৮৯
মাউই দাবানল: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯
ঐতিহাসিক মাউই শহর বিধ্বংসী দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ জনে পৌঁছেছে। তবে নিহতদের লাশ অনুসন্ধান এবং শনাক্ত করার প্রচেষ্টা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মাউই পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার বলেছেন, কুকুরের অনুসন্ধানী দল ওই অঞ্চলের মাত্র তিন শতাংশ এলাকায় অনুসন্ধান করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫ বর্গমাইল এলাকায় অনুসন্ধান চালাতে হবে, যেখানে আমাদের প্রিয়জনের কেউ থাকতে পারে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আমাদের কেউই এটির সত্যিকার আকার বা পরিধি জানি না।’
আরও পড়ুন: দ. কোরিয়ার সমুদ্রতীরবর্তী শহরে দাবানল, পালিয়েছে শত শত মানুষ
তিনি বলেন, ফেডারেল জরুরি সেবা কর্মীদের তোলা ছবিতে লাহাইনার ধ্বংসস্তুপের দৃশ্যে ধরা পড়ে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দলগুলো উজ্জ্বল কমলা ক্রস চিহ্ন দিয়ে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেছে । যখন তারা মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে তখন ‘এইচআর’ চিহ্ন দিয়েছেন।
পেলেটিয়ার বলেন, মৃতদের শনাক্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কারণ যখন কোনো দেহাবশেষ খুঁজে তাদের তুলে নিই, তখন সেগুলোর শরীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অধিকাংশ দেহাবশেষ গলিত ধাতুর মতো অবস্থায় পাওয়া যাচ্চে। এখন পর্যন্ত দুইজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কুকুরগুলো ধ্বংসস্তূপে কাজ করেছিল এবং তারা মাঝে মাঝে একটি সম্ভাব্য মৃতদেহ সম্পর্কে তাদের হ্যান্ডলারদের সতর্ক করছিল।
শনিবার গভর্নমেন্ট জশ গ্রিন ঐতিহাসিক ফ্রন্ট স্ট্রিটের বিধ্বংসী এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেন , ‘এটি অবশ্যই সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর আগে হাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। আমরা কেবল অপেক্ষা করতে পারি এবং যারা বেঁচে আছে তাদের সমর্থন করতে পারি। আমারা এখন উদ্ধার করা লোকদের তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তাদের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবার দিকে গুরুত্ব দেব।’
গ্রিন বলেন, পশ্চিম মাউইতে কমপক্ষে ২ হাজার ২০০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। যার মধ্যে ৮৬ শতাংশই আবাসিক।
তিনি আরও বলেন, দ্বীপটিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ বিলিয়ন। এটি পুনরুদ্ধার করতে ‘অবিশ্বাস্য পরিমাণে সময়’ লাগবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর আগেও মাউই কমপক্ষে দুবার আগুনে পুড়েছে। তবে সেগুলোতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় চতুর্থটি লাহাইনার উত্তরে একটি উপকূলীয় সম্প্রদায় কানাপালিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তবে ক্রুরা এটি নিভিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
আরও পড়ুন: হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে দাবানলে ৫৩ জনের মৃত্যু: গভর্নর
গ্রিন বলেন, আপকান্ট্রিতে অগ্নিকাণ্ডে ৫৪৪টি কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৯৬ শতাংশই আবাসিক।
মাউইতে জরুরি ব্যবস্থাপকরা তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের থাকার জায়গাগুলো সন্ধান করছিলেন। ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি এবং প্যাসিফিক ডিজাস্টার সেন্টারের পরিসংখ্যানকে উদ্ধৃত করে কাউন্টি কর্মকর্তারা শনিবারের প্রথম দিকে ফেসবুকে বলেছেন, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষের আশ্রয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের পরিবার সহায়তা কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করেন।
পেলেটিয়ার বলেছেন, ‘আপনাদের স্বজনদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।’
অবসরপ্রাপ্ত দমকল কর্মী ক্যাপ্টেন জিওফ বোগার এবং তার ৩৫ বছরের বন্ধু ফ্র্যাঙ্কলিন ট্রেজোস লাহাইনায় অন্যদের সাহায্য করতে এবং বোগারের বাড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালের দিকে আগুনের শিখা যতই কাছে চলে আসরে তারা বুঝতে পারেন, তাদের বের হতে হবে। এজন্য প্রত্যেকে নিজ নিজ গাড়িতে পালিয়ে যান। কিন্তু বোগারের গাড়ি চালু হচ্ছিল না। তখন তিনি একটি জানালা ভেঙে বেরিয়ে পড়েন। তারপর মাটিতে হামাগুড়ি বেরোনোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় পুলিশ টহল তাকে খুঁজে পায় এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ট্রেজোস ভাগ্যবান ছিল না। পরের দিন যখন বগার ফিরে আসেন, তখন তিনি তার গাড়ির পেছনের সিটে তার ৬৮ বছর বয়সী বন্ধুর হাড় দেখতে পান। উদ্ধারকারীরা দেখতে পায় বোগারের প্রিয় ৩ বছর বয়সী কুকুর স্যামের দেহাবশেষের উপরে পড়ে আছেন তিনি। তিনি রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন।
সদ্য প্রকাশিত মৃতের সংখ্যা উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় ২০১৮ সালের ক্যাম্প ফায়ারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এবারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ জনে এবং ধ্বংস করেছে প্যারাডাইস শহরকে। এক শতাব্দী আগে ১৯১৮ সালের ক্লোকেট অগ্নিকাণ্ডে উত্তর মিনেসোটাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে এবং শত শত মানুষ নিহত হয়।
দাবানলগুলো কয়েক দশকের মধ্যে রাজ্যের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যা ১৯৬০ সালের সুনামিতে ৬১ জনের মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৪৬ সালে আরও একটি মারাত্মক সুনামিতে বিগ আইল্যান্ডে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। একটি অঞ্চল জুড়ে মাসব্যাপী সাইরেন বাজানোসহ জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছিল।
হাওয়াই ফায়ারফাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ববি লি বলেন, ৬৫টি কাউন্টির ফায়ারফাইটার কাজ করছে, যারা মাউই, মোলোকাই ও লানাই দ্বীপে কর্মরত।
গ্রিন বলেন, কর্মকর্তারা নিরাপত্তা উন্নত করতে নীতি ও পদ্ধতি পর্যালোচনা করবেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ জিজ্ঞাসা করেছে কেন এমন হলো, কী ঘটছে তা পর্যালোচনা করছি। এর কারণ হলো বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে। একটি ঝড় এখন হারিকেন-আগুন বা অগ্নি-হারিকেন হতে পারে।’ ‘এটিই আমরা অনুভব করেছি, তাই আমরা কীভাবে আমাদের জনগণকে সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করতে পারি তা খুঁজে বের করার জন্য আমরা এই নীতিগুলো অনুসন্ধান করছি।’
আরও পড়ুন: তাপ, দাবানল ও বন্যা গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে
১ বছর আগে