ব্র্যাকি থেরাপি
চমেকে ২১ দিন ধরে বন্ধ সিটি স্ক্যান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন গরিব অসহায় রোগীরা। গত ২১ দিন ধরে বন্ধ সিটি স্ক্যান পরীক্ষা। কিন্তু চালু করার উদ্যোগ নেই।
জানা গেছে, শুধু সিটি স্ক্যান নয় বন্ধ রয়েছে- এমআরই, ব্র্যাকি থেরাপি, ক্যাথল্যাব। অচল রয়েছে ডজন খানেক মেশিন।
৪ আগস্ট মেশিনের পার্টস নষ্ট হওয়ার ফলে গরিব রোগীদের প্রতিদিন হাসপাতালের বাইরের রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে সিটি স্ক্যান করাতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেশি টাকা ব্যয় এবং দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে চমেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা সেবা শুরু হয়। এভাবে টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেবা অব্যাহত থাকে। তবে ওই বছরই আগস্ট মাসে পুরোনো সিটি স্ক্যানটি অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর ৪ বছর সিটি স্ক্যান বন্ধ থাকে হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: চমেকে ১৫০ শয্যার বার্ন ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ-চীন চুক্তি সই
পরে ২০১৮ সালে নতুন একটি সিটি স্ক্যান বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আরও এক বছর পর ১৯ সালের দিকে নতুন মেশিনের সেবা চালু হয়। এভাবে চলছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। মাঝে কয়েকবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার এসে ঠিক করে দেয়। সর্বশেষ চলতি মাসের ৬ জুন মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে মাসের ২৩ জুন মেশিনটি সচল হয়। কিন্ত কয়েক দিন না যেতে ৪ আগস্ট তা আবার বন্ধ হয়ে যায়।
সিটি স্ক্যান সচল থাকতে প্রতিদিন ৫০ জনের পরীক্ষা করানো যেত। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলত এই সেবা। পরীক্ষা ভেদে সিটি স্ক্যান বাবদ চমেক হাসপাতালে ফি ২ হাজার ও ৪ হাজার টাকা। কিন্তু চমেক হাসপাতালের ২ হাজার টাকার এ ফি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৩ হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর হাসপাতালের চার হাজার টাকার এ ফি বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চলে যাচ্ছে রোগীদের।
জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত সালমা বেগম চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে যান। চিকিৎসক তাকে ৩টি পরীক্ষা দেয়। তারমধ্যে সিটি স্ক্যান, আরও একটি পরীক্ষা এভারকেয়ারে করতে পরামর্শ দেন। ব্র্যাকি-থেরাপি ঢাকা গিয়ে করতে পরামর্শ দেন। কারণ এটি চট্টগ্রামে আরও কোথাও নেই। আগে চমেক হাসপাতালে করা হতো। মেশিনটি অচল প্রায় এক বছর। তাই সেবাও বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসক দেখানো ছাড়া আরও কোনো সেবা পাওয়া যায় না হাসপাতালে। ওষুধ, পরীক্ষা সব বাইরে থেকে করতে হয়। আমাদের মতো গরিব রোগীদের দেখবার যেন কেউ নেই।
চন্দনাইশের বাসিন্দা রাকিব হাসান জানান, স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগ নিরূপণের জন্য চিকিৎসক তার সিটি স্ক্যান করাতে বলেন। হাসপাতালে সেবা বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে তার সিটি স্ক্যান করাতে হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সিটি স্ক্যান মেশিনটি স্থাপন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৯ সালের মার্চে এই সিটি স্ক্যান মেশিনটির সেবা পুরোপুরি চালু হয়। মেশিনটির ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ারেন্টির মেয়াদ রয়েছে।
চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ৬ জুন মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৩ জুন সচল করা হয়। কিন্ত চলতি মাসের ৪ আগস্ট থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে দুটো সিটি স্ক্যান। তার মধ্যে একটি দীর্ঘ বছর ধরে অচল। যেটি সচল ছিল তাও আর নেই। সব রোগীদের বাইরে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। বাড়তি টাকা যাচ্ছে। গরিব রোগীদের চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। মেশিনটি সচল করতে কাজ চলমান রয়েছে। তাও আরও কয়েকদিন লাগবে।
এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান জানান, সিটি স্ক্যানসহ অচল হয়ে পড়া সব মেশিন খুব দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি আমরা দ্রুত মেরামত করে চালু করতে পারব।
আরও পড়ুন: চমেক হাসপাতালে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ডায়ালাইসিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
চমেকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা ফের বন্ধ ঘোষণা
১ বছর আগে