ভ্যাকসিন আবিষ্কার
যক্ষ্মা প্রতিরোধে নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আহ্বান জাতিসংঘের বৈঠকে
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা (টিবি) নির্মূল করার একটি রাজনৈতিক ঘোষণা অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রামক রোগ নির্মূলে একটি নতুন এবং কার্যকর ভ্যাকসিন খুঁজে বের করার উপর জোর দিয়েছেন বিশ্ব নেতা ও বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে (এইচএলএম) যক্ষ্মা প্রতিরোধের ঘোষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘোষণায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য উচ্চ প্রত্যাশার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও পরিচর্যা বিষয়ক পরিষেবাসহ ৯০ শতাংশ লোকের কাছে পৌঁছানো। এ ছাড়া যাদের এই রোগ রয়েছে তাদের জন্য সামাজিক সুবিধা প্যাকেজ প্রদান এবং অন্তত একটি নতুন ভ্যাকসিন বরাদ্দ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, যক্ষ্মা হলো কোভিড-১৯-এর পরে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক ঘাতক। কারণ, এটি প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালে ১৬ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। যক্ষ্মা’র চিকিৎসায় সহজলভ্য একমাত্র ভ্যাকসিনটি এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘চাঁদে একজন মানুষ পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্বকে আমাদের নখদর্পণে নিয়ে আসা পর্যন্ত আমরা যত অগ্রগতি করেছি- এর মধ্যে কেন আমরা যক্ষ্মা’র মতো প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছি? কেন নিরাময়যোগ্য এই রোগে প্রতিদিন ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়?
ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের অগ্রগতির জন্য স্টেকহোল্ডারদের তাদের হাতে থাকা সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করার আহ্বানও জানান তিনি।
যক্ষ্মার প্রধান চালিকাশক্তি - দারিদ্র্য, অপুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব, এইচআইভি সংক্রমণের ব্যাপকতা, ডায়াবেটিস, মানসিক স্বাস্থ্য ও ধূমপান মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ।
আরও পড়ুন: গত বছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত ২ লাখ ৯৩ হাজার: এনটিপি
তিনি উল্লেখ করেন, সশস্ত্র সংঘাত, অর্থনৈতিক উত্থান ও জলবায়ু বিপর্যয়গুলো দূষিত চক্রে সংক্রামক রোগের বিস্তারের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে। এর কারণে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা স্থায়ী হয়। রাষ্ট্রগুলোকে তাদের জাতীয় কর্মসূচিতে যক্ষ্মাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
আমিনা ৩৭ বছর আগে যক্ষ্মা রোগে তার ৫০ বছর বয়সী বাবাকে হারানোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা দরকার তা হলো- একটি ভ্যাকসিন। আসুন এখন যক্ষ্মা নির্মূল করি। এটা সম্ভব।’
ডব্লিউএইচও-র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্রেব্রেয়েসুসও একটি নতুন ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। একমাত্র অনুমোদিত ভ্যাকসিনটি এক শতাব্দীরও বেশি আগে তৈরি করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও নতুন ভ্যাকসিনের উন্নয়ন, লাইসেন্সিং ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের সুবিধার্থে একটি যক্ষ্মা ভ্যাকসিন অ্যাক্সিলারেশন কাউন্সিল গঠন করেছে।
ডব্লিউএইচও ডিজি বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম উচ্চ-স্তরের যক্ষ্মা সভায় প্রতিষ্ঠিত অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, প্রধানত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের চিকিৎসা করার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ কোটি কম হয়েছে এবং প্রতিষেধক চিকিৎসা দিয়ে ৩ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এ ছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা সংক্রমণ রয়েছে বলেও জানান টেড্রোস।
সামাজিক স্বাস্থ্য ও সিভিল সোসাইটি টাস্কফোর্সের নির্বাহী পরিচালক বার্ট্রান্ড ফুমিনঝোয়ার ক্যাম্পোয়ার যক্ষ্মা মূল্যায়নের জন্য মোটামুটিভাবে ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকা আঞ্চলিক অভিযোজনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের যক্ষ্মা শনাক্তে ভ্রাম্যমাণ এক্স-রে ভ্যান চালু
পরবর্তী আলোচনায় বক্তারা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে যক্ষ্মা মোকাবিলায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে কেউ কেউ এই লক্ষ্যে অগ্রগতি শেয়ার নিয়েছে, অন্যরা চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে এবং পদক্ষেপের জন্য মূল ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে।
সৌদি আরবসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিরা যক্ষ্মার প্রতিরোধে তাদের সাফল্যের ওপর আলোকপাত করেছেন। সৌদি প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে, তারা সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণে গুরুত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের দেশ ২০১৮ সালের তুলনায় যক্ষ্মার ঘটনা ২১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে, যা বৈশ্বিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে।
‘যক্ষ্মা একটি সামাজিক ব্যাধি’ উল্লেখ করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব মেডিক্যাল স্টুডেন্টস’র প্রতিনিধি বলেন, যক্ষ্মার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত নির্ধারকগুলোকে মোকাবিলা করতে সমস্ত খাতের অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: যক্ষ্মা এখনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসাবে দেশে রয়ে গেছে: আইসিডিডিআর,বি
১ বছর আগে