রহস্য উদঘাটন
শিশু ইনায়া হত্যাকাণ্ড: বাবাই মেয়ের গলা কেটেছে বলে দাবি পুলিশের
সিলেটে দেড় মাসের শিশু ইনায়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, নিজের শিশুকন্যাকে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছেন তারই বাবা। পরে তিনিও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
বুধবার (২৫ জুন) বিকালে শাহপরান থানাধীন ইসলামপুর এলাকার কোরেশী ভিলা ১৮/এ বাসায় এ ঘটনা ঘটে বলে।
নিহত ইনায়া রহমান নামের শিশুটির বয়স মাত্র ৪৫ দিন। তার পিতার নাম আতিকুর রহমান (৪০)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের টংঘর গ্রামের বাসিন্দা। আতিকুর পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় ঘরে উপস্থিত ছিলেন ইনায়ার মা ঝুমা বেগম। তার দেওয়া তথ্য ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাওয়া অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ইনায়ার বাবা নিজ হাতেই তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: দাফনের আগে জানা গেল ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত
পুলিশ জানায়, আতিকুর ইনায়াকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং ধারালো বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, পরিবার নিয়ে ইসলামপুর এলাকার আনসার মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আতিকুর। প্রতিদিনের মতো বুধবার দুপুরেও খাবার খাওয়ার পর পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে হঠাৎ করে আসরের আজানের দিকে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান, আতিকুরের পাশে তার দেড় মাসের মেয়ে ইনায়ার গলাকাটা এবং তারও গলার খানিকটা কাটা রয়েছে।
নিহত শিশুটির মা ঝুমা বেগম জানান, দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার স্বামী শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর তার নিজের গলাও কাটছেন। তিনি চিৎকার করে উঠলে আশপাশের মানুষেরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে।
ঝুমার বোন নাজমা বেগম ও ভাই টিপু মিয়া বলেন, তাদের বোন-ভগ্নিপতি দীর্ঘদিন ধরে ওই বাসায় ভাড়া রয়েছেন। ঘটনার দিন তাদের বোন ফোনে চিৎকার করে বলেন, তার মেয়েকে জবাই করে স্বামীও নিজের গলা কাটছে। এরপর ঝুমা স্বামীকে থামিয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন বলে জানান তারা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ‘আতিকুরের গলার আঘাত বেশ বড়। তার শ্বাসনালি অনেকটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এখন পর্যবেক্ষণে আছেন।’
বৃহস্পতিবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি কিছুক্ষণের জন্য নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। তার ভাষ্যে, ‘মাথাব্যথার কারণে হঠাৎ মাথায় কী যেন হয়ে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি।’
উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত বটি, দা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
১৬১ দিন আগে
সাম্য হত্যা: আসামিদের ধরলেও রহস্য উদঘাটন হবে কবে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ২৭ মে বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এমনকি তাদের মধ্যে দুজন নাকি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সুস্পষ্ট করে এখনও জানাতে পারেনি ডিএমপি। আবার আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দির সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের মিল নেই বলে দাবি করেছে সাম্যর পরিবার। তাদের দাবি, সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রদলও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। সব মিলিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা
সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। এ সময় তারা মেহেদীর গ্রুপের রাব্বির হাতে একটি টিজার গান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) দেখতে পান। টিজার গানটি দেখে সেটি কী— তা জানতে চান সাম্য। এ নিয়ে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর ওই মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সে সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’
গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ারটি উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
পরিবারের সদস্যের বক্তব্য
তবে পুলিশের দাবির ওপর প্রশ্ন তুলেছেন সাম্যর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর। এক আসামির আদালতের দেওয়া জবানবন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই নিউজটায় বলে হয়েছে আসামি নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তো সাম্য হত্যা একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ আকস্মাৎ মারামারির হলে তো দুটো দল প্রস্তুত থাকে না।’
পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেটি বিস্তর তদন্ত করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে আসামির জবানবন্দির কপি চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। পুলিশ জানিয়েছে সেটি আদালত থেকে তুলতে হবে।’
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, সাম্যকে সুইচগিয়ার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। দুই গ্রুপের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হত্যার পর আসামিরা পালিয়ে কক্সবাজারে চলে যান। সোমবার (২৬ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে আসামি মো. রিপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে রিপন বলেন, সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে তিনি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরেকটিকে গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যান।’
তার ‘জবানবন্দি’ অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে দুটি গ্রুপ। ৫ থেকে ৭ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এর মধ্যে দুজন সাম্যকে আঘাত করেন, বাকিরা আশপাশে নজর রাখেন। হত্যাকারীরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
সহপাঠীদের বক্তব্য ও পরবর্তী কর্মসূচি
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা ভুক্তভোগী ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলামের বর্ণনাকে সমর্থন করেছেন। তার দাবি, রাব্বি নামের ছেলেটার হাতেই টিজার গান ছিল।
এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বায়েজিদ বলেছিলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করে।’
ঘটনার আকস্মিকতায় অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
শিশু নাকি তরুণের হাতে টিজার গান ছিল জানতে চাইলে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার বয়স খুব একটা বেশি না, ১৮ বা এর কাছাকাছি হবে। তার কাছ থেকেই গানটি কাড়তে গিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে সাম্যর সহপাঠী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ বা হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারো হাত আছে কিনা, সেটি বের করতে পারেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটি বের করার জন্য পুলিশকে চাপ প্রয়োগে তৎপর রয়েছি।’
ছাত্রদলের অবস্থান
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর রাব্বি’, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন— মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
গত বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাঝে তিনি সাম্য হত্যা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্যর পরিবারও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরাও সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলাম। সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
উদ্যানে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য দমেনি
সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরালো হলেও এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত রবিবার (২৫ মে) ছিনতাইয়ের শিকার হন বলে দাবি করেছেন সেখানে ঘুরতে যাওয়া বাপ্পি (১৯) ও তার বন্ধুরা।
তারা ইউএনবিকে জানান, চারটি মোটরসাইকেলে করে ৭-৮ জন তাদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোও লাগানো ছিল বলে দাবি তাদের।
এ ঘটনায় উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হালিমকে (৩০) প্রধান আসামি করে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলে হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়াতে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রমনা কালী মন্দিরের পেছনে রাস্তার ওপর আনসার সদস্যের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন বাইকে করে এসে আমাদের জোর করে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। তারা আমাদের পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরও করা হয়।
এরপর তাদের কাছে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি ক্যানন ৬ডি ক্যামেরা, ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি ক্যানন ৬ডি মার্ক-২ ক্যামেরা, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি ক্যামেরার লেন্স, মোট ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি স্মার্টফোন এবং নগদ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইয়ের পর তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা কাজ করছেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ না যেতেই আবারও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এর আগে, গত ১৭ মে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজনের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা। এরপর ২৩ মে তাদের ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— তামিম হাওলাদার (৩০), পলাশ সরদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮), সোহাগ, হৃদয় ও রবিন।
১৮৭ দিন আগে
মানিকগঞ্জে ঘরের মেঝে থেকে নারীর লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম শানবান্দা গ্রামে ঘরের মেঝে থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই নারীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হত্যার শিকার রোকসানা জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা নয়াবাড়ী এলাকার মৃত ছইজুদ্দীনের মেয়ে এবং গ্রেপ্তার আসামি মো. বাবুল হরিরামপুর উপজেলার দরিকান্দি এলাকার শেখ কাশেম আলীর ছেলে।
আরও পড়ুন: দামুড়হুদায় ১২ ঘণ্টায় হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রোকসানা হত্যার রহস্য উন্মোচন করেন পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান।
পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান বলেন, বাবুল ৩ বছর আগে রোকসানাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরেই সৌদি আরবে চলে যায় রোকসানা। বিদেশ থেকে নিয়মিতভাবে দেশে স্বামীকে টাকা পাঠান তিনি। সেই টাকা দিয়ে শানবান্দা এলাকায় জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন বাবুল।
এদিকে ৬ অক্টোবর ছুটিতে দেশে আসেন রোকসানা। সাভারের একটি ভাড়া বাসায় স্বামী বাবুলসহ বসবাস করতেন। ১৩ অক্টোবর শানবান্দা গ্রামের ওই বাড়িতে আসেন রোকসানা-বাবুল দম্পত্তি। রাতে সেখানে পারিবারিক বিষয় নিয়ে রোকসানার সঙ্গে বাবুলের কথা কাটাকাটি হয়।
এরপর একসময় রোকসানা ঘুমিয়ে গেলে ভোরে রোকসানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাবুল। এরপর পাশের ঘরের মেঝেতে লাশ পুঁতে রেখে পালিয়ে যান বাবুল।
ওই বাড়ি থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ এলে আশেপাশের লোকজন নির্মাণাধীন ওই বাড়িতে প্রবেশ করে এবং রুমের ভেতর থেকে গন্ধের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রুমের ভেতরের মাটি সরালে হাত বেরিয়ে আসে।
পরে বিষয়টি মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেন। নিহতের ভাই খবর পেয়ে জেলা হাসপাতালে এসে পরিচয় শনাক্ত করে।
এ ঘটনায় মামলার পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুলনা হাদিস পার্কের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাবুলকে।
এরপর রোকসানাকে হত্যার পুরো বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানান পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বাবুলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা চলমান।
আরও পড়ুন: চাঞ্চল্যকর মামলার তথ্য উদঘাটন করায় পিবিআই'র ভূয়সী প্রশংসা আইজিপির
চট্টগ্রামে ৮ টুকরো লাশের রহস্য উদঘাটন
৭৭৬ দিন আগে