অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
ফেব্রুয়ারিতে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তবর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, পরিষ্কার, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। কিছু শক্তি এখনও নির্বাচন স্থগিতের চেষ্টা করলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মৌনির সাতুরির নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের (এমইপি) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছি। রমজানের ঠিক আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে এটি অনুষ্ঠিত হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিন দশকেরও বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন শুরু হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উৎসাহ বাড়ছে।’
তরুণ ভোটাররা রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘১৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো তাদের মধ্যে অনেকে ভোট দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন সূচনা প্রত্যক্ষ করবে। এটি আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় চিহ্নিত করবে– জাতির জন্য একটি নতুন যাত্রা।’
ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
কোনো সরকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করতে পারে না: অধ্যাপক ইউনূস
সফররত আইনপ্রণেতারা আশা করেন, আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে। একজন আইনপ্রণেতা গত ১৪ মাসে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার দলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
৭৮ দিন আগে
‘জুলাই সনদ’ একটি ঐতিহাসিক অর্জন, এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে: অধ্যাপক ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই সনদ’ একটি ঐতিহাসিক অর্জন, যা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, স্বাধীনতা এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিশ্চিত করবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর করবে এবং এর বাস্তবায়নে একমত হবে, কারণ এটি নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন, জাতীয় সম্পদ ও সক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
‘ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সব রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে,’ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
‘সংস্কারের দিক থেকে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছেছি,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ’ শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসেই নয়, বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
‘শুধু দলিল নয়, এই সনদ তৈরির প্রক্রিয়াটিও স্মরণে রাখা হবে,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
জাতির পক্ষ থেকে অধ্যাপক ইউনূস সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের প্রতি, বিশেষ করে এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক আলী রিয়াজের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
তিনি জানান, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী উন্মুখ: প্রধান উপদেষ্টা
‘মতপার্থক্য সত্ত্বেও সব দলের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্মিলিত প্রয়াস ছিল,’ বলেন ইউনূস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই ঐকমত্যের ভিত্তিতেই শিগগির রাজনৈতিক দলগুলো ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে একমত হবে।
তিনি বলেন, নিশ্চিত করতে হবে, কোনো ভবিষ্যৎ সরকার যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে।
‘রাষ্ট্রকে এমনভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদের যেকোনো লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে দমন করা যায়—যাতে আর কখনো ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয়, এত জীবন হারাতে না হয়, আর কখনো একটি গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়োজন না হয়,’ বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং বহু সংকটের সমাধান হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত আলোচনা সফলভাবে শেষ হয়েছে, যা অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে বলেও জানান তিনি। ড. ইউনূস বলেন, এক বছর আগে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন দেশ ছিল ১৬ বছরের ধ্বংস ও লুটপাটে বিপর্যস্ত। তখন অনেকেই বিশ্বাস করেননি যে এই অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
‘কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমরা এমন অগ্রগতি করেছি, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাওয়ার,’ বলেন ইউনূস। তিনি জানান, এখন সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে এগোচ্ছে।
দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালে আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে ‘জুলাই ঘোষণা’ এবং ‘জুলাই সনদ’।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতির সামনে উপস্থাপন করে ‘জুলাই ঘোষণা’। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই ঘোষণায় জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি জানান, সরকার সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি মূল দায়িত্ব সামনে রেখে কাজ করছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ সারাদেশে দেয়ালে তাদের দাবি ও প্রত্যাশা লিখে গেছেন। এর মূল দাবি ছিল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার। এই লক্ষ্য পূরণে সরকার গঠন করে একাধিক সংস্কার কমিশন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মূল কমিশনগুলোর দেওয়া সুপারিশের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে বহু স্বল্পমেয়াদি ও জরুরি সংস্কার বাস্তবায়ন করেছি।’
এই সংস্কারগুলো অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনে গতি আনবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াবে; দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি কমাবে বলে জানান তিনি।
দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে সরকার গঠন করে জাতীয় সমঝোতা কমিশন। অধ্যাপক ইউনূস জানান, ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোট এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এবং তাদের মতামত দিয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে দুই মাসে ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন। রাজনৈতিক ঐকমত্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ১৯টি মৌলিক সংস্কার নির্ধারণ করে।
পরবর্তী ২৩ দিনের আলোচনায় এই ১৯টি বিষয়ের প্রায় সব কটিতেই ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। তবে কিছু বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত রয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক ইউনূস।
এ সময়ে তিনি জুলাইয়ের শহীদদের জাতির গর্বিত সন্তান অভিহিত করে শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করেন। ‘জুলাইয়ে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে চিঠি দেব: প্রধান উপদেষ্টা
গত এক বছরে জাতি অনেক সংকট ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ‘কয়েকটি দুর্ঘটনা ও শোকাবহ ঘটনা আমাদের গভীরভাবে আঘাত করেছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি এবং অগ্নিকাণ্ডে আহতদের কথা স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমাদের নিষ্পাপ শিশুরাও প্রাণ হারিয়েছে। যারা এখনো চিকিৎসাধীন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের চিকিৎসক ও নার্সেরা আহতদের সহায়তায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জানিয়ে তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে যারা রক্ত দিয়ে সহায়তা করেছেন, তাঁদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
১২০ দিন আগে
নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী উন্মুখ: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়, আমাদের অবশ্যই সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন, একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাহিরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
‘আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে— তার সবগুলোর নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনও দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী— তা জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না।’
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে চিঠি দেব: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এই অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সকল পরামর্শ, সকল মতামত, সকল আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।’
এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনোকিছুতেই যেন তরুণরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন।’
আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিক যেন নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারো কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
‘নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনি এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন, তবে এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচনি এলাকা পরিদর্শন করুন। যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই অতি মূল্যবান অধিকার ফিরে পেলাম, ভোটটা দেবার আগ মুহূর্তে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।’
আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস
তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভোটের দিন এসে পড়বে। বহু বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। এবার আমরা সবাই ভোট দেবো। কেউ বাদ যাবে না। সবাই যেন বলতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম। আমার ভোটেই দেশটা সেপথে রওনা হতে পেরেছিল।’
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে সব নাগরিকের কাছে আমার আহ্বান, আসুন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।’
১২১ দিন আগে
রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি একযোগে সম্প্রচার করবে।
১২১ দিন আগে
অবহেলিত চামড়া শিল্পের কৌশলগত পুনরুদ্ধারের আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের
দেশের চামড়া শিল্পে দীর্ঘ অবহেলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে 'হারানো অর্থনৈতিক সম্ভাবনা' হিসেবে বর্ণনা করে খাতটিকে পুনরুদ্ধারে জন্য দ্রুত ও কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার(৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের চামড়া শিল্পের ব্যাপারে আমরা অপরাধ করেছি, এটার সঠিক মূল্যয়ন করিনি। এই শিল্প দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি।’
এসময় চামড়া শিল্পের সংকট সমাধানে করণীয় সম্পর্কিত একটি পৃথক বৈঠক আয়োজনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর পাশাপাশি, আগামী দুই মাসের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় সম্পর্কে পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থে এই কাজগুলো করে যেতে হবে। যেসব নীতিমালা-আইন কোনো কাজে আসছে না, সেগুলো পরিবর্তন করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ বের করতে হবে। এগুলো মৌলিক বিষয়। নিজেদের উত্তরণের জন্যই এ কাজগুলো আমাদের করে যেতে হবে।’
সাভারে অবস্থিত টানারি ভিলেজে স্থাপিত ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) পূর্ণমাত্রায় চালু করা, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বাস্তবায়নাধীন এপিআই পার্ক পূর্ণমাত্রায় চালু করা ও ২০২২ সালে প্রণীত শিল্প নীতি হালনাগাদকরণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
১২৭ দিন আগে
সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ–২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (২০ জুলাই) সকালে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রথম পর্বের এই পদোন্নতি পর্ষদের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রথম পর্বের এই পর্ষদে সেনাবাহিনীর কর্নেল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবির যোগ্য কর্মকর্তারা পরবর্তী পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. ইউনূস প্রথমে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদ, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা—বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সেনানীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে আহত ও শহীদ সেনা সদস্যদের এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো ও আহত ছাত্রজনতার স্মরণেও শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় তিনি পদোন্নতির জন্য সেনা কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্ব গুণ, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য এবং সর্বোপরি নিযুক্তিগত উপযুক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করতে নির্বাচনী পর্ষদের সদস্যদের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও, সৎ, নীতিবান, পেশাদার ও নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন কর্মকর্তারাই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে যেসব কর্মকর্তাদের সামরিক জীবনে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরই পর্ষদে বিবেচনার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে সেনা সদস্যগণ বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বেশ কিছু সময় ধরে পালন করে যাচ্ছেন।
দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ত্যাগের জন্য তিনি সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও উপস্থিত থেকে পর্ষদের উদ্বোধন করায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সেনাপ্রধান।
অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শেষে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন এবং পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেন।
১৩৭ দিন আগে
গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক, সবার দৃষ্টি যমুনায়
দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসছেন। বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য়।
এর আগে একনেক বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠকে বসবেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সন্ধ্যা ৭টার দিকে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছেন দলের এক স্থায়ী কমিটির সদস্য। শুক্রবার রাতে তিনি জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও পৃথক বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির ওই নেতা জানান, রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনের লক্ষ্যে তারা এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দেশকে নতুন সংকটে ফেলবে বলে তাদের মত।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারা তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচনের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে অনুরোধ জানাবেন।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বেসরকারি টেলিভিশনে বলেন, ‘আমরা সোমবার থেকেই সময় চেয়ে আসছি, কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, কেবল কিছু বিতর্কিত উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছি। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি যদি রোডম্যাপ না দিয়ে পদত্যাগ করতে চান, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত—কিন্তু আমরা পদত্যাগ চাইনি।’
বৃহস্পতিবার বিএনপি হুশিয়ারি দিয়ে জানায়, নির্বাচনের রোডম্যাপ অবিলম্বে না এলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা পুনর্বিবেচনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নিরপেক্ষতা ও সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে সদ্য গঠিত একটি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টাকে সরাতে হবে।
এদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যে হতাশ হয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন।
১৯৪ দিন আগে
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির ভবন উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমকে এনজিও-ভিত্তিক কাঠামো থেকে বের করে আনতে একটি স্বতন্ত্র ‘মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যাতে এটি একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে—মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা—কারণ মাইক্রোক্রেডিটের সাফল্য এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’
শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমানে মাইক্রোক্রেডিটকে একটি এনজিও হিসেবে দেখা হয়, তবে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে পরিণত করতে হলে এনজিও কাঠামো থেকে ব্যাংক ব্যবস্থায় রূপান্তর প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই এটিকে একটি ব্যাংক হতে হবে এবং এর জন্য একটি আলাদা ব্যাংকিং আইন দরকার।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের সদস্যদের কাছ থেকেই আমানত গ্রহণ করতে পারে, যা পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের রূপ দিতে হবে।
মাইক্রোক্রেডিটের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ভবিষ্যতমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি নতুন কাঠামো গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
‘এটা এখন আলোচনার উপযুক্ত সময়,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যাংককে আমরা প্রকৃত ব্যাংক মনে করতাম, সেগুলো আজ জনগণের টাকা লুট করে ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট একটি স্বচ্ছ ভিত্তিতে এখনও টিকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি মানুষ ভুয়া ব্যাংক নিয়ে ব্যস্ত, অথচ প্রকৃত ব্যাংকের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়নি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজ এখানে এসে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে ভালো লাগছে।’
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থাকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। বিশ্বাস ও সৃজনশীলতার ওপর ভিত্তি করে একটি বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলে অধ্যাপক ইউনূস ঐতিহ্যগত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন।
আরও পড়ুন: মেঘনায় দূষণ চরমে, ফের মরে ভেসে উঠছে মাছ
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মন্সুর, এমআরএর নির্বাহী উপ-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এনজিও-ভিত্তিক মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনজিও-এমএফআই) কার্যক্রমকে একটি নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আনতে সরকার ২০০৬ সালের ১৩ জুলাই ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি অ্যাক্ট, ২০০৬’ (আইন নম্বর ৩২, ২০০৬) প্রণয়ন করে, যা ২৭ আগস্ট ২০০৬ থেকে কার্যকর হয়।
এই আইনের আওতায় সরকার মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) গঠন করে, যার উদ্দেশ্য হলো এনজিও-এমএফআইগুলোর মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
এই কর্তৃপক্ষ উক্ত আইন বাস্তবায়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং দেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতকে একটি পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
২০১ দিন আগে
শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টার প্রতি বাংলাদেশের অবিচল অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ থেকে আরও নারী শান্তিরক্ষী নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়ের ল্যাক্রোয়া সাক্ষাৎ করতে গেলে এ আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বেশি বাংলাদেশি নারী অংশগ্রহণ করুক—বিষয়টিকে আমি উৎসাহিত করি।’
আরও পড়ুন: প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সুফিউর
বাংলাদেশ অতিরিক্ত সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েনে প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। জাতিসংঘের পিসকিপিং ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেমের (পিসিআরএস) র্যাপিড ডিপ্লয়মেন্ট লেভেলে ৫টি ইউনিট প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তর ও মাঠপর্যায়ে শান্তিরক্ষী নেতৃত্বে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানান। এ বিষয়ে জাতিসংঘও বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে বলে জানান ল্যাক্রোয়া।
বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ ৩টি সেনা/পুলিশ প্রেরণকারী দেশের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে ১১টি সক্রিয় শান্তিরক্ষা মিশনের মধ্যে ১০টিতে বাংলাদেশের মোট ৫ হাজার ৬৭৭ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল শান্তিরক্ষায় আরো বেশি নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নীতিতে অটল রয়েছে বলেন উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের নির্দিষ্ট কিছু ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। শান্তিরক্ষার সব স্তরে নারীদের নিয়োগে জাতিসংঘ সহায়তা করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী যাচাইকরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশ কঠোরভাবে অনুসরণ করে এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতা জোরদারে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ আগ্রহী।
বৈঠকে জানানো হয়, জার্মানির বার্লিনে ১৩-১৪ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাত এবং সীমান্তে গুলিবিনিময়, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ও নাফ নদীর আশপাশে জীবন-জীবিকার বিঘ্ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
তিনি বলেন, চলমান অস্থিরতা আরো বাড়তে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানান।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশার সঞ্চার করেছে।
২২৮ দিন আগে
প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে অবশেষে দিনাজপুরে নারী ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে অবশেষে তৌহিদি জনতার বাধায় বাতিল হওয়া দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় প্রমীলা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঘটনার ছয় দিন পর সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে ম্যাচটি শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে।
ম্যাচে জয়পুরহাট বনাম ঢাকা প্রমীলা ফুটবল দল অংশগ্রহণ করে। এতে জয়পুরহাট প্রমীলা দলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ঢাকা প্রমীলা ফুটবল দল বিজয়ী হয়।
এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের ইটাই ভূমিহীন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও ইটাই মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
প্রধান অতিথি হিসেবে ম্যাচের উদ্বোধন করেন দিনাজপুর জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা হাশমাতুন নাহার শুভ্রা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিনা বেগম, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারুল নাহার ও ইটাই গ্রামের সমাজসেবক মাহফুজা বেগম। এছাড়া জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ।
এই ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি, উৎসাহ ও উদ্দীপনা যেমন ছিল, তেমনি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ম্যাচ শেষে কয়েকজন নারী খেলোয়াড় বলেন, আজকে মাঠের সুন্দর পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে। দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আমরা উৎসাহ পেয়েছি।
তারা বলেন, কিছুদিন আগেও খেলতে দেওয়া হয়নি। তৌহিদি জনতার ব্যানারে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। তারা আয়োজকদের সঙ্গে গণ্ডগোলও করেছিল। আমরা খেলাধুলা নিয়ে থাকতে চাই, দেশের জন্য কিছু করতে চাই।
ম্যাচ দেখতে আসা দর্শক লায়লা ইয়াসমিন ও আলেয়া বেগম বলেন, নারীরা খেলবে, এজন্য খেলা দেখতে এসেছি। নারীরা সব ক্ষেত্রেই কিছু একটা করতে পারে, তার উদাহরণ এই নারী ফুটবলাররা। তারা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশেও সুনাম বয়ে আনবে— এই প্রত্যাশা করি।
স্থানীয় আয়োজক কমিটির সদস্য মাসুদ রানা বলেন, স্থানীয় তৌহিদি জনতা গত ২৮ জানুয়ারি প্রমীলা ফুটবল ম্যাচ খেলতে বাধা দেওয়ায় এ নিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে, হাকিমপুরে কোনো প্রমীলা ফুটবল ম্যাচ আর হবে না। কিন্তু বাধা দেওয়া ও হামলার খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন। এরপর পুনরায় প্রমীলা ম্যাচ আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতাসহ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিনাজপুর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ও নারীদের এগিয়ে নিতে আমরা আবারও প্রমিলা ম্যাচ শুরু করতে পেরেছি। কোনো ধরনের বাধা বা সমস্যা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করেছেন।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে প্রমীলা ফুটবল আয়োজন বাধা, সংঘর্ষে আহত ২০
দিনাজপুর জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা হাশমাতুন নাহার শুভ্রা ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারুল নাহার বলেন, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ও যাবে। এটা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি, সমাজে কিছু মানুষ এখনও আছে যারা নারীদের পথচলাকে রুদ্ধ করতে চায়। কয়েকদিন আগে তৌহিদি জনতার ব্যানারে খেলার মাঠে যারা এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজন মিঞা বলেন, এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রমীলা ফুটবল ম্যাচ আয়োজন যাতে হয়, সে ব্যাপারে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। সুন্দরভাবে ম্যাচ শেষ হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সবকিছু ভালোভাবেই হয়েছে। পুলিশ এলাকায় টহলে ছিল।
গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) উপজেলার একই ইউনিয়নের বাওনা মাঠে প্রমীলা ফুটবল ম্যাচ আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয় আয়োজক কমিটি ও তৌহিদি জনতার মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এরপর ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায়।
এ ঘটনার খবর প্রকাশিত হলে সারা দেশে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিন্দা জানিয়ে পুনরায় ম্যাচ আয়োজনের সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিনাজপুর জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেন। তারপর সোমবার পুনরায় ম্যাচের আয়োজন করেন আয়োজকরা।
৩০৩ দিন আগে