ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
স্মরণীয় একটি সফর: রাহুল আনন্দের বাড়িতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল ব্যান্ড ‘জলের গান’র সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও যন্ত্রশিল্পী রাহুল আনন্দের ধানমন্ডির বাসায় যান।
এসময় ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, ফরাসি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ডি ঢাকা (এএফডি) এর পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রোসজিন এবং দুই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট নৈশভোজের পর এ সফর করেন এবং দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে চলছে ভাস্কর রাশার ড্রিফটউড শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
রাহুল আনন্দের সঙ্গে তার স্ত্রী উর্মিলা শুক্লা, ছেলে টোটা এবং আরও তিনজন বাংলাদেশি শিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারার সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি।
রাহুলের প্রাণবন্ত ঘরোয়া পরিবেশনে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ এবং লালন সংগীতসহ বিভিন্ন গান শোনার পাশাপাশি রাহুলের বাজানো বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর শোনেন ম্যাক্রোঁ।
তারা একে অপরকে উপহারও দিয়েছেন।
রাহুল আনন্দ ফরাসি প্রেসিডেন্টকে একটি 'একতারা' উপহার দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটি তাকে (ম্যাক্রোঁ) এই স্মরণীয় সফরের কথা মনে করিয়ে দেবে।
অন্যদিকে, ম্যাক্রোঁ রাহুল আনন্দকে একটি কলম উপহার দিয়ে এটি তার কবিতা ও গান লেখার কাজে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
এই শিল্পী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার আইডিতে উপহারের ছবি শেয়ার করেছেন।
এই সফর উপলক্ষে রাহুল আনন্দ ও তার পরিবার তাদের ১৪০ বছরের পুরোনো ধানমন্ডির বাসভবনের প্রবেশদ্বার ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার বাড়িতে ঐতিহাসিক সফরের পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে রাহুল আনন্দ বলেন, এই সাক্ষাৎ ছিল দুজন শিল্পীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুন্দর সাংস্কৃতিক বিনিময়। কারণ ফরাসি প্রেসিডেন্টও একজন সংগীতশিল্পী ও একজন সংগীত অনুরাগী।
কীভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হলো সে সম্পর্কে এই শিল্পী গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছরের জুনে বিশ্ব সংগীত দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ডি ঢাকায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’- শিরোনামে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সংগীত পরিবেশন ও নাট্য মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেখানে তিনি বেলজিয়ান শিল্পী ম্যাক্স ভ্যান্ডারভর্স্টের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই পারফরম্যান্স সম্পর্কে জানার পরে আগ্রহী হয়েছেন।
রাহুল আনন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মনে করি এবং নিজেকে পাখি বলে ডাকি। আমি একজন যন্ত্রশিল্পী এবং আমি আমার নিজের যন্ত্র নিজে তৈরি করি। তাই গাছ আমার শৈল্পিক কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আমি সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। কীভাবে একতারা বাজাতে হয় আমি তাকে তা দেখিয়েছি, তিনি শিখেছেনও এবং আমি অবাক হয়েছি যে তিনি খুবই দ্রুত শিখতে পারেন।
ম্যাক্রোঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাহুল আনন্দ বলেন, ‘তার সমর্থনের মাধ্যমে এই অকল্পনীয় যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এভাবেই ফ্রান্সের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট আমার বাড়িতে এসেছিলেন এবং আমি তার সামনে আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এই সংক্ষিপ্ত দুদিনের সফর ঐতিহাসিক হয়ে গেছে। কারণ ১৯৯০ সালের পর প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
১ বছর আগে
ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের স্টুডিও পরিদর্শন করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকায় তার সংক্ষিপ্ত সফরে রবিবার রাতে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রাহুল আনন্দের বাসভবন ও স্টুডিও পরিদর্শন করবেন।
রবিবার ঢাকায় অবতরণের পর সংক্ষিপ্ত পরিদর্শনে রাত ১০টায় ধানমন্ডিতে রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে যাওয়ার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর।
সন্ধ্যায় ঢাকায় অবতরণের পর ফরাসি প্রেসিডেন্টের সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। একাডেমির শিল্পীরা নৈশভোজের আগে বা পরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য প্রদর্শন করবেন।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে রবিবার ঢাকায় আসছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
পরে ম্যাক্রোঁ রাহুল আনন্দের স্টুডিও পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে তিনি আরও ৩ শিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারার সঙ্গে আলাপ বলবেন।
শহুরে লোকসঙ্গীতের ব্যান্ড জলের গান-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, এই সফরটি একজন সঙ্গীত শিল্পীর অন্য সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার মতো। কারণ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ নিজেই প্যাশন থেকে একজন গিটারিস্ট এবং তিনি যখনই কোনো দেশ ভ্রমণ করেন তখন শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করতে ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিখতে ভালবাসেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে, তিনি যেহেতু প্রেসিডেন্ট, তাই নিরাপত্তা প্রোটোকলের বিষয় রয়েছে এবং তাকে স্বাগত জানাতে আমি আমার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি বাদ্যযন্ত্র বাজাই ও তৈরি করি এবং আমি শুনেছি যে প্রেসিডেন্ট এই সংক্ষিপ্ত সফরে সেগুলো দেখতে আগ্রহী। আমি আশা করছি এই স্বল্প সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব সাংস্কৃতিক বিনিময় হবে। আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার আশা করি এবং তিনি যদি চান তবে গানও গাইতে পছন্দ করব।’
ম্যাক্রোঁ বর্তমানে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে রয়েছেন। সোমবার ঢাকা ত্যাগের আগে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন: ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা আসছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
১ বছর আগে