জাপানি বিশেষজ্ঞ
বৈদেশিক আর্থিক প্রস্তাবে দরকষাকষির জন্য বাংলাদেশের একাধিক বিকল্প প্রয়োজন: জাপানি বিশেষজ্ঞ
জাপানের এক বিশেষজ্ঞের মতে, যেকোনো প্রস্তাব, বিশেষ করে আর্থিক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বেশি বিকল্প থাকা দরকার। এটি বাংলাদেশকে আরও বেশি দরকষাকষির সুযোগ দেবে।
ইন্টারন্যাশনাল হাউজ অব জাপানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং কেইও ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কেন জিম্বো সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশকে আরও বেশি অবাধ সুযোগ-সুবিধা দিতে এ ধরনের প্রস্তাব তৈরিতে আমাদের অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হবে। আপনার যদি দুটি বা ততোধিক বিকল্প থাকে তবে এটি আরও ভালো। আসলে আমাদের উভয়েরই আরও বিকল্প থাকা দরকার।’
জাপানের ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) বিষয়ক নতুন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাপান কোনো শর্ত ছাড়াই ৫১টি আইটেম প্রস্তাব করছে এবং যেটি আকর্ষণীয় সেটি বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব: জাপানি রাষ্ট্রদূত
২০২০ সালে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনোর বিশেষ উপদেষ্টা এবং ২০১৮-২০ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই জাপানি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, চীনের প্রস্তাবগুলো নিয়মভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তারা তা বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, 'যদি চীন থেকে খুবই আকর্ষণীয় কোনো প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে প্রস্তাব আসে এবং জাপান বা অন্য কোনো দেশের বিকল্প কোনো প্রস্তাব না থাকে, তাহলে চীনের অর্থ নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো উপায় নাও থাকতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক কেন বলেন, এফওআইপিতে অবশ্যই সহযোগিতামূলক উপাদানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক উপাদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাপানি সংস্করণে, আপনি প্রচুর সহযোগী উপাদান খুঁজে পেতে পারেন, আমরা যে আইটেমগুলোর রূপরেখা করেছি সেগুলোর মধ্যে প্রায় অনেকগুলোই।’
জাপানি এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একটি সক্ষমতা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি। কোনো ধরনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে আমরা যৌথভাবে যেন তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হই। এটাই ভিত্তি।’
অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক কেন স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা বাংলাদেশের স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, বাংলাদেশে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মানসিকতা এবং জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
অধ্যাপক কেন বলেন, 'আমি মনে করি, বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল দেশ হিসেবে তুলে ধরতে হলে গণতন্ত্র একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, কারণ আপনাকে জনগণের কথা শুনতে হবে, সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে জনগণের নানা রকম স্বার্থের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
এফওআইপি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাপান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সাল থেকে মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি প্রচার করছে।
প্রফেসর কেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার প্রতি গভীর মনোযোগ দিচ্ছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের 'ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক' ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: জাপানি ব্যবসায়ীদের শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
অধ্যাপক কেন উল্লেখ করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি ২০১০ এর দশকে আবির্ভূত হয়েছিল কারণ ১৯৮০ এর দশক থেকে এশিয়ার আঞ্চলিক ধারণাগুলো প্রকাশ হয়েছিল।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির প্রথম আনুষ্ঠানিক সংস্করণটি জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভাষণ থেকে আসে। ২০১৬ সালের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে টিআইসিএডির ষষ্ঠ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সুতরাং এটি আজও গুরুত্বপূর্ণ জাপানি আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ধারণা হিসেবে রয়ে গেছে। মার্কিন-চীন মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করছে।’
তিনি বলেন, জাপান অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রশাসনিক সংস্কার, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার উপর অনেকগুলো আইটেম নিয়ে নতুন পরিকল্পনার প্রস্তাব করছে। এতে সহযোগিতার অনেকগুলো আইটেম রয়েছে যা জাপান কোনো বিশেষ শর্ত ছাড়াই সরবরাহ করতে পারে।
অধ্যাপক কেন বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো তহবিল, সংযোগ বিনিয়োগসহ অনেক আইটেম অনেক দেশের জন্য রয়েছে। তারা সত্যিই পছন্দ করে বেছে নিতে পারে।এখানে অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে্।’
তিনি বলেন, জাপানের উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে এটি অর্থনীতিককেন্দ্রিক বা নিরাপত্তা আওতায় যাওয়ার অনুরোধ। ‘আমি মনে করি প্রধানত অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ।’
১ বছর আগে