ইথিওপিয়ান
বাংলাদেশে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুরু
আদ্দিস আবাবা-ঢাকা-আদ্দিস আবাবা রুটে উদ্বোধনী ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলো আফ্রিকার শীর্ষ উড়োজাহাজ সংস্থা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।
রবিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৯০০ ড্রিমলাইনার, ফ্লাইট ইটি ৬৭৮ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের রানওয়ে স্পর্শ করে। এসময় একটি জলকামান স্যালুট ফ্লাইটটিকে স্বাগত জানায়।
ঢাকা থেকে ফিরতি ফ্লাইটটি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আদ্দিস আবাবার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এই রুটে নিয়মিত উড়োজাহাজগুলো রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে। এছাড়া অতিরিক্ত ফ্লাইট প্রতি সোমবার ও শুক্রবার সকালে ঢাকা ছাড়বে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া।
ইথিওপিয়ান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইথিওপিয়ান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক গেটাচিউ মেনগিস্টি আলেমায়েহু ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন গ্রুপের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার লেম্মা ইয়াদেচার।
আরও পড়ুন: ৩ নভেম্বর ঢাকার রানওয়ে স্পর্শ করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স
কার্যক্রম শুরুর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় ক্যারিয়ার হিসেবে স্বীকৃত এবং বাংলাদেশে এর প্রবেশ দেশের এভিয়েশন শিল্পের জন্য একটি নতুন আশার আলো। বাণিজ্য, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে নতুন পথের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি আরও বলেন, এই অংশীদারিত্ব নতুন সুযোগের পথ প্রশস্ত করবে এবং বাংলাদেশ ও আফ্রিকার গতিশীল অর্থনীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে।
ইথিওপিয়ান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির ডিরেক্টর জেনারেল আলেমায়েহু ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের মূলমন্ত্র-মহাদেশ, সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়গুলোকে সংযুক্ত করার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দুই দেশের মধ্যে আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের ওপর রুটের প্রভাবের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে কেবল সরাসরি সংযোগই নয়, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা জুড়ে মূল গন্তব্যগুলোর প্রবেশদ্বারও উন্মোচন করে।
ইয়াদেচা বলেন, 'বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও ক্রমবর্ধমান বাজার এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের আধুনিক বহর ও ব্যতিক্রমী পরিষেবা দুই অঞ্চলের মধ্যে ভ্রমণকারীদের চাহিদা পূরণ করবে।’
বাংলাদেশে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট রিদম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহাগ হোসেন বলেন, এটি কেবল একটি ফ্লাইট চালু নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বকে আরও কাছাকাছি আনার একটি সুযোগ তৈরি হলো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া এবং একটি বিশাল বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য পছন্দের হতে চলেছে।
সোহাগ হোসেন জানান, নতুন এই রুটটি বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক সংযোগ দেবে। আদ্দিস আবাবার মাধ্যমে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার প্রধান শহরগুলোতে সাশ্রয়ী ভাড়ায় পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের সদস্য (অপারেশনস ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহবুব খান ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।
আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন নেটওয়ার্ক ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। এই রুটে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দিয়ে সেবা পরিচালনা করবে এয়ারলাইন্সটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর সংঘাতে ইউরোপীয় এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট স্থগিত
২ সপ্তাহ আগে
সৌদি সীমান্তরক্ষীর গুলিতে শতাধিক ইথিওপিয়ান অভিবাসী নিহত: দাবি মানবাধিকার সংগঠনের
সৌদি আরবের সীমান্ত রক্ষীরা ইয়েমেন থেকে দেশে প্রবেশের চেষ্টা করা ইথিওপিয়ানদের উপর মর্টার নিক্ষেপ ও মেশিনগান দিয়ে গুলি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতাধিক নিরস্ত্র অভিবাসী নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সৈন্যদের হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং অভিবাসীদের প্রবেশের পথে মৃতদেহ ও সমাধিস্থলের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা 'হাজার হাজার' হতে পারে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদি আরবের দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উপর সেনাদের গুলি বর্ষণের বিষয়ে জাতিসংঘ এরই মধ্যে সৌদি আরবকে প্রশ্ন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৌদি সরকারের একজন কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন এবং অনির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর ভিত্তি করে করা’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি এই দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেননি। সীমান্তে অভিবাসীদের পাচার করে সপ্তাহে কয়েক হাজার ডলার উপার্জন করছে- ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ইথিওপিয়ান সৌদি আরবে বাস করছে। যাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ অনুমোদন ছাড়াই দেশটিতে প্রবেশ করেছে। ইথিওপিয়ার উত্তর টাইগ্রে অঞ্চলে দুই বছরের গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুব বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা সৌদি আরব, আদ্দিস আবাবার সঙ্গে আলোচনা করে হাজার হাজার ইথিওপিয়ানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৩৮ জন ইথিওপিয়ান অভিবাসী এবং তাদের চারজন আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল। তারা বলেছেন, সৌদি সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের উপর গুলি করেছে বা অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষদের উপর বিস্ফোরক ছুঁড়তে দেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রুপটি ২০২১ সালের ১২ মে এবং ২০২৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ৩৫০টিরও বেশি ভিডিও এবং ফটোগ্রাফ বিশ্লেষণ করেছে এবং অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে স্যাটেলাইট ধারণ করা কয়েকশ বর্গকিলোমিটার (মাইল) এলাকার চিত্রও পরীক্ষা করেছে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে মার্কিন কনস্যুলেটে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'শরণার্থী শিবির ও চিকিৎসা কেন্দ্রে মৃত ও আহত অভিবাসীদের দেখা গেছে। এ ছাড়া অভিবাসী শিবিরের কাছেই কবরস্থানগুলো কীভাবে বাড়ছে, সৌদি আরবের সীমান্ত নিরাপত্তা অবকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং সীমান্ত পারাপারের জন্য অভিবাসীরা বর্তমানে যেসব পথ ব্যবহার করছে তাও দেখা গেছে।’
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস -এর বিশ্লেষণ করা প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি থেকে ২৭ এপ্রিলের একটি স্যাটেলাইট ছবি সৌদি সীমান্তে ইয়েমেনের আল-রাকউয়ের কাছে অধিকার সংস্থাগুলোর চিহ্নিত করা একই তাঁবুর কাঠামো দেখায়। সীমান্তের ওপারে সৌদি আরবে দুই স্তরের বেড়া দেখা যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আল-থাবিতে অভিবাসী শিবির হিসেবে চিহ্নিত করা স্থানকে স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা চিত্রগুলোতেও দেখা যেতে পারে, যা গ্রুপের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। যে ক্যাম্পটি মূলত এপ্রিলের শুরুতে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের দুটি এলাকাতেই দেশটির হুথি বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি। জাতিসংঘ বলেছে, হুথি-নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন অফিস ‘পরিকল্পিতভাবে অভিবাসীদের সৌদি আরবে সরাসরি পাঠানোর জন্য পাচারকারীদের সহযোগিতা করে’ এবং সপ্তাহে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হুথিরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে রেখেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুথিদের রাজধানী থেকে উচ্ছেদ না করে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং হুথিদের মধ্যে লড়াই মূলত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ রিয়াদ যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজছে। এ ছাড়া যুদ্ধের বছরগুলোতে, হুথিরা এই পাহাড়ি অঞ্চলে সৌদি সীমান্ত জুড়ে একাধিক অনুপ্রবেশের দাবি করেছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরার সুযোগ দিতে সৌদির উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রদূতের অনুরোধ
ইথিওপিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা সৌদি আরব ও ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় নিজেদের আটক, নির্যাতিত এবং এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ইয়েমেন থেকে আসা অভিবাসীদের উপর সৌদি বাহিনী হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ বাড়ছে।
২০২২ সালের ৩ অক্টোবর জাতিসংঘের কাছ থেকে দেশটির কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলেছে, এর তদন্তকারীরা ‘সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আন্তঃসীমান্ত এলাকায় কামানের গুলি এবং ছোট অস্ত্রের গোলাগুলির অভিযোগ পেয়েছে। এতে ৪৩০ জনের মৃত্যু ও ৬৫০ জন অভিবাসী আহত হয়েছে।’
জাতিসংঘের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যদি কোনো অভিবাসী আটক হন তাহলে তাদের প্রায়শই লাইনে দাঁড় করিয়ে এবং পায়ের পাশ দিয়ে গুলি করে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এমনকি বুলেটটি কতদূর যাবে তা দেখার জন্য। এ ছাড়াও তারা হাতে বা পায়ে গুলি করতে পছন্দ করে কি না তাও জিজ্ঞাসা করা হয়।’ ‘এই ধরনের আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা পালানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য 'মৃতের ভান করেন' বলে জানিয়েছেন।’
সৌদি আরব সীমান্তে ‘পরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ ‘স্পষ্টভাবে খণ্ডন’ করে মার্চ মাসে জেনেভায় জাতিসংঘে দেশটির মিশনে একটি চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়াও চিঠিতে আরও বলেছে, জাতিসংঘ ‘সীমিত তথ্য’ সরবরাহ করেছে তাই এই ‘অভিযোগগুলো নিশ্চিত বা প্রমাণিত নয়।’
আরও পড়ুন: সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক 'ঠিক দিকেই এগোচ্ছে': ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১ বছর আগে