নিহত ৮০
সিরিয়ায় সামরিক বাহিনীর অনুষ্ঠানে ড্রোন হামলায় নিহত ৮০, আহত ২৪০
সিরিয়ার হোমস শহরে বৃহস্পতিবার সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ড্রোন হামলায় ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৪০ জন।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-গাবাস বলেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীর ওপর সাম্প্রতিকতম সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা এটি।
তিনি বলেন, এই হামলায় ছয় শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করে জানায়, তরুণ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ড্রোন হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় আইএসের হামলায় নিহত বেড়ে ৫৩
সামরিক বাহিনীর উপর এই হামলার জন্য 'পরিচিত আন্তর্জাতিক বাহিনী সমর্থিত' বিদ্রোহীদের অভিযুক্ত করে এতে আরও বলা হয়, 'তারা যেখানেই থাকুক না কেন, এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
সিরিয়ার ১৩ বছর ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে এই হামলার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, হোমসে ড্রোন হামলা এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাল্টা গোলাবর্ষণের খবরে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে দেশটিতে সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির সামরিক বাহিনী হতাহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ না করলেও সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, সরকার শুক্রবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।
এর আগে ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এবং সরকারপন্থী শাম এফএম রেডিও এই হামলার খবর প্রচার করেছে।
২০১১ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার সংকট শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের নৃশংস দমনপীড়নের পর তা দ্রুত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।
২০১৫ সালে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আসাদ সরকার সফলতা পেতে থাকে। এসময় সিরিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা প্রদান করে সমর্থন দিতে থাকে রাশিয়ার পাশাপাশি ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ।
এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ এবং দেশের অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধের ফলে ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ লাখেরও বেশি সিরিয়ার বাইরে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ আরব সরকার দামেস্ক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনস্থাপন করেছে,কিন্তু সিরিয়া এখনও বিভক্ত রয়েছে। হায়াত তাহরির আল-শাম গ্রুপের আল-কায়েদা-সম্পর্কিত জঙ্গি এবং তুর্কি সমর্থিত সুন্নি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে উত্তর-পশ্চিম একটি অঞ্চল রয়েছে। আর মার্কিন সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল।
হোমস শহরটি সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থিত,যেখানে সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনী নিয়মিত সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় আইএসের ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে ৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত
ড্রোন হামলার পর সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে গোলাবর্ষণ করে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিভিল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে, ইদলিব শহরের পূর্বে আল-নায়রাব ও সারমিন শহরে অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। সরকারি বাহিনী তাদের অনিয়ন্ত্রিত ওই অঞ্চলের অন্যান্য এলাকাতেও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হোমসের ওপর ড্রোন হামলার আগে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলের আরেকটি গ্রামে গোলাবর্ষণ করে। এতে অন্তত পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পশ্চিম আলেপ্পো প্রদেশের কাফর নুরান গ্রামের উপকণ্ঠে একটি পারিবারিক বাড়িতে গুলি চালিয়েছে সরকারি বাহিনী।
অবজারভেটরি জানিয়েছে, ওই হামলায় এক নারী ও তার চার সন্তান নিহত হয়েছেন। এতে ওই পরিবারের আরও নয়জন আহত হয়েছেন।
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বসবাসরত প্রায় ৪১ লাখ মানুষের বেশিরভাগই দারিদ্র্যপীড়িত। তারা বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার উপর নির্ভর করে। তাদের অনেকেই সিরীয়, যারা যুদ্ধের কারণে দেশের অন্যান্য অংশ থেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হাসাকেহ ও কামিশলি প্রদেশে তুর্কি ড্রোন হামলায় তেল উৎপাদন কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় কুর্দি কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য ও পাঁচ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এদিকে তিন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বৃহস্পতিবার তুরস্কের একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের মোকাবিলায় সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ সৈন্য রয়েছে।
তুরস্ক তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও আঙ্কারা বলেছে, সিরিয়ার প্রধান কুর্দি মিলিশিয়া তুরস্কের নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ, যারা ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। আঙ্কারা পিকেকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর প্রধান মিত্র হলো যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে পরাজিত করেছিল তারা।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার সিরিয়ায় নিহত
১ বছর আগে