পাওয়ার সেল
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পাওয়ার সেলের জিডিসহ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬২ পরিচালক অপসারণ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালকসহ রাজনৈতিক পদে নিযুক্ত ৬২ জন পরিচালককে অপসারণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, 'আজ আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে মোট ৩৫ জন পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি; যাদের রাজনৈতিক পছন্দের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি বিদ্যুৎ কোম্পানি এবং ১৮টি ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির।
তিনি উল্লেখ করেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেনকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে দুই দিন আগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা স্ব স্ব পদে বহাল রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন হাবিবুর রহমান। তাদের অপসারণের জন্য পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবিলম্বে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে এ নির্দেশনার ফলে মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন ১৩টি কোম্পানির বোর্ড থেকে ২৬ জন পরিচালককে অপসারণ করা হয়। শনিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, এই ২৬ পরিচালককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপসারণ করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের একান্ত সচিব রোকন-উল হাসান; তার ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম; সাবেক অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির লস্কর; সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদা আখতার হীরা; সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. কাজী আনোয়ারুল হক; ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জাজরীন নাহার; প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব-২ আল মামুন মোরশেদ; প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব-১ মনিরা বেগম; মহাপরিচালক-৩ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান; সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর একান্ত সচিব মুক্তাদির আজিজ; তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন; সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল; প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ইসমত মাহমুদা এবং যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি।
আরও পড়ুন: নিম্নমানের বিদ্যুৎ প্রিপেইড মিটারের বিষয়ে তদন্তে মন্ত্রণালয়কে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
এছাড়া আরও ১১ ব্যক্তি, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকের পদ থেকে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কোম্পানিগুলো হলো- সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (জেজিটিডিসিএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল), সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেডিসিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল), বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (জেওসিএল), পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (এমপিএল)।
আরও পড়ুন: ‘স্মার্ট গ্রিড’র দিকে যেতে শীর্ষ মার্কিন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে পাওয়ার সেল
২ মাস আগে
‘স্মার্ট গ্রিড’র দিকে যেতে শীর্ষ মার্কিন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে পাওয়ার সেল
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকার প্রচলিত গ্রিড সিস্টেমকে ধীরে ধীরে স্মার্ট গ্রিডে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে- প্রাথমিকভাবে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমটি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অধীনে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, প্রাথমিকভাবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অধীনে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপকে (বিসিজি) নিয়োগ দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কারিগরি শাখা পাওয়ার সেল জাতীয় গ্রিড ও সংযুক্ত ইউটিলিটির বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন এবং নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে জরিপ পরিচালনার জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
‘বাংলাদেশের পাওয়ার ইউটিলিটিগুলোর জন্য ও স্মার্ট গ্রিড রোডম্যাপের প্রযুক্তিগত সহায়তা’ শিরোনামে এরই মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিসিজি।
ইউএস ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির আর্থিক সহায়তায় এবং ফলোআপ হিসেবে বিজিসি এই জরিপ পরিচালনা করে। ইউএসটিডিএ পরবর্তী জরিপ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ১ জুন অনুদান হিসেবে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে পাওয়ার সেলের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে।
পাওয়ার সেলের কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির আওতায় বিসিজি সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি সব বিদ্যুৎ ইউটিলিটির প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চাহিদা মূল্যায়ন করে আরও বিস্তৃত ও বিশদ অধ্যয়ন করবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, "প্রকৃতপক্ষে, একটি মার্কিন পরামর্শক সংস্থা সামগ্রিক সিস্টেমকে একটি স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমে রূপান্তর করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে। সেখানে সবকিছু ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে এবং বিদ্যমান ম্যানুয়াল সিস্টেমের পরিবর্তে একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট উৎপন্ন হয়েছিল।
ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য ১৪ হাজার ৯৩৪ সার্কিট কিলোমিটার যেখানে ৬৩ হাজার ৮৯৫টি গ্রিড সাবস্টেশন রয়েছে এবং বিতরণ লাইনের দৈর্ঘ্য ৬ লাখ ৪৩ হাজার কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১
মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন এবং সিস্টেম লস ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
কর্মকর্তারা বলেন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে দ্রুত বর্ধনশীল সিস্টেমকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সরকার স্মার্ট গ্রিড প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তারা বলেন, পরামর্শক সংস্থা বিসিজি ডিসেম্বরে পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেবে। যার ভিত্তিতে পিজিসিবি ও ডিপিডিসি স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করবে।
এদিকে প্রাথমিক জরিপসহ জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বিজিসি সাইবার নিরাপত্তাকে একটি মূল ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানে পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রিড নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে পিছিয়ে রয়েছে।
স্মার্ট গ্রিড প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ৮টি মূল চ্যালেঞ্জ ও ২৮টি প্রযুক্তি সমাধান ও উদ্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের বিতরণ খাতে ১৫টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন, অসঙ্গতিপূর্ণ বিদ্যুতের গুণমান, ম্যানুয়াল অপারেশন ও সম্পদের সীমিত দৃশ্যমানতা, সরবরাহের পরিবর্তনশীলতা বৃদ্ধি, বিলিং দক্ষতা উন্নত এবং অ-প্রযুক্তিগত ক্ষতি হ্রাস, উন্নত গ্রাহক সন্তুষ্টি, বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং পয়েন্টের অভাব এবং অসম্পূর্ণ রাজস্ব আদায়ের মতো মূল চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিসিজি বিদ্যুৎ খাতের ট্রান্সমিশন বিভাগের জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করেছে।
সেগুলো হলো- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি লস, ক্রমবর্ধমান ট্রান্সমিশন লস, গ্রিড সম্পদের ম্যানুয়াল অপারেশন ও প্রতিক্রিয়াশীল ভিএআর (ভোল্ট-অ্যাম্পস প্রতিক্রিয়াশীল) ব্যবস্থাপনা।
সবশেষে এই সেক্টরের জেনারেশন সেগমেন্টের জন্য ২টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি প্রকরণ ও পাওয়ার বাধা।
আরও পড়ুন: তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের পুরানো কূপ থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু
১ বছর আগে