সাওলা
চীনে ৯ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পর টাইফুন সাওলার আঘাত
হংকং এবং দক্ষিণ চীনের উপকূলীয় অন্যান্য অংশে ব্যবসা, পরিবহন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস স্থগিত করে প্রায় ৯ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পর টাইফুন সাওলা শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ চীনে আঘাত হেনেছে।
গুয়াংডং প্রদেশের আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, শক্তিশালী ঝড়টি রাত সাড়ে ৩টার দিকে হংকংয়ের দক্ষিণে ঝুহাই শহরের একটি দূরবর্তী জেলায় আঘাত হানে। এটি গুয়াংডং উপকূল বরাবর প্রায় ১৭ কিলোমিটার (১০ মাইল) বেগে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, যা সমুদ্রের দিকে যাওয়ার আগে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়।
শুক্রবার, প্রতিবেশী ফুজিয়ান প্রদেশের এক লাখ মানুষ ও গুয়াংডং-এর ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৮০ হাজারেরও বেশি মাছ ধরার জাহাজ বন্দরে ফিরে এসেছে।
কর্মজীবী মানুষরা বাড়িতেই অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন স্কুল বছরের শুরুর পরের সপ্তাহে স্থগিত করা হয়। হংকংয়ের শেয়ার বাজারে লেনদেন শুক্রবার স্থগিত করা হয়। এছাড়া মূল আঞ্চলিক ব্যবসা এবং ভ্রমণ কেন্দ্রে প্রায় ৪৬০টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার ফলে শত শত লোক বিমানবন্দরে আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিলারি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি জানিয়েছে, চীনের মূল ভূখণ্ডে রেল কর্তৃপক্ষ শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুয়াংডং প্রদেশে প্রবেশ বা ছেড়ে যাওয়া সমস্ত ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে।
হংকং অবজারভেটরি ১০ নম্বর হারিকেন সতর্কতা জারি করেছে, যা শহরের আবহাওয়া ব্যবস্থার অধীনে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ২০১৮ সালে হংকংয়ে সুপার টাইফুন মাংখুট আঘাত হানার পর এটি ছিল প্রথম ১০ নম্বর সতর্কতা।
অবজারভেটরি জানিয়েছে, সাওলা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার (১২১ মাইল) বেগে বাতাস বয়ে নিয়ে রাত ১১টার দিকে আর্থিক কেন্দ্রটির সবচেয়ে কাছে চলে আসে। শুক্রবার শহরের সিম সা সুই শপিং ডিস্ট্রিক্ট থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দক্ষিণে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ঝড়ের আইওয়াল, যা তার চোখকে ঘিরে ছিল, রাতারাতি শহর জুড়ে অগ্রসর হচ্ছিল, যা অঞ্চলটির জন্য ‘একটি উচ্চ হুমকি’ তৈরি করেছিল। শনিবার সকাল পর্যন্ত বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
অবজারভেটরি উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক বন্যার বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং বলেছে যে মাংখুট যখন শহরের বিল্ডিংগুলোকে এবং গাছ ভেঙে ফেলেছিল তখন পানির সর্বোচ্চ স্তর একই রকম হতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, রাজধানী বেইজিংয়ের দূরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলসহ বেশ কিছু লোক মারা যাওয়াসহ চীন বিভিন্ন অঞ্চলে তার সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্রিসে দাবানলে ১৮ জনের লাশ উদ্ধার
হংকংয়ে প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে প্রায় ৪০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে এবং ফেরি ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিচু এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করার আশায় তাদের দরজায় বালির বস্তা রেখেছিল।
অনেকগুলো গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে সাতজন আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করে। শনিবার সব স্কুলে ক্লাস স্থগিত রাখার কথা ছিল।
নিরাপত্তারক্ষী শার্লি এনজি সহ কিছু বাসিন্দাকে শুক্রবার কাজ করতে যেতে হয়েছিল। এনজি বলেন, মানুষ ঝড়ের মোকাবিলার জন্য খাবার প্রস্তুত করে মজুত করছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আশা করি যে টাইফুন যেন কোন ক্ষতির কারণ না হয়।’
নিকটবর্তী জুয়ার কেন্দ্র ম্যাকাও-এর আবহাওয়া কর্তৃপক্ষও বন্যার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শনিবার সকালে নিচু এলাকায় পানির স্তর দেড় মিটার (৫ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। হংকং, ম্যাকাও এবং ঝুহাই শহরের সংযোগকারী আন্তঃসীমান্ত সেতুটি দুপুরের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যাকাও নেতা হো ইয়াত সেং ক্যাসিনো কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
আবহাওয়া প্রশাসন জানিয়েছে, আরেকটি ঝড় হাইকুই ধীরে ধীরে পূর্ব চীনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সাওলার প্রভাবের সঙ্গে মিলিত হয়ে গুয়াংডং, ফুজিয়ান এবং ঝেজিয়াং প্রদেশের কিছু অংশে প্রবল বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এটি পূর্বাভাস দিয়েছে হাইকুই রবিবার তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানবে।
হংকং এবং ম্যাকাওতে বিমান পরিষেবার পাশাপাশি বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হারিকেন ইডালিয়ার আঘাতে তলিয়ে গেছে ফ্লোরিডার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
দুটি ঝড় সত্ত্বেও তাইওয়ানকে ভয় দেখাতে চীনের সামরিক বাহিনী শুক্রবার রাতে এবং শনিবার ভোরে আরও অভিযান পরিচালনা করে। তাইওয়ান একটি স্বশাসিত গণতান্ত্রিক দ্বীপ, যেটিকে বেইজিং প্রয়োজনে জোর করে চীনা সার্বভৌমত্বের অধীনে আনতে চায়। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের চারপাশে ছয়টি চীনা সামরিক বিমান ও তিনটি নৌযান শনাক্ত করা হয়েছে।
এটি বলেছে যে দ্বীপের সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিমান, নৌবাহিনীর জাহাজ এবং ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে সতর্ক করে দিয়েছে। তবে চীনা জাহাজ বা বিমানগুলো তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে বা তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
বুধবার সাওলা তাইওয়ানের ঠিক দক্ষিণে অতিক্রম করে চীনের মূল ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হয় এবং এর বাইরের ব্যান্ডগুলো ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে আঘাত হানে।
এছাড়া চলতি সপ্তাহের শুরুতে ফিলিপাইনেও টাইফুন আঘাত হানে। বন্যার কারণে দ্বীপপুঞ্জের উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
আরও পড়ুন: চীনে টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
১ বছর আগে
চীনে টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) টাইফুন সাওলা ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত জারি করেছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ভারতের গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনভিত্তিক গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, টাইফুন সাওলার প্রভাবে দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাই দেশটির চার-স্তরের ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টাইফুন সাওলার জন্য চীনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থা স্থগিত রয়েছে। এমনকি স্কুলগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত কী করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ চন্দ্রযান-৩: ভারতীয় মন্ত্রিসভা
টাইফুন সাওলা ঘণ্টায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ধীরে ধীরে গুয়াংডং প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীনের রাজ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খরা ত্রাণ সদর দপ্তর টাইফুন প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নিতে ফুজিয়ান ও গুয়াংডং-এ সহায়তা কর্মী পাঠিয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বলেছে, টাইফুন সাওলা শুক্রবার গুয়াংডং প্রদেশ এবং হংকং স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিজিয়নের (এইচকেএসএআর) উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে।
চীনের জাতীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় (স্থানীয় সময়) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সাওলার পাশাপাশি টাইফুন হাইকুই ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম থেকে উত্তরের দিকে ধেয়ে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে পূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগোচ্ছে, আর ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় (স্থানীয় সময়) উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আরেকটি টাইফুন কিরোগি ধেয়ে আসছে।
টাইফুন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে স্কুলের প্রথম দিন এবং উৎপাদন, ব্যবসা এবং পরিবহন স্থগিত করাসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন অঞ্চলের সমস্ত কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে শেনজেন বাওআন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকল দেশয়ি ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে শেনজেন টাইফুনের সতর্কতা স্তর বাড়িয়ে হলুদ স্তরে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়াংডং-এর খরা, প্রাদেশিক বন্যা, খরা ও টাইফুন নিয়ন্ত্রণ সদর দপ্তর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় তার জরুরি সতর্কতা বাড়িয়ে লেভেল ১-এ নিয়েছে।
টাইফুনের প্রভাব বিবেচনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) থেকে পরবর্তী বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১২১টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।
ন্যাশনাল মেরিন এনভায়রনমেন্টাল ফোরকাস্টিং সেন্টার সব জাহাজকে সতর্ক থাকতে এবং ঝুঁকি এড়িয়ে চলাচল করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ৯ সেনা নিহত
গোপনে আদানি গ্রুপের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা
১ বছর আগে