। এগুলো পরিহার করতে হবে। ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অনেকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির প্রায় চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এগুলো ছাড়াও যে কোনো পণ্য আমদানি করা হলে ব্যবসায়ীদের মুনাফা রেখেই ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তারপরও দেখা যায় অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রয় করে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে অসৎ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে শুধু আইন প্রয়োগ করে দমন করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, খাদ্য সংকট হবে এই চিন্তা করে অতিরিক্ত মজুদ করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এইটা করেন থাকেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে সব পণ্যে পর্যাপ্ত আছে। কৃষি বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশ অনেক পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কোনো পণ্যের সংকট পড়লে সরকার আমদানি করে থাকে। সরকার সবসময় চেষ্টা করে যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আবার ভোক্তারাও যেন সহজে পণ্য ভোগ করতে পারে।
আরও পড়ুন: ব্যবসা-বাণিজ্যে এশিয়া অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
মন্ত্রী আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে খাদ্য পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এটা শুধু আমাদের দেশে নয় বিশ্বের সব দেশেই বেড়েছে।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্টের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। সারাদেশে এক কোটি পরিবার কার্ডধারীদের মাঝে তেল, ডাল ও চালসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকার বিশাল অংকের ভর্তুকি দিয়ে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিম বা মুরগি অথবা পেঁয়াজ কিংবা কাঁচা মরিচের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। এগুলোর উৎপাদন, চাহিদা অন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকে। সরকার এসব পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সে অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে কি না- তা ভোক্তা অধিকার তদারকি করে থাকেন। কিন্তু যেকোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে অভিযান পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন সে পরিমাণ জনবল তাদের নেই। আমরা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এই দপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকা দরকার। নিজস্ব কর্মকর্তাদের অথবা যারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন এধরনের কর্মকর্তাদের ভোক্তা অধিদপ্তরে পদায়ন করা যায় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: দেশে প্রথমবারের মতো ৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে দেওয়া হবে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’: বাণিজ্যমন্ত্রী
মক পার্লামেন্টে স্পিকার ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
প্রথমদিনে ‘শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়‘ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে ইডেন মহিলা কলেজ এবং বিপক্ষে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে ইডেন মহিলা কলেজ বিজয় লাভ করে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
১ বছর আগে